মুফতি যাকারিয়া মাসউদ।।
প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তায়ালার, যিনি এই ধরাকে করেছেন সৃজন। সেই সাথে দান করেছেন কালের আবর্তন। কি অপরুপ ডেকোরেশন। আঁধার দিয়ে রাত্রীকে সজ্জিত করেন, আবার আলো দিয়ে দিন কে করেন সুশোভিত। আবার এই ধারাবাহিক সময় গননার জন্য শিক্ষা দিলেন মাস, বছরের হিসাব।
বছরের মাসগুলোকে পৃথক রহমত দ্বারা বেষ্টিত করলেন। যাতে একের পরে আরেকটা রহমতের মধ্যেই তাঁর বান্দারা বেষ্টিত থাকে। এসব কিছুই আবার একাংশ অধিকহারে উপভোগ্য আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশে। কারন, আমাদের ছোট্ট এই দেশে দুই মাস অন্তর অন্তর প্রকাশ পায় প্রকৃতির নতুন রুপ। যা মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত।
বর্তমানে আমাদের দেশে চলছে ২য় ঋতু বর্ষা। যা একদিকে বাংলাদেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য বিশেষ কষ্টকর সময়। রাস্তায় কাঁদা বাড়িতে কাঁদা, বাহিরে বের হলেই বিরক্তিকর অবস্থা। শহরের মানুষের জন্যে ও ভোগান্তির শেষ নেই। বাচ্চা কে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিজের অফিসে যাওয়া সবখানেই কাক ভেজা ভিজতে হয়।
তারপরও এ ঋতুতে রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত। এ ঋতুতে আমরা দেখতে পাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য। ডালি ডালি মেঘে ভরা আঁকাশ, কখনও রোদ আবার কখনও বৃষ্টি।
এই বৃষ্টির মাধ্যমে জমিন ফিরে পায় সতেজতা। গ্রীষ্মের রৌদ্রে যখন পুরা জমিন ফেঁটে চৌচির হয়ে যায়। হাহাকার করে একফোঁটা পানির জন্য তখনই মাটির বুকফাটা আর্তনাদ কে শান্তনা দিতে অবতরন করে বর্ষাকাল।
এ ব্যপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেছেন। অতঃপর তা দিয়ে জমিন কে তার মৃত্যুর পর সজীব করেছেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে সেই ক্বওমের জন্য যারা শুনে। সুরা নাহল: ৬৫।
নদী মাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ এখানে বর্ষাকালে নদী, নালা, খাল, বিল ও পুকুর গুলো ফিরে পায় যৌবন। নদীর মাঝে চলতে থাকে নানা প্রকৃতির নৌযান। কোনটা ইন্জিন চালিত বৃহতাকারের আবার কোন টা ছোট আকারেে। আবার কখনও দেখা মিলে দৃষ্টি নন্দিত পাল খাঁটিয়ে চলতে থাকে নানা রকমের নৌকা। এসব এ বর্ষাকালের অপরুপ সৌন্দর্যের নিদর্শন।
এই বর্ষায় প্রকৃতি সজ্জিত হয় নানা ফুলে ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জাম্বুরা সহ এমন অনেক ফল রয়েছে, যা বর্ষাকালের রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের দান করেছেন।
শুধু তাই নয়, আমাদের অপরুপ সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। যা এই বর্ষাকালের অপার কৃপা। বসন্ত যদিও ঋতু বর্ষাকালকেও নিয়েও কবিতার জগতে কবীদের আনাগোনা কম নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন পাকে বৃষ্টির চমৎকার খবর দিয়েছেন, এটিকে তিনি জ্ঞান পিপাসুদের জন্য নিদর্শন হিসেবে উল্যেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে তিনি ভয় ও ভরসা স্বরুপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষন করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিন কে মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে ক্বওমের জন্য যারা অনুধাবন করে। (সুরা রুম: ২৪)
বিশ্বনবী সঃ বৃষ্টি কে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবাগত বলে বর্ননা করেছেন। অর্থাৎ তিনি বলেন বৃষ্টি যখন আসমান থেকে আগমন করে তখন সে আল্লাহর নিকট থেকে আসে।
তাই বৃষ্টির স্পর্শ নেওয়া নেওয়া মানে আল্লাহর রহমতের স্পর্শ নেওয়া। সে ব্যপারে বিশ্বনবী সঃ নিজের আমল দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুল সাঃ এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হলো। তখন বিশ্বনবী সঃ তাঁর কাপড় কিছুটা খুলে দিলেন। ফলে এতে বৃষ্টির পানি পৌছল।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসুল! সাঃ এরুপ কেন করলেন? তিনি বললেন, কেননা এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবাগত। মুসলিম শরীফ হাদিস নং ১৯৬৮। এছাড়াও বিশ্বনবী সঃ বৃষ্টির সময় পড়ার জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
তাহলো, আল্লাহুমা ছায়্যিবান নাফিয়া। অর্থ: হে আল্লাহ! এমন বৃষ্টি দান করুন যাতে ঢল, ধস বা আযাবের মত কোন অমঙ্গল নিহিত নেই। বুখারি হাদিস নং : ১০৩২।
আবু দাউদ শরীফের একটি বর্ননায় এসেছে, দুই সময় এমন রয়েছে যখন দোয়া করলে তা খুব কমই ফেরৎ দেওয়া হয়। ১। বৃষ্টির সময় যখন কোন বান্দা দোয়া করে। ২। আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তি সময়। আবু দাউদ: ২৫৪০। সতরাং বর্ষাকালকে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের জন্য রহমত স্বরুপ দান করেছেন। আমাদের তার যথাযথ ক্বদর তৌফিক দান করু। আমিন।
লেখক: কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স। নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর।
-এটি