কওমি মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় রমজান মাস থেকে। করোনা সংকটের কারণে এখনো আনুষ্ঠানিক ভর্তি কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি মাদরাসাগুলা। চলে এসেছে কুরানির ঈদ। ফলে সর্বত্র ক্রমেই তীব্র হচ্ছে দেশের কওমি মাদরাসা খোলার দাবি! দেশের ৪০ হাজার মাদরাসা-মকতব আজ চারমাস বন্ধ। প্রচুর শিক্ষার্থী ঝড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকট। প্রচুর হাফেজ-আধা হাফেজ চর্চার ধারাহিকতা না থাকায় ভুলে যাচ্ছে মুখস্ত করা পবিত্র কোরআন। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাপন করছেন মানেবেতর জীবন।
স্বাস্থ্যিবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস আদালত এমন কি শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেতে পারছে না মাদরাসাগুেলা। দাবির পক্ষের আছে সংশ্লিষ্টদের যুক্তির্তক! এ বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেছন আলেম সাংবাদিক আবিদ আনাম।
বাংলাদেশের শাইখুল হুফফাজ হাফেজ আব্দুল হক বলেন, আমাদের হিফজুল কুরআন শিক্ষাঙ্গন ৪ মাস ধরে বন্ধ। ইতোমধ্যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি সহসায় কাটিয়ে উঠা যাবে না। তাই আর দেরি নয়। যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত হিফজুল কুরআন বিভাগ চালু করা দরকার।
শিক্ষাবিদ আলেম মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী মনে করেন, সরকারের উচিত বিশেষ প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে মাদরাসায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয়া। যেভাবে মসজিদ উন্মুক্ত করে দিয়েছে, একই শর্তে সরকার চাইলে মাদরাসাগুলো খুলে দিতে পারে।
“তবে এর কোন দায়ভার সরকারের উপর বর্তাবে না। সরকার মাদরাসা খুলে দিবে। অভিবাবকরা সিদ্ধান্ত নিবে সন্তানদের মাদরাসায় পাঠাবেন কিনা। মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের কাজ হবে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যদি মাদরাসা খুলে দেয় তাহলে ছোট ছোট বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের প্রতি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ক ওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের যুগ্ম-মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, হিফজুল কোরআন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া এর শিক্ষা কার্যক্রম, পদ্ধতি এবং ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তা কেউ বুঝবে না। এ বিষয়টি একেবারে ভিন্ন। সুতরাং অবশ্যই আলাদা সিদ্ধান্ত হতে হবে।
“আমি তো মনে করি দুইদিন নয়, আগামীকাল থেকেই দেশের সকল হিফজুল কোরআন বিভাগ খুলে দেয়া দরকার।”
স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলােদশ কওমি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুস সামাদ।
কওমি মাদরাসা খোলার বিষয়ে সরকারকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে শুধুমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চলে না। এখানে দিন-রাত কোরআন তেলাওয়াত হয়। হাদিসের দরস হয়। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে এবং পরে সুন্নত ও নফল আমল হয়। ভোর রাত থেকে কোমলমতি শিশুরা সুমধুর কন্ঠে তেলাওয়াত করতে থাকে আল্লাহর কালাম।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ছাড়া আমাদের উত্তরণ সম্ভব নয়। আর আল্লাহর রহমত পেতে হলে তার ইবাদতের বিকল্প নেই। সুতরাং অনতিবিলম্বে দেশের মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
মাওলানা আবদুস সামাদ আরও বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত জীবনে সুশৃঙ্খল। তারা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি খুব মনযোগী। বিশেষভাবেন করোনা পরিস্থতিতির কারণে যেসব স্বাস্থবিধি মানা প্রয়োজন তা মানতে তারা প্রস্তুত। কেননা তাদের আছে সুস্থ বিবেক ও কুরআনী শিক্ষা। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে কওমি শিক্ষাধারাকে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসা খুলে দিন!
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী মাদরাসা সমূহ খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোরআন পড়ে, হাদিস পড়ে, তাহাজ্জুত পড়ে দোয়া করা হলে দেশে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হবে। কোরআন-হাদিসের বরকতে দেশ থেকে করোনাসহ সকল প্রকার মহামারী বিদায় নিবে ইনশাআল্লাহ । মুসলমানরা যেকোনো বিপদ থেকে মুক্তির জন্য কোরআন খতম ও দোয়া করে থাকেন। অতএব কোরআন হাদিসের শিক্ষা বন্ধ রেখে বিপদ থেকে মুক্তির আশা করা যায় না।
মাওলানা হামিদী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশের প্রায় ২২ হাজার কওমী মাদরাসার পঁচিশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী গত শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। ঈদুল ফিতরের পর কওমী মাদরাসাসমূহের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যায়নি । দীর্ঘদিন কওমী মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করা পবিত্র কোরআন ভুলতে শুরু করেছে। তাদের আবার নতুন করে মুখস্ত শুরু করতে হবে।
ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কাওমিয়া লিল বানাত বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মহিলা মাদরাসা পরিষদ) এর নেতৃবন্দ সরকারের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত কওমী মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে গোলাপবাগ মহিলা মাদরাসায় অনুষ্ঠিত কওমি মহিলা মাদরাসা পরিষদের এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানিয়েছেন।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া-লেখা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাড়া ভবনে পরিচালিত মাদরাসাগুলো ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বাড়ী ভাড়া দিতে না পারায় অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক দিক বিচেনায় গার্মেন্টসসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জীবন জীবিকার তাগিদে মাদরাসাসহ সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সময়ের যৌক্তিক দাবি।
-এএ