করোনার এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মনমানসিকতায় যেমন বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তদ্রূপ তাদের লেখাপড়া এবং চালচলনেও সৃষ্টি হয়েছে দারুন হতাশাজনক অবস্থা। এই অবস্থায় অভিভাবকরাও তাদের সামালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের সকল কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও মাদরাসার আসাতিযায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে জরুরি কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর সুযোগ্য খলিফা, ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ.- এর শাইখুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হক।
তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও, দীনি শিক্ষা বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই।
তাই তিনি সকল ছাত্রদের জন্য একটি নিযামুল আওক্বাত তৈরি করে দিয়েছেন।
তিনি নূরানী এবং নাযেরা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের বাড়ির কাছে যদি নিজের মাদরাসার কোন উস্তায থাকেন তাহলে তার কাছে প্রতিদিন কিছু সময় কায়দা এবং কুরআনের মশক করবে। আর কোন উস্তায না থাকেন তাহলে পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম বা কোন আলেমের কাছ থেকে মশক করবে।
হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের পিতা-মাতা যোগ্য থাকলে অথবা উপরোক্ত নিয়মে কোন আলেম বা হাফেজ সাহেবকে নিয়মিত কিছু সবক শুনাবে। প্রতিদিন তিলাওয়াতের পাশাপাশি নামাজে একপাড়া করে তিলাওয়াত করবে এবং আশপাশে সাথী পাওয়া গেলে সাপ্তাহিক সবিনা পড়বে। মনে রাখবে অলসতা করলে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজ জামাতের কিতাবগুলো কিনে বা সংগ্রহ করে আশেপাশে কোন অভিজ্ঞ আলেম থাকলে সবগুলো কিতাব না হোক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কিতাব দৈনিক কিছু কিছু পড়তে থাকবে। সময়, বৎসর এবং জীবনের মূল্য অনুধাবন করতে হবে। তা না হলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
কাফিয়া থেকে উপরের জামাতের ছাত্রদের জন্যও একি নিয়ম তবে, তোমরা নিজ জামাতের শরাহ শুরহাতগুলো দেখে কিতাব হল করার চেষ্টা করবে অথবা পঠিত জামাতের কিতাবগুলোও যদি পড়তে থাকো তাহলেও অনেক ফায়দা হবে। সেই সাথে কোন আল্লাহ ওয়ালার সংশ্রবে যাতায়াত এবং দোয়া নিবে।
তিনি অভিভাবক এবং আসাতিযায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেন, অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া কখনই আশানুরূপ ফল হতে পারে না। তাই অভিভাবকরা উপরোক্ত বিষয় এবং আপনার সন্তানের জীবনের মূল্য অনুধাবন করে এই সমস্ত কাজগুলোকে সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইলো। আপনার সন্তান আমাদের কাছে দ্বীনি আমানত সুতরাং তাদের আমল আখলাক ও পড়াশুনার বিষয়ে যত্নবান থাকা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তালিবে ইলমের খোঁজখবর রাখা ও তাদেরকে সুপরামর্শ দেয়া এবং সেই সাথে আশেপাশের তালিবে ইলমের দায়িত্ব নেয়াও আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। আর দ্বীনি তালিম চালু রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা চালুর পূর্বে হযরত উলামায়ে কেরামই এই দায়িত্ব যথাযথ পালন করে দ্বীনি শিক্ষাকে যিন্দা রেখেছেন। তাই তাদের কুরবানির বরকতে আমরাও দ্বীনি ইলমের কিছু ভাগ পেয়েছি।
তিনি অন্যান্য উলামায়ে কেরামগণকে উদ্দেশ্যে বলেন,করোনার জন্য দেশের কওমী মাদরাসাগুলো বন্ধ রয়েছে, ফলে অনেকেই এখন বেকার বসে আছি। মনে রাখবেন উলাময়ে কেরাম কখনো বেকার হতে পারে না।
একজন আলেম একটি মাদরাসা, তাই আপনার এই বেকার সময়কে নিয়ামত মনে করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আপনার পার্শ্ববর্তী মসজিদে যারা কুরআন শিখতে আগ্রহী তাদের কুরআন এবং শরিয়তের প্রাথমিক মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিন। আসুন আমরা দ্বীনের ব্যাপারে সচেতন হই কারণ দীনি শিক্ষা বন্ধ হওয়ার ক্ষতি অপরিসীম, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন, আমীন।
অনুলিখন: আল আমিন বাপ্পি, সাবেক শিক্ষার্থী জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ.
-এটি