মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।
সুস্থ সবল জীবন লাভের জন্য সুষম খাবার যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন পরিমিত ঘুমানো। এটি আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। এর মাধ্যমে মানুষ সতেজতা লাভ করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সব কাজে ব্যাঘাত ঘটে। শরীরকে আরাম দেওয়ার উত্তম পদ্ধতি হলো ঘুম।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আবরণ, দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, নির্মাণ করেছি তোমাদের মাথার ওপর মজবুত সাত আসমান।’ (সূরা নাবা, আয়াত : ৯-১২)
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার ক্ষতি
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্লান্তি লাগে, মনোযোগ কমে যায়, বিষন্নতা ভর করে এবং উদ্বেগও বেড়ে যায়। ঘুম কম হলে চাকরিজীবি অফিসের কাজে গিয়েও ঝিমুতে থাকবে এতে করে শুধুমাত্র তার কাজ প্রভাবিত হবে এমন নয়। বরং চাকরি চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।
গাড়ির ড্রাইভারের ঘুম না হলে শুধুমাত্র তার নয় বরং সব যাত্রীর প্রাণ আশঙ্কায় থাকবে। বহু দুর্ঘটনায় তথ্য তালাশের পর দুর্ঘটনার মৌলিক কারণ পাওয়া গেছে ড্রাইবারের গাড়ি চালানোর সময় ঝিমানো। ছাত্রের ঘুম ভালো না হলে পরদিন ক্লাসে শিক্ষকের আলোচনা বুঝা এবং সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। শুধুমাত্র এগুলোই নয় বরং ঘুম না হওয়ার কারণে অনেকে পাগলও হয়ে যায়।
ঘুমের উত্তম সময়
ঘুমের উত্তম সময় হলো রাত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো ও তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা কাসাস, আয়াত : ৭৩) আয়াতটি দ্বারা বুঝা গেল, উপার্জনের জন্য হলো দিন আর আরাম করার জন্য হলো রাত। রাতে কারণ ছাড়া না জাগা আবার দিনের বেলায় বেকার না থাকা। অসুবিধা থাকলে ভিন্ন কথা।
ঘুমানোও ইবাদত
ইবাদতের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ঘুমালে সেই ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। মুয়ায বিন জাবাল (রা.) বলতেন, ‘আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জেগে সালাত আদায় করি, জেগে থেকে সালাত আদায়ের মাধ্যমে যেভাবে সওয়াবের আশা করি, ঠিক তেমনি ঘুমানোর মাধ্যমেও সওয়াবের আশা করি।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৩৯৯৮)
বেশি ঘুমের ক্ষতি
কম ঘুমালে যেমন ক্ষতি তেমনি অতিরিক্ত বেশি ঘুমালেও ক্ষতি। অতিরিক্ত ঘুমালে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হতাশা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং কর্ম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস প্রভৃতি দেখা দেয়।
বেশি ঘুমে অলসতা সৃষ্টি হয়। সর্দি-কাশি বেড়ে যায়। পাকস্থলি দূর্বল হয়ে পড়ে। মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হয়। দৃষ্টিশক্তি ও শরীরকে দূর্বল হয়ে যায়। এ সকল ক্ষতি যে কোনো সময় বেশি ঘুমালে। আর আসর ও ফজর এই দুই সময়ে ঘুমালে তো আরো বেশি ক্ষতি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে দিনের ঘুম রাতের ঘুমের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। (ফয়যুল কাদির ৬/৩৯০)
ঘুম মৃত্যুর বোন
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজির দরবারে জিজ্ঞাসা করল, জান্নাতিদের কি ঘুম হবে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘ঘুম মৃত্যুর বোন, আর জান্নাতিদের মৃত্যু হবে না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫৬৫৪)
হাদিসে ঘুমকে মৃত্যুর বোন বলা হয়েছে, কারণ, ঘুমের মধ্যে আমল বন্ধ থাকে। আর জান্নাতিদের মৃত্যু হবে না এর কারণ হলো জান্নাতিরা শুইবেও না।
যে সময়গুলোতে না ঘুমানো উচিত
আসরের পরে না ঘুমানো উচিত। কারণ এতে করে আকল জ্ঞান বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের পরে ঘুমায় আর তার আকল জ্ঞান চলে যায় তাহলে সে নিজেকেই তিরষ্কার করবে।’ (মুসনাদে আবি ইয়া‘লা, হাদিস : ৪৮৯৭)
দিনের শুরুতে, মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময়ে ঘুমানো মাকরূহ। (বাহারে শরিয়ত ৩/৪৩৬) আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ভারসাম্য পরিমিত জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম, বাগে জান্নাত চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।
-এটি