বেলায়েত হুসাইন ।।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য গতকাল শুক্রবার (১০ জুলাই) একটি ঐতিহাসিক স্বরণীয় দিন। দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে ক্লান্ত মুসলিম জাতি সবশেষ কবে এরকম একটি সুসংবাদ শুনেছে তা হুট করে বলা সম্ভব হবেনা। সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর ঝিমিয়ে পড়া সন্তানদের মধ্যে যে আজও সাহসী কিছু মানুষ রয়ে গেছেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগান।
আজ তাকে নিয়ে বিতর্কের সময় নয়; হাজার বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে শত প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে জাতি হিসেবে আমাদের যে পুরস্কার আজ তিনি দিয়েছেন- এজন্য আমরা তার প্রতি অগণিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জুম্মাবারের মতো বরকতপূর্ণ একটি দিনে তুরস্কের একটি আদালত আয়া সোফিয়াকে ঘিরে ঐতিহাসিক এক রায় প্রদান করেছেন। ১৯৩৪ সালে যে রায়ের মাধ্যমে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ- বিজিত এই প্রাচীন স্থাপনাটিকে মসজিদ থেকে মিউজিয়ামে রূপান্তর করার যে সিদ্ধান্ত তৎকালীন সেক্যুলার সরকার দিয়েছিল-তা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
অতঃপর এটিকে ইসলাম ধর্মের নিদর্শন স্বরূপ জাদুঘর থেকে ফের মসজিদে রূপান্তরের নির্বাহী আদেশ প্রদান করে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাক্ষর দেয়ার পরে দীর্ঘ প্রায় এক শতাব্দীর কাছাকাছি সময় পর গতকাল আয়া সোফিয়া মসজিদে নতুন করে আজানের ধ্বনি উচ্চকিত হয়েছে- আলহামদুলিল্লাহ!
আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগানের উপস্থিতিতে আয়া সোফিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ শুরু হবে।
আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তরের তুর্কি মুসলমানদের দীর্ঘ দিনের দাবিকে গ্রাহ্য করে আদালত এই রায় প্রদান করেছেন। এরদোগানের নেতৃত্বাধীন তুরস্কের একেপি সরকারকে এরই প্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক নেতা, ইসলামিক সংগঠন অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই রায়ের প্রতি অজস্র শ্রদ্ধা প্রকাশ করে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
তবে রায় ঘোষণার আগে নিউইয়র্ক, এথেন্স, তেলআবিব সহ মুসলমানদের জাতশত্রু অনেক দেশ এবং দেশের নেতারা এর বিরোধিতা করেছেন। তা সত্ত্বেও এরদোগান পিছু হঠেননি। বহির্বিশ্বের পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ এসব চাপ কৌশলে মোকাবেলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সমালচকরা যখন বেশি নাগ গলাতে শুরু করেন তখন তুর্কি মন্ত্রীরা এটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যায়িত করে প্রতিপক্ষকে এর অযথা সমালোচনা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান।
সবশেষ এরদোগান বিরোধী শক্তিকে এই বলে হুশিয়ার করেন যে, যারা আয়া সোফিয়া ইস্যুতে নাক গলাতে আসবে আমরা তাদের তুরস্কের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলাকারী মনে করবো।
গতকালের রায়ের মাধ্যমে সবকিছুর সমাপ্তি ঘটেনি, হয়তো আয়া সোফিয়াকে ঘিরে আরো কিছু ঘটতে পারে ভবিষ্যতে। তবে এই রায় দুর্বল মুসলমানদের জন্য আশার যে প্রদীপ জ্বালিয়েছে- সেটিও কম কিসের!
৩৬০ খৃষ্টাব্দে আয়া সোফিয়া নির্মাণের পরে একাধিক বার একেক জাতি এর ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৪৫৩ সালে এটিকে জয় করে মসজিদে রূপান্তর করেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। মুসলিম উম্মাহর জন্য তার এই অসামান্য অবদান আজ যেভাবে ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে, ২০২০ সালের ১০ জুলাই শুক্রবারও এমনিভাবে ইতিহাসের সোনালি পাতায় জ্বলজ্বল করবে, আর এখানে বিজেতার নাম হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোগান। আল্লাহ তাকে ইসলামের জন্য দীর্ঘ হায়াত দান করেন। আমিন
লেখক: কন্ট্রিবিউটর, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম ও শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ- ঢাকা।