বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী

ইলম শিক্ষা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফ্তী মুহিব্বুল্লাহ্ হাবিবী।।

মুহতারাম হযেরীন! আমাদের দেশের শিক্ষা কার্যক্রম অনুযায়ী আমারা যারা সন্তানের বাবা হয়েছি তাদের উপর এই সময়ে একটি কর্তব্য আরোপিত হচ্ছে। সেটা হলো সন্তানের পড়া শোনার ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশে যেহেতু দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে, ধর্মীয় শিক্ষা এবং জাগতিক শিক্ষা। সুতরাং বাবা হিসেবে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করব এবং আমাদের কর্তব্য কী? এই বিষয়কে সামনে রেখে আমি পবিত্র কুরআনের সূরায়ে মুজাদালার ১১ নং আয়াত তিলাওয়াত করেছি। এবং রাসূল সা. এর অসংখ্য হাদীস থেকে একটি হাদীস পাঠ করেছি। এই আয়াত ও হাদীসকে সামনে রেখে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব। وما توفیقی إلا باللہ

মুহতারাম হযেরীন!
মানুষ দুনিয়াতে সম্মানিত এবং মর্যাদাবান হতে চায়। সম্মান এবং মর্যাদা আসে দু’ কারণে। এক হলো সম্পদ এবং টাকা-পয়সার কারণে। যার কাছে সম্পদ আছে টাকা-পয়সা আছে তার সম্মানও আছে। মানুষ তাকে সম্মান করে, সে হয় সমাজে সম্মানীত ব্যক্তি। দুই নাম্বার হলোÑ শিক্ষার কারণে, যার কাছে শিক্ষা আছে মানুষ তাকেও সম্মান করে।

তবে টাকা পয়সার কারণে যে সম্মান সেটা বেশি দিন থাকে না, টাকা-পয়সা যতদিন আছে ততদিন, টাকা-পয়সা শেষ সম্মানও শেষ। টাকা-পয়সা যে রকম একদিন মানুষের হাত ছাড়া হয়ে যায় তেমনি এই সম্মানও একদিন মানুষের হাত ছাড়া হয়ে যায়। টাকা-পয়সা এটা কারো জন্য স্থায়ী নয়। এজন্য কবি বলেছেন- নদীর এ কূল ভাঙ্গে ও কূল ঘড়ে এই তো নদীর খেলা।

সকাল বেলার ধণীরে তুই ফকীর সন্ধা বেলা। আজকে ফুলের মালা কালকে আবার জুতার মালা, এটাই হলো দুনিয়ার খেলা। সুতরাং টাকা-পয়সার কারণে যে সম্মান আসে এটা কখনও স্থায়ী নয়। অপর দিকে ইলম এবং বিদ্যার কারণে যে সম্মান আসে সেটা কখনও শেষ হবার নয়। “ইলম হলো অমূল্য রতন” তাই তো হযরত আলী রা. গর্বকরে বলতেন।

رَضِینا قسمة الجبار فینا ٭ لنا علم وللأعداء مال
فإن المال یفنیٰ عن قریب ٭ وإن العلم یبقیٰ لا یزال

অর্থ আমরা আল্লাহ্ তাআলার বন্টনে সন্তুষ্ট হয়েছি, তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন ইলমে ওহী আর আমাদের শত্রæ রুম পারস্যকে দিয়েছেন ধন সম্পদ” فإن المال یفنیٰ عن قریب ٭ وإن العلم یبقیٰ لا یزال
“নিশ্চয় এই ধন সম্পদ একদিন ধংস হয়ে যাবে। কিন্তু ইলম এটা সব সময় অমর হয়ে থাকবে। এটা কখনও ধ্বংস হবেন না।
দেখুন! জাতীয় কবি ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন, কিন্তু এখনো তিনি আমাদের অন্তরে অমর হয়ে আছেন। সমস্ত যুবকরা তাঁর নাম জানে, তাঁর কবিতা পড়ে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জনাব সিরাজুল ইসলাম সাহেব, বংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ধণী ছিলেন। কিশোরগঞ্জ জিলায় তাঁর বাড়ী। সেখানে তার বাবার নামে কল-কারখানা আছে, মেডিক্যাল কলেজ আছে, ক্যাড্যাট কলেজ আছে, আফতাব উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ, আফতাব উদ্দিন ক্যাডেট কলেজ।

এক সময়ের অনেক নামী-দামী ব্যক্তিত্ব তিনি। কিন্তু এখন আর বাংলার মানুষ তাঁকে ছিনে না, তার নাম জানে না। কারণ, এই সম্মান ছিলো টাকা-পয়সার কারণে, যার ফলে সে দুনিয়া থেকে চলে গেছে সাথে সাথে তার আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে গুণীজনরা চলে গেছেন কিন্তু গুণীজনদের আলোচনা রয়ে গেছে। খাজা মুইনুদ্দীন চিশতী চলে গেছেন, কিন্তু এখনো তাঁর হাজারো ভক্ত রয়ে গেছেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ. চলে গেছেন কিন্তু তাঁর হাজারো ভক্ত রয়ে গেছেন। তাঁরা সম্পদশালী ছিলেন না। তবে ইলমের সাগর ছিলেন।

মুহতারাম হযেরীন! ধন সম্পদ এটাও আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত। ইলম এটাও আল্লাহ্ তাআলার নিয়ামত। তবে ধনসম্পদের চেয়েও ইলম হলো অনেক উত্তম নেয়ামত। কারণ ধনসম্পদ দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালা ফেরআউনকে, নমরুদকে আর কারুনকে আর ইলম দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালা সম্মানিত নবী রাসূলগনকে। এ ছাড়াও সম্পদের কিছু খারাপ প্রভাব আছে -

