আওয়ার ইসলাম: সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ আগামী ৮ আগস্ট থেকে দেশের সব কওমি মাদরাসা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হাইয়াতুল উলইয়ার জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দেশের দুই ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু’রকমের সিদ্ধান্ত আসায় দোটানায় ভুগছে দেশের ৪০ লাখ কওমি শিক্ষার্থী। সবার প্রশ্ন এখন একটাই, ৮ আগস্ট কি খুলছে কওমি মাদরাসা?
পাঠকের মতামত জানান জন্য আওয়ার ইসলাম পাঠক জরিপ করে। জরিপে
এমন ধোয়াসাচ্ছন্ন বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম দেশের দুই শীর্ষ আলেমের সাথে। আর আজ ছিলো আওয়ার ইসলাম এর পাঠক জরিপ। প্রশ্ন ছিলো, “হাইয়াতুল উলইয়ার ঘোষণা অনুযায়ী ৮ আগস্ট কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া যৌক্তিক মনে করেন কি?”
পাঠকের মতামত জানাতে আওয়ার ইসলাম জরিপ চালায়। জরিপে প্রশ্ন ছিলো, “হাইয়াতুল উলইয়ার ঘোষণা অনুযায়ী ৮ আগস্ট কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া যৌক্তিক মনে করেন কি?”
আওয়ার ইসলামের অফিসিয়াল পেইজে আজ (শুক্রবার) সকাল ৯ টায় দেয়া পাঠক জরিপে এ পর্যন্ত ১৫শ’ ফেসবুক ইউজার নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করেন।
এতে কওমি মাদরাসাগুলো খোলার দাবী তীব্রভাবে লক্ষ করা গেছে। ১৫শ’ কমেন্ট স্ক্রল করে দেখা গেছে প্রায় ৯৯ শতাংশ মন্তব্যকারীই মাদরাসা খোলার পক্ষে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিপরীত মেরুতে যে অবস্থান ছিলো না তা কিন্তু না। বরং স্বাস্থ্যবিধির কথা উল্লেখ করে অনেকে আবার মাদরাসা না খোলার পক্ষেও মন্তব্য করেছেন।
পক্ষে- বিপক্ষের এসব কমেন্ট থেকে নির্বাচিত কিছু কমেন্ট সংযোজন করা হলো।
Md Habibur Rahman ‘কোন কিছুতেই তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। তাছাড়া বাজার, মার্কেট, ব্যাংক, সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে যদি করোনা না ছড়ায়, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনা ছড়াবে এমন ভাবা কতটা যুক্তিসংগত (?) বুঝিনা, সর্বোপরি আমার মতামত হলো মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়া হক।’
Sarwar Muhsin ‘দেশের সবকিছু যেহেতু চলছে। সে হিসেবে মাদরাসা খোলাটাও এখন যৌক্তিক। তবে ছাত্ররা হেনস্থার শিকার হলে তার দায়ভার হাইয়াকেই নিতে হবে। ৮ আগস্ট মাদরাসায় উপস্থিত হওয়ার পর যদি বাধ্য হয়ে আবার বাড়িতে আসতে হয়, তাহলে সে গাড়ি ভাড়াটাও হাইয়ার বহন করতে হবে।’
Farhan Mahmud ‘যেহেতু সরকারি আদেশে বন্ধ হয়েছে খোলার ক্ষেত্রেও সরকারি অনুমোদন থাকতে হবে। অন্যথায় যেকোনো সমস্যার সম্পূর্ণ দায়ভার কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’
Al Amin ‘সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে খুলা উচিত। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। নাস্তিকেরা এটাকে এজেন্ডা বানিয়ে পুরো কওমি অঙ্গনকে সমালোচনার বস্তু বানিয়ে ফেলতে পারে।’
Sajidur Rahman ‘খোলা হউক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সরকারের সহযোগিতাকে সাথে রেখে। তা না হলে কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধবাদীরা সুযোগ নিতে পারে কওমির ক্ষতি সাধনে।’
Ebne Amin Feni ‘কওমি মাদরাসাগুলো আরো আগে খোলা উচিত ছিল। অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। তারপরও হাইয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৮ তারিখে সকল কওমি মাদরাসা খোলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী মেনে নেয়া হোক।’
