কুরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। পবিত্র কুরআনের তিনটি স্থানে কুরবানির কথা উল্লেখ আছে। যার একটি পশু কুরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। ঈদ উল আজহার নির্দিষ্ট দিনের বাইরে খাওয়ার জন্যে পশু কুরবানি করা কে ইসলামে জবেহ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এ করোনার কঠিন সময়ে কুরবানি না করে টাকা দান করার একটি বিষয় ওঠে এসেছে। এ বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মোহাম্মদপুর মাদরাসার প্রধান মুফতি, মুফতি হিফজুর রহমান ও শাঈখ জাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের পরিচালক, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, দেশের শীর্ষ দুই আলেমের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক বেলায়েত হুসাইন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোরবানির টাকা দান করার সুযোগ নেই: মুফতি হিফজুর রহমান
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কুরবানি না দিয়ে তার জন্য নির্ধারিত টাকা গরীবদের দান করার কোন সুযোগ ইসলামি শরীয়তে নেই। এখনো দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-ছাগল জবাই হচ্ছে- এই পরিবেশে এরকম প্রশ্নই অবান্তর।
কিন্তু তিনি বলেন, তবে বহির্বিশ্বের কোথাও যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে, পশু জবেহ সরকারি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে- সেক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এরপরও কুরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন মুমিন ব্যক্তি ঈদুল আজহার দিনগুলোতে সম্ভব হলে গোপনে পশু জবাই করবে। কারণ, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ওয়াজিব আদায় না করলে গোনাহগার হতে পারে।
যত বড় দুর্ভিক্ষই আসুক, কুরবানি না করে তার টাকা দান করার কোন সুযোগ নেই: মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ
মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, যত বড় দুর্ভিক্ষ কিংবা মাহামারিই আসুক কোরবানি না করে ওই টাকা দান করার কোন সুযোগ নেই, আল্লাহ ও ইসলাম বিরোধীরাই এর বৈধতার দাবি করতে পারে। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাকে অবশ্যই নির্ধারিত দিনে শরীয়ত-নির্দিষ্ট পশু জবাইয়ের মাধ্যমে এই ইবাদত পালন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিকভাবে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ এখনের তূলনায় অনেক অনুন্নত ছিল- এরপরেও মদিনার দশ বছরে প্রতিবারই তিনি কোরবানি করেছেন। আর একটি ইবাদতের ওপর তার যে এই ধারাবাহিকতা- এরই প্রেক্ষিতে উম্মতে মুসলিমার ওপর কোরবানিকে মহান আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন।
সুতরাং করোনা কিংবা যেকোনো মহামারির অজুহাতে শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ এই বিধানে শৈথিল্য প্রদর্শন ইসলামের চাহিদা নয়। শরিয়তের সব ইবাদতই তাওকিফি এবং পূর্ব নির্ধারিত- এখানে আকল বা বুদ্ধি প্রয়োগ করে নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কারের অধিকার কারো নেই।
অর্থনৈতিক যেকোনো সঙ্কটে ওয়াজিব পরিমান কোরবানি করে অবশিষ্ট টাকা গরীবদের দান করার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য যতো বিসর্জন দেয়া হয় তিনি বান্দার ওপর ততো খুশি হন। কোরবানিও যত বেশি দেয়া হবে আল্লাহ আমাদের ওপর ততোই সন্তুষ্ট হবেন। আর বেশি পরিমাণে কোরবানি চলমান সঙ্কট থেকে মুক্তির একটি মাধ্যমও হতে পারে।
ওয়াজিব পরিমান কুরবানি করে অবশিষ্ট টাকা দান করার কোন উৎসাহ শরিয়ত দেয়নি। শরিয়তের মানশা বা চাহিদা হল, ওয়াজিদ কোরবানি আদায়ের পরে যতো পারো নফলও আদায় করো এবং গরীবদের তোমার অন্য সম্পদ থেকে দান করো।
কুরবানিকে সীমিতকরণ করে শুধু ওয়াজিব পর্যন্ত রেখে অতিরিক্ত অর্থ দান করার মধ্যে কোন লাভ নেই বলে মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ মনে করেন। তিনি বলেন, কুরবানির আসল উদ্দেশ্য ও রূহ হল আত্মত্যাগ- এটি দান করার মধ্যে পাওয়া যায়না। অতএব সবাই যেন আগের মতোই সীমিতকরণ না করে কোরবানি আদায় করে- সেই আহবান জানাই।
-এটি