মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।
পানি আল্লাহতায়ালার অপার দান। অমূল্য তোহফা। পানির অপর নাম জীবন। পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিয়ামত বর্ষণের কথা আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ কোরআনে বলেছেন। যারা নিয়ামত পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তাদেরকে নিয়ামত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর যারা অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে তাদেরকে আজাবে গ্রেফতার করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি? তাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করিনি এবং তাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, আর তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম; অতঃপর তাদের পাপের দরুন তাদেরকে বিনাশ করেছি এবং তাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আনআম, আয়াত : ৬)
পানি যেহেতু মহা নিয়ামত এজন্য বৃষ্টি হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহতায়ালা বৃষ্টির সুসংবাদ প্রদান করে বাতাস প্রেরণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন।
যখন এটা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি এটা নির্জিব ভূখণ্ডের দিকে চালনা করি, পরে এটা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি; তৎপর এটার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এইভাবে আমি মৃতকে জীবিত করি যাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৫৭)
বৃষ্টি হলে জমিন সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে। ফল-ফসল ভালো হয়।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, অতঃপর ওতে আমি বারি বর্ষণ করলে এটা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।’ (সূরা হজ, আয়াত : ৫)
বৃষ্টির কারণে অনাবাদী জমিনও আবাদ হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন ও তার দ্বারা ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করেন এটার মৃত্যুর পর।’ (সূরা রূম, আয়াত : ২৪)
বৃষ্টি হলে সবাই অনেক আনন্দিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের নিকট ইচ্ছা এটা পৌঁছিয়ে দেন, তখন ওরা হয় হর্ষোৎফুল্ল।’ (সূরা রূম, আয়াত : ৪৮)
মানুষ যদি পানির নিয়ামতে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তাহলে এটা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দার ঐ আমলের কারণে আল্লাহ খুশি হন যে, বান্দা এক লোকমা খাবার খেলেও আলহামদুলিল্লাহ বলে। এক ঢোক পানি পান করলেও আলহামদুলিল্লাহ বলে।’ (সহিহ মুসলিম)
পানির অসংখ্য উপকার। বৃষ্টির পানি পবিত্র, মিষ্ট ও খুব উপকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ওতে স্থাপন করেছি সৃদৃঢ় উচ্চ পাহাড়-পর্বত এবং তোমাদেরকে দিয়েছি সুপেয় পানি।’ (সূরা মুরসালাত, আয়াত : ২৭)
বৃষ্টির পানি শরীর ও মনকে পবিত্র করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কর, তিনি তাঁর পক্ষ হতে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হতে তোমাদের উপর বারি বর্ষণ করেন এটা দ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করবার জন্য, তোমাদের মধ্য হতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করবার জন্য এবং তোমাদের পা স্থির রাখবার জন্য।’ (সূরা আনফাল, আয়াত : ১১)
পানিকে আল্লাহতায়ালা বরকতময় বানিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।’ (সূরা ক্বাফ, আয়াত : ৯)
পানির মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা সমস্ত ফল-ফসল সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি; তৎপর এটার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৫৭)
পানি মানুষের বেশি দরকার পড়ে। এজন্য পানি নিয়ামতটি অতি সহজে মিলে। মরুভূমি ও মাটি থেকে বের হয় পানি। সৃষ্টিজীব যদি আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা করে, তখন তাদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করে দেন তিনি। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদের এনে দেবে প্রবহমান পানি? (সূরা মূলক, আয়াত : ৩০)
পানি এমন নিয়ামত যে, জান্নাতে চোখ শিতল হবে পানি দেখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জান্নাতে আছে নির্মল পানির নহর।’ (সূরা মোহাম্মদ, আয়াত : ১৫)
জাহান্নামীরাও জাহান্নামে পানি চাইবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে কিছু দাও।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৪৮)
পানি আল্লাহতায়ালার নিদর্শন। তাঁর ওপর ঈমান আনা এই নিদর্শনের দাবি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবন্ত বস্তুকে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)
পানি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট নিদর্শন। এতে কারো মতবিরোধ নেই যে, পানি আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ ছাড়া কেউ পানির ¯্রষ্টা নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর, আকাশ হতে বর্ষণ করে কে ভূমিকে সঞ্জীবিত করেন এটার মৃত্যুর পর? ওরা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৩)
পানি আল্লাহর তরফ থেকে বড় দয়া অনুগ্রহ। যা সব সময় সব জায়গায় আমাদের সাথে থাকে। এজন্য আমাদেরকে এর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। পানির সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য করতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর এই সাহায্যের ওপর গর্ব অহংকারে লিপ্ত হওয়া যাবে না। পানি অপচয় থেকে বাঁচতে হবে। আখেরাত সুন্দর বানানোর জন্য ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় একে ব্যবহার করতে হবে।
লেখক: মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।