নোমান খালভী ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার অনেক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে ।কারণ সরকার বাহাদুর জানে যদি দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা হয় দেশ অচল হয়ে যাবে। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের একথা খুব গভীর ভাবে চিন্তা করা উচিৎ! কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের সত্যিই আয়ের কোন উৎস নেই। আর ছাত্রদের আখলাক-চরিত্র নষ্ট হচ্ছে,যা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারকে এ কথা জানাইতে চাই যে, যেহেতু দেশের প্রধানমন্ত্রী আপনি তাই সকল নাগরিকের জীবিকার পথ তো সহজ করে দেওয়া আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আপনি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন তাদের একাউন্টে পৌঁছে দিচ্ছেন আর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকরা কি করবে সে দিকেআপনার কোনো ভূমিকা নেই। এটা আপনার মানবতা ? ইনকিলাব পত্রিকায় এসেছে ঈদের পরপরই কক্সবাজার বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলে দিবে। তাহলে মাদরাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি দোষ করলো? পরিশেষে বলতে চাই কওমী মাদরাসার কিতাব বিভাগ খোলা এই সময়ে খুবই জরুরি।’
alukder Raihan Humayun ‘গত মাসের ১২ তারিখ থেকে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়া হয়ছে। এ পর্যন্ত একজন ছাত্র বা শিক্ষক আক্রান্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাই কিতাব বিভাগও খুলে দিন। হেফাজত করার মালিক আল্লাহ।’
শাহ্ মুহাম্মাদুল্লাহ দয়াপুরী ‘করোনার প্রকোপ কবে কমবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই যতদূর সম্ভব পাক-পবিত্রতার দিকে খেয়াল করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হোক। এর মধ্যে সরকারের সহযোগিতা থাকতে হবে। অন্যথায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা আছে।’
Waliullah Boshir ‘কওমি মাদরাসা খোলে দেয়া ছাড়া আল্লাহর গজব (করোনা ভাইরাস) থেকে বাঁচার কোন বিকল্প নাই। তাই আমরা আশাবাদী যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪০ লাখ কওমি ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যত চিন্তা করে আগামী ৮ আগষ্ট সকল মাদরাসা খোলে দিবেন ইনশাআল্লাহ।’
brahim Khalil ‘হ্যাঁ, কওমি মাদরাসাগুলো অতিদ্রুত খুলে দেয়া উচিৎ। কেননা আমার দৃঢ় বিশ্বাস! কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দিলে ছাত্রদের নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত ও শেষ রাতের কান্নার বদৌলতে করোনা ভাইরাস দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
Abdul Mumin ‘ছোট্ট করে বলি! যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া হয়। এবং পরবর্তীকালে কোন ছত্রের করোনা হয়। এর দায় বা চিকিৎসা ভার কে নিবে? কেননা হাতেগনা কয়েকটি মাদরাসা ছাড়া ৮০% কওমি মাদরাসায় থাকার বা ক্লাস করার জন্যই জায়গা নেই, সেখানে কিভাবে আবার সামাজিক দূরত্ব রাখবে? সরকার নাকি হাইয়াতুল উলইয়া, তা আগে নিশ্চিত করে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
Mawlana Alauddin Kademul Kuran ‘কওমি মাদরাসা আর স্কুল কলেজের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সবাই আবাসিক থাকে। তারা বাইরে বের হয় কম। ভিতরে থাকে বেশি। তাই করোনাভাইরাস থেকে অনেকটাই তারা নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা বেশি ৷ তবে স্কুল-কলেজের বিষয়টা ভিন্ন, তারা ছুটির পর বিভিন্ন হোটেল কিংবা হলরুমে চলে যায়। যার কারণে সরকার মহোদয় যদি ইচ্ছা করেন তাহলে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে খুলতে বাঁধার কিছু দেখছি না।’
Hedayt Ullah Asrafe ‘আমার মতে, আগে আমাদের দেশের যে সকল প্রতিষ্ঠান হিফজখানা চালু করেছে। সেগুলোর একটা রিপোর্ট নেয়া হোক। সেসব রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কিতাবখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। তবে হিফজখানা রিপোর্ট আমি যতটুকু জানি, কোন মাদরাসায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাইনি।’
উল্লেখ্য, এর আগে আলেমদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ জুলাই থেকে সীমিত আকারে মাদরাসাগুলোর হিফজ বিভাগ খুলে দেওয়া হয়।
এমডব্লিউ/