সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বেফাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন যারা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: একটি প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মূল স্টেয়ারিং থাকে যার হাতে তিনি হলেন শিক্ষা সচিব বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। প্রতিষ্ঠানটি চাই মাদরাসা হোক বা স্কুল। সব ক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষা সচিবের প্রধান ও মূখ্য ভূমিকা থাকে।আর সাধারণত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সচিব যিনি হোন, তিনি অনেক চৌকান্না ও অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোন। আর সেটা যদি হয় অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মারকাজ বা মূলকেন্দ্র। তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সচিব বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেমন যোগ্যতাসম্পন্ন, চৌকান্না ও অভিজ্ঞতার অধিকারী হবেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই অতীতের ধারাবাহিতায় আজ আমরা জানবো, প্রতিষ্ঠাকালীন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড - বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বিষয়ে।

বাংলাদেশের সকল কওমী মাদরাসাকে এক প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ নিয়ে ১৯৭৮ সালে "বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ" বা "বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড" প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

সেই থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিরলসভাবে বেফাক তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বেফাকের গতিকে সচল রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা। বলা যায়, বছরে এই একটি পরীক্ষা নেয়া ছাড়া বেফাকের আর তেমন কোনো কাজ চোখে পড়ে না। তাই বছর শেষে পরীক্ষাটাই হলো বেফাকের একমাত্র চালিকাশক্তি।

এজন্য সারা বছরের সব চাপ সইতে হয় বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বা নাজিমে তা'লীমাতের। যারা বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হোন তারা অত্যান্ত ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার পরিচয় দিয়ে এ খেদমাত আঞ্জাম দিয়ে যান।

১. আল্লামা আশরাফ আলী রহ.  (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৭৯-১৯৮১ ও ১৯৮৮ ইং)

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বেফাকের প্রথম নাযিমে তা'লীমাত ছিলেন আল্লামা আশরাফ আলী রহ.। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মোট তিনবছর এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর আবার দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৮৮ সালে পুনরায় বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন।

আল্লামা আশরাফ আলী রহ. যখন বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তখন তার মেধা ও চতুর্মূখী কাজের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। সারাদেশে তাঁর কাজের চিত্র নজরে পড়েছে। বর্তমানের মতো তখন বেফাকের অধীনে এত মাদরাসা ছিলো না। বেফাককে টিকিয়ে রাখতে তাঁদের অনেক মেহনত করতে হয়েছে।

তিনি গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জামিয়া রাহমানিয়ার শায়খুল হাদিস, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস ছিলেন। এছাড়াও আরো বেশ কটি মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও প্রিন্সিপাল ছিলেন।

২. আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দা.বা. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৮২-১৯৮৫ ইং)

এরপর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বা তা'লীমাতের দায়িত্ব পালন করেছেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দা.বা.। তাঁর সময়েই বেফাক থেকে জন্ম নেয় অনেক মেধাবী মুখ। তিনি অত্যান্ত সুনামের সাথে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন।

বর্তমানেও তিনি দেশের শীর্ষ মুরুব্বি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ের সহজ সমাধান প্রদান করে যাচ্ছেন। তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ও জামিয়া সুবহানিয়া তুরাগসহ দেশের আরো বেশ কটি মাদরাসার শায়খুল হাদিস হিসেবে হাদিসের খেদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

৩. হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন রহ. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৮৬-১৯৮৯ ইং)

তার পর হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন রহ. ছিলেন বেফাকের তা'লীমাতের দায়িত্বে। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ জিম্মাদারী পালন করেছেন। তিনি গত ১৪ ডিসেম্বর'২০১৩ সালে শনিবার রাত ৮ টায় ইহজগত ত্যাগ করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়া মাদরাসায়, দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসায় ও সর্বশেষ ঢালকানগর মাদরাসায় হাদিসের দরস প্রদান করেছেন।

৪. মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৮৭ ইং)

বেফাকের ইতিহাসে মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. এর নাম লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। কারণ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় বেফাকের মহাসচিব পদ থেকে ইস্তফা দেন।

কেননা বেফাকের নীতিমালায় রয়েছে, বেফাকের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে রাজনীতিবিদগণ থাকতে পারবেন না। তিনিও ১৯৮৭ সালে মাত্র ১ বছরের জন্য বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫. মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব দা.বা. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৯০-১৯৯১ ইং)

মাওলানা কুতুবুদ্দীন রহ. এর পরে বেফাকের শিক্ষা সচিব হিসেবে নিয়োগ পান হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস দা.বা.। তিনি ১৯৯০ সাল ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মোট দুই বছর বেফাকের পরীক্ষা পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি বেফাকের মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

৬. মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল বরিশালী দা.বা. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ১৯৯২-২০১২ ইং)

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের পর বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব নেন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল বরিশালী । তিনিই বেফাকের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেফাক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর বেফাকের শিক্ষা সচিব ছিলেন। এ দীর্ঘ ২০ বছরে বেফাকের পরীক্ষায় কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

৭. মাওলানা সুলাইমান ইবনে আলী রহ. (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ২০১৩ ইং)

২০১৩ সালে এ পদে যোগ দেন মিরপুর জামিউল উলুমের শায়খুল হাদীস মাওলানা সুলাইমান ইবনে আলী রহ.। তিনি অপ্রসিদ্ধ আল্লামা আশরাফ আলী রহ. এর ছেলে ছিলেন। তিনি গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে ইন্তেকাল করেন।

৮. মাওলানা আবু ইউসুফ, (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক: ২০১৪-২০২০ ইং)

তার পর থেকে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ । তার কিছু অনৈতিক কাজের প্রমাণ পাওয়ায় গত ১৪ জুলাই ২০২০ তারিখে তাকে স্থায়ীভাবে বেফাক থেকে বহিস্কার করা হয়।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