শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
১৬ টি বছর জুলুম-ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল মাদরাসার ছাত্ররা: ড. শামছুল আলম  ‘সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন’ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ যেসব সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশিদের সুখবর দিলো ইতালি, পুনরায় ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনে কোনো সাফাই নয়: সারজিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে সিলেট মহানগর জমিয়তের শোক

অসুস্থতায় আল্লাহর ওপর ভরসা জরুরি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হুসাইন ।।

আরবি শব্দ 'তাওয়াক্কুল' এর প্রতিশব্দ ভরসা করা, নির্ভর করা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ হলো: আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করা।

তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ-এর মূলকথা- একজন মুমিন বান্দা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপরই নির্ভর করবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা নির্দ্বিধায় সন্তুষ্টি চিত্তে মেনে নিবে। এই বিশ্বাস রাখবে যে, সব বিষয়ের
ফলাফল তা-ই হবে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন এবং তাতেই রয়েছে আমাদের চূড়ান্ত কল্যাণ। যদিও বাহ্য দৃষ্টিতে আমরা অনুধাবন করতে না পারি।

আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করা ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক গাঢ় ও গভীর হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: 'আর ভরসা কর সেই জীবিত সত্বার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না।' (সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ৫৮)

তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ-এর প্রতি যত্নবান হতে হাদিস শরিফেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ লাভ করেছে, যে আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদকে নবী হিসেবে খুশি মনে মেনে নিয়েছে।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৬২৩)

তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-আপদে ঘাবড়ে যায় না। দুর্যোগ, রোগ-ব্যধি যেকোনো সঙ্কটেই সে পতিত হোক সে আল্লাহ তায়ালার ওপরই দৃঢ় আস্থা রাখে।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারিও আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি কঠিন পরিক্ষা। এই সঙ্কটেও তার নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এরূপ সময়ে আল্লাহর প্রতি হতাশ হয়ে গেলে দুটি ক্ষতি- এক, আখেরাতে শাস্তি। দুই, রোগ বৃদ্ধি। কারণ, নিরাশা রোগ-ব্যধি বৃদ্ধিকারক, পক্ষান্তরে ভরসা ও স্থিরতা রোগের নিয়ামক।

এরূপ রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হলে মুমিনের জন্য সামনের ১০ টি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।

এক, আমরা যদি কখনো মহামারি কিংবা যেকোনো রোগে আক্রান্ত হই, তাহলে মনে রাখবো- এটি আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত ফায়সালা। আর আল্লাহর ফায়সালা সর্বদা কল্যাণকর হয়। পবিত্র কোরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, 'আপনি আপনার পালনকর্তার ফায়সালার ওপর সবর করুন। কারণ, আপনি আমার দৃষ্টির সামনে আছেন এবং আপনি আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি গাত্রোত্থান করেন। ( সূরা তুর, আয়াত: ৪৮)

দুই, সবসময় আমাদের আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। আমরা জানি- রোগ-বালাই আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা স্বরূপ। আর আল্লাহই এসব রোগ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারেন। তাঁর বাণী: 'যখনই আমি অসুস্থ হই তিনি আমাকে সুস্থতা দান করেন। ( সূরাতুশ শুয়ারা, আয়াত: ৮০)

তিন, আমাদের সবসময় একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। এজন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবেনা।

চার, কল্যাণের আশা করতে হবে। কখনো এমন হতে পারে- এসব বালা-মুসিবতে আমাদের জন্য সমূহ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের কাছে হয়তো কোন বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয়, অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না'। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

পাঁচ, এটির ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, রোগ-ব্যধি আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি এই পরিক্ষার মাধ্যমে আমাদের অসংখ্য সাওয়াব ও প্রতিদান দিবেন, গোনাহ ও ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। তাঁর বাণী: আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। ( সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)

ছয়, অসুস্থতার সময়ে এমন কাজগুলি বেশি বেশি করা যা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম। কেননা, এই পরিস্থিতিতেও অলসতা অন্তরে শয়তানের বাসা বানাতে পারে।

সাত, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা মহান রবের প্রতি সর্বোচ্চ বিনয় প্রদর্শন করে অধিক পরিমাণে দোয়া করা। হজরত আইয়ুব (আ.) এসময়ে এই বলে দোয়া করতেন ' আমি ক্ষতির মধ্যে পতিত অথচ আপনি সর্বোচ্চ দয়াময়'।

আট, অসুস্থ হলে ইস্তিগফারের প্রতি আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল'। (সূরা নুহ, আয়াত: ১০) যে দোয়ার প্রতি যত্নবান হবে সমস্ত সংকীর্ণতায় আল্লাহ তার মুক্তির রাস্তা বের করে দিবেন।

নয়, নিরাশাকে দূরে রাখা। নিরাশা রোগ-ব্যধি বৃদ্ধি করে, আর আশা ও নির্ভরতা আরোগ্য-সহায়ক হয়। আমাদের আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। তিনিই আরোগ্য দান করতে পারেন।

দশ, কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, 'কঠিনের সঙ্গেই সহজ'। সুতরাং মুসিবত যতো কঠিনই হোক, তা কেটে যাবে।

একইসঙ্গে অসুস্থ হলে সুস্থতার জন্য আমরা যথাসম্ভব পার্থিব উপায়-উপকরণ গ্রহণ করব। এটিতে শরিয়তের কোন প্রতিবন্ধকতা নেই এবং তাওয়াক্কুল ও ভরসার বিপরীত কোন বিষয়ও নয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন

লেখক, শিক্ষক: মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ- ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