আওয়ার ইসলাম: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে পশু কোরবানি দেওয়া ধর্মীয় বিধান, কারও কারও জন্য ওয়াজিব।
কিন্তু অনেকেই বলছেন, পশুর হাটের মাধ্যমে করোনা ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হতে পারে, তাই হাট বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমি এর সঙ্গে একমত না। কারণ, কোরবানির সঙ্গে শুধু ধর্মীয় বিধানই জড়িত নয়, এর সঙ্গে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনীতিও জড়িত।
তিনি আরো বলেন, অনেক খামারি আছেন, যাঁরা এই ঈদ উপলক্ষে বছরব্যাপী পশু লালন-পালন করেছেন, গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন, যাঁরা একটা-দুটো গরু-ছাগল পালন করেন এই ঈদে বিক্রির জন্য। এতে যা আয় হয়, তাতে তাঁদের জীবন চলে বা অভাব কমে। আবার কোরবানির পশুর চামড়া দেশের চামড়াশিল্পের কাঁচামালের জোগানের সিংহভাগ পূরণ করে, এই শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়েও বহু শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জড়িত।
এমনকি পশুর হাটের আয়োজন, পশু বাড়িতে আনা, কোরবানি দেওয়া, কাটাকাটির করার সঙ্গেও বহু মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। এ ছাড়া দেশে এমন কিছু প্রান্তিক মানুষ আছেন, যাঁরা সারা বছর মাংস খেতে পান না, এই কোরবানির ঈদের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করেন, তাঁদের কথাও ভাবতে হবে।
তাই শুধু ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পশুর হাট বন্ধ করা যাবে না। তবে ঝুঁকি কমাতে ক্রেতা-বিক্রেতা, হাটের ইজারাদার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারকে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, প্রয়োজনে মানতে বাধ্য করতে হবে।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এবার যত্রতত্র হাট বসানো বন্ধ করতে হবে। বড় ও খোলা জায়গায় হাট বসাতে হবে এবং বিক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রেখে পশু নিয়ে বসতে হবে। যাতে ক্রেতাদের পক্ষে শারীরিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয়। অনেক সময় বিক্রেতারা তিন-চারজনকে সঙ্গে নিয়ে কোরবানির হাটে আসেন। এই প্রবণতা বাদ দিয়ে যত কম সম্ভব মানুষ নিয়ে হাটে আসতে হবে।
ক্রেতার ক্ষেত্রেও তা–ই, একা হাটে গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পশু কিনে বাড়ি ফিরতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই আবশ্যিকভাবে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মাথার ক্যাপ ও সম্ভব হলে গাউন পরতে হবে। অনেক ক্রেতা আছেন যাঁরা কয়েকটি হাট ঘুরে যাচাই-বাছাই করে পশু কেনেন, পশু নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন—এবারের ঈদে এই প্রবণতা পরিহার করতে হবে। যাঁরা একাধিক পশু কোরবানি দিতেন তাঁরা এবার একটা কোরবানি দিন; বাকিগুলোর টাকা শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরা নিরুপায় কর্মহীন এবং অতি দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন, এতে দরিদ্র মানুষগুলোর উপকার হবে।
পশুর হাটে যেন অসুস্থ পশু না আনা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে, কোনো পশু অসুস্থ মনে হলে ক্রেতারা তার কাছে যেন না যান। আর গ্লাভস পরা ছাড়া পশুর গায়ে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাটের ইজারাদার যাঁরা থাকবেন তাঁদের দায়িত্ব থাকবে হাটে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার বা সাবান-পানির ব্যবস্থা রাখা, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা হাত পরিষ্কার রাখতে পারেন। এ ছাড়া ইজারাদারেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিয়ে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বিষয়টি তদারকি করতে হবে।
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষকেই মনে রাখতে হবে সুরক্ষা নিজের কাছে, নিজেও বাঁচতে হবে, অন্যকেও বাঁচাতে হবে। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানলে ধর্মীয় বিধান ও জীবন দুটোই রক্ষা পাবে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে আসবে।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমরা আগে কখনো পড়িনি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সচেতন হতে হবে এবং নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, এবারের ঈদে যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই উদ্যাপন করুন। শহর ছেড়ে গ্রামে যাবেন না। আগের ঈদে দলে দলে মানুষ ঢাকা ছাড়ার কারণে গ্রামের অবস্থা খারাপ হয়েছে। এবারও যাওয়া-আসা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সূত্র: প্রথম আলো।
-এটি