মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ
আলেম ও গবেষক
কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
কোরবানির পশুর প্রকারভেদ: ইসলামী বিধান মতে সর্বমোট ছয় প্রকারের পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এসব পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হওয়ার দুটি শর্ত রয়েছে-
ক. গৃহপালিত হতে হবে। জংলী হলে কোরবানি হবে না । গৃহপালিত হওয়ার ক্ষেত্রে পশুর ‘মা’ কে দেখতে হবে। মা যদি জংলী হয়, ‘বাবা’ গৃহপালিত হলেও পশুটিকে জংলী ধরতে হবে। পক্ষান্তরে মা যদি গৃহপালিত হয় ‘বাবা’ জংলী হলেও পশুটিকে গৃহপালিত ধরা হবে।
খ. কোরবানির পশুগুলো নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সের হওয়া জরুরী। গরু এবং মহিষ কমপক্ষে দুই বৎসর, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছর হওয়া জরুরী। তবে ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে এটুকু ছাড় আছে যদি ৬/৭ মাসেই এক বছর বয়সের ভেড়া বা দুম্বার মতো মোটা তাজা হয়ে যায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা বৈধ হবে; নতুবা নয়।পক্ষান্তরে উট,গরু, মহিষ এবং বকরির ক্ষেত্রে বর্ণিত বয়সের একদিন কম হলেও তা দ্বারা কুরবানী বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, কোরবানির পশুর বয়স আরবি মাস ও বৎসর হিসেবে গণনা করা হবে। (শামী: ৯/৪৬৫-৬৬,হিন্দিয়া:৫/২৯৭)
জংলী পশুদিয়ে কোরবানি করার হুকুম
জংলী পশুদিয়ে কুরবানী হয় না। এ কারণে নীলগাই, বনগরু এবং গয়াল নামে আমাদের দেশে যে পশু পাওয়া যায় তার গোশত হালাল হলেও তা দিয়ে কুরবানী করা বৈধ নয়। বাদায়ুস সানায়াহ ৫/৬৯
হরিণ দিয়ে কোরবানি করা
হরিণের গোশত হালাল। তবে হরিণ জংলী হওয়ার কারণে তা দিয়ে কোরবানি জায়েয হবে না। এমনকি তা গৃহপালিত হয়ে গেলেও কোরবানি বৈধ নয়। (ফতোয়া আলমগিরী:৫/২৯৭)
পশুর দাঁত হওয়া বয়সের আলামত মাত্র
যে পশুর যতটুকু বয়স হলে কোরবানি বৈধ হয় ততটুকু বয়সে তার দু’টো দাঁত গজায়। তাই এ দাঁতগুলোকে বয়সজনিত দাঁত বলা হয়। এ দাঁতগুলো কোরবানির উপযুক্ত হওয়ার আলামত বা চিহ্ন। তাই প্রত্যেক পশুর পর্যাপ্ত বয়স হলেই কোরবানি বৈধ। দাঁত দেখা যাক বা না যাক।
তবে এক্ষেত্রে বয়স পূর্ণ হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ থাকতে হবে। যেহেতু দিন-তারিখ নির্ণয় করে বয়সের ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া কঠিন তাই আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত যে কোরবানিদাতার সুবিধার্থে এ বয়স পূর্ণ হওয়ার আলামত স্বরূপ দু’টি দাঁত গজিয়ে দেন।
অর্থাৎ, বয়স পূর্ণ হলেও দাঁত কখনো কখনো নাও গজাতে পারে কিন্তু দাঁত গজালে বয়স পূর্ণ না হয়ে পারে না। একারণে দু’টি দাঁত দেখা গেলে কোরবানির পশুর বয়স যে পূর্ণ হলো তার নিশ্চিত প্রমাণ মিলে। বিধায় দাঁত গজানো একটি জরুরী বিষয় সাব্যস্ত হয়েছে। মূলত দাঁতের কথা হাদিসে নেই বয়সের কথাই হাদিসে বলা আছে। (তাফসীরে বাইযাবী, ১/৬)
কোরবানির পশুর বয়স
গত ঈদের দিনে যে বকরীর জন্ম সেই বকরী এ বছর ঈদের দিনে কোরবানি করা যাবে না; বরং ২য় দিন কোরবানি করাই শ্রেয়। যাতে বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায়। তেমনিভাবে গরু, মহিষ এবং উটের বেলায়ও একই কথা।
এখানে শরীয়তের নীতিমালা হচ্ছে- কোরবানির ব্যাপারে পশুর সর্বনিম্ন যে বয়স হওয়া বাধ্যতামূলক তার এক ঘণ্টা কম হলেও কোরবানি সহীহ হবে না । তাই এ ব্যাপারে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। হাদীস শরীফে বর্ণিত , عن جابر رض قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم لا تذبحوا الا مسنة الا ان يعسر عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن . (ابوداود: رقم: ২৭৯৭)
লেখক: পরিচালক, শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টার, ঢাকা।
-এএ