আওয়ার ইসলাম: বৈশ্বিক মহামারির রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব আজ নিথর। নিস্তব্দ। জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। স্বাস্থাবিজ্ঞানীরা পর্যন্ত পেরেশান করোনার রূপ নিয়ে। চীনের উহানে শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে। এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।
৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর এখনও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আজ ২৯ জুন পর্যন্ত ১৭৮৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নভেল করোনা। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন।
অত্যন্ত দুঃখজনক সংবাদ হলো এখনো পর্যন্ত এর কোনো কিট বা সঠিক ওষধ আবিষ্কার হয়নি। অনেক সতর্কতা অবলম্বনকারীদেরকেও ছাড়ছে না অনেক ক্ষেত্রেই এ ধ্বংসাত্মক জীবনবিনাসী করোনা। এ মুহূর্তে এসে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষ সহজাতভাবেই বিশ্বাস করে নিয়েছে যে, এ রোগ আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কৃত পাপাচারের শাস্তি।
তবে রবের দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনাই একমাত্র অপ্রতিরোধ্য সম্বল। তিনি যখন চাইবেন তখনই এ রোগ থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে। তাই তাঁর ইবাদত-বন্দেগিগুলো যথাযথভাবে করতে হবে। ফিরে আসতে হবে তাঁরই কাছে। আর এর জন্য জানা লাগবে ইবাদতের বিধি-বিধান। করোনা উদ্ভাবন হওয়ার পর সৃষ্ট বিধানগুলো। এমনই একটি গুরুত্বপূর্র্ণ বিধান নিয়ে আজ আমি আপনাদের সম্মুখে আলোচনা করব।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে নিরাপত্তার জন্য ডাক্তারদের পরতে হচ্ছে পিপিই। এখন প্রশ্ন হলো, পিপিই পরিহিত অবস্থায় নামাজ পড়তে চাইলে কিংবা কোরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়তে পারবে কিনা? কারণ, পিপি পরলে সারা শরীর ঢাকা থাকে। যা খোলা অনেক ক্ষেত্রে একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো, পানি থাকলে পিপিই পরিধান করা অবস্থায়ও ডাক্তারদের জন্য নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত করতে চাইলে পিপিই পরা থাকলে তা খুলে অজু করতে হবে। তায়াম্মুম করার কোনো সুযোগ এক্ষেত্রে নেই। অজুর মাধ্যমে যেসব অঙ্গ ধৌত করতে হয়, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে সেসব অঙ্গই বারবার ধৌত ও পরিষ্কার করার কথা ডাক্তারগণও বলছেন। তাই পিপিই পরিধানে থাকার অজুহাতে অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুমের কোনো সুযোগ নেই।
তায়াম্মুম তো করতে হয়, যখন পানি না থাকে, বা পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা মৃত্যুর পথযাত্রী হবার শঙ্কা থাকে।
তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রগুলোতে অনেকভাবেই তায়াম্মুম করা যায়। হাসপাতালের দেয়ালে ধুলো জমে থাকলে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে। বা বাহির থেকে মাটি সংগ্রহ করে তা দিয়ে তায়াম্মুম করতে হবে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তায়াম্মুম তখনি করতে পারবে, যখন পানির ব্যবস্থা না থাকে, বা পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা মৃত্যুর পথযাত্রী হবার শঙ্কা থাকে। এছাড়া অন্যান্য অবস্থায় তায়াম্মুম করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না। তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রসমূহ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন মহান আল্লাহ-‘যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। অর্থাৎ স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৬)। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তাঁর বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে জানা ও মানার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-এটি