ইলম মানুষকে দয়াবান বানায় কিন্তু সম্পদ মানুষকে জালেম বানায়।
ইলম মানুষকে দানশীল বানায় কিন্তু সম্পদ মানুষকে কৃপন বানায়।
ইলম মানুষকে সততা শিখায় কিন্তু সম্পদ মানুষকে ধোকাবাজী শিখায়।
ইলম মানুষকে ভদ্রতা শিখায় কিন্তু সম্পদ মানুষকে অভদ্রতা শিখায়।
ইলম মানুষকে জান্নাতী বানায় কিন্তু সম্পদ মানুষকে জাহান্নামী বানায়।

তাই তো জ্ঞানীরা সম্পদের চেয়ে ইলমকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তারাই বুঝেছেন ইলমের কী মূল্য। আফসোস হলোÑ আমাদের সমাজের প্রতি। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেদের কলিজার টুকরা সন্তানকে ইলম অর্জন থেকে বি ত করে সম্পদ উপার্জনের পিছনে লাগিয়ে দেন। যার ফলে সন্তানের সোনালী ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। এরা সন্তানের অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব হলোÑ তার সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং সঠিক জ্ঞান অর্জনে তাকে সাহায্য করা।

বাংলাতে একটি বিজ্ঞবচন আছে-“শিক্ষা জাতির মেরু দন্ড” এটা একে বারেই সত্য কথা কারণ যে জাতির মধ্যে শিক্ষা নেই, সে জাতি হলো মেরুদন্ডহীন। সে জাতি কোনো দিন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। শিক্ষা এমন এক সম্পদ যার কোনো তুলনা নেই।

“শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” তবে সেটা কোন শিক্ষা?
মুহতারাম হাযেরীন!

এখন আমাদেরকে জানতে হবে “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” তবে সেটা কোন শিক্ষা? এবং প্রকৃত শিক্ষার পরিচয় কী? পকৃত শিক্ষা তো হলো ঐ শিক্ষা, যে শিক্ষা মানুষকে পকৃত মানুষ বনায়, যে শিক্ষা মানুষকে আখেরাতের পরিচয় শিখায়, যে শিক্ষা মানুষকে তার ¯্রষ্টার পরিচয় দেয়, যে শিক্ষা মানুষকে নীতিবান বানায়।

আর যে শিক্ষা মানুষকে অমানুষ বানায়, যে শিক্ষা মানুষকে কৌশলে নাস্তিক বানায়, যে শিক্ষা মানুষকে তার আখেরাত থেকে বিমূখ করে দেয়, ¯্রষ্টা থেকে বিমূখ করে দেয়। যে শিক্ষা মানুষকে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূলের দুশমন বানায়। সে শিক্ষা কোনো দিন সু-শিক্ষা হতে পারে না।
সত্যিকারের শিক্ষা তো হলো ঐ শিক্ষা, যেই শিক্ষার উস্তাদ হলেন - স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আর ছাত্র হলেন- রাহমাতুল্লিল আলামীন। যেই শিক্ষার পরশেই বরবর যুগের মানুষগুলোকে সোনার মানুষ বানিয়েছেন সফীউল মুজনেবীন।

“জ্ঞান অর্জন করা ফরজ” তবে সেটা কোন জ্ঞান? মুহতারাম হাজেরীন! জাগতিক শিক্ষা ও দুনিয়াবী শিক্ষা এটাকে তো শরীয়তের ভাষায় জ্ঞানও বলা হয় না, বরং শরীয়তের ভাষায় এটাকে বলা হয় পান্ডিত্ব। দুনিয়াতে চলার জন্য কিছু পান্ডিত্ব অর্জন করা এবং চালাকী শিখা। এছাড়া আর কিছু নই। সুতরাং বড় ডাক্তার হওয়া আর বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মানে হলো সে দুনিয়া কামাই করার জন্য কিছু পান্ডিত্ব অর্জন করেছে, কিছু চালাকি শিখেছে।

তবে তার এই চালাকি আর পান্ডিত্ব দুনিয়াতেই শেষ আখেরাতে এই চালাকি আর পান্ডিত্ব কোনো কাজে আসবে না। আপনি যত বড় ডিগ্রিই অর্জন করুন না কেন তা জমিনের উপরেই শেষ, জমিনের নিচে আর যাবে না। জামিনের নিচে যাবে শুধু আপনার প্রকৃত শিক্ষা এবং প্রকৃত জ্ঞান। আখেরাতের শিক্ষা এবং আখেরাতের জ্ঞান। তাই আপনার সন্তানকে শিক্ষিত বানালে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত বানান, তা হলে আপনার সন্তানের সোনালী ভবিষ্যত উজ্জল হবে।

মুহতারাম হাযেরীন!
এক সময় আমরা মনে করতাম যারা অশিক্ষিত যাদের কোনো শিক্ষা নেই, তারাই একমাত্র সন্ত্রাশী করে, সন্ত্রাশী করাটা তাদের পেশা। কিন্তু না এখন আমাদের ধারনা পালটে গেছে, দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা দেখি আমাদের সমাজের শিক্ষিত ছেলেরাই সন্ত্রাশী করে, শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্র উচু করে গোলা- গোলী করে, প্রকাশ্যে তারা মানুষ ক্ষুন করে। তাদের বেড রুম গুলো এখন দেশি অস্ত্র আর বিদেশী অস্ত্রে গুদামঘর। তারা বই খাতা ছেড়ে দিয়ে এখন অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে। যার ফলে আমাদের দেশের পতিটি শিক্ষাঙ্গন যেন এখন শিক্ষিত সন্ত্রাসের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে সরকারী অফিস-আদালত গুলোও যেন দুর্নীতির প্রাণ কেন্দ্র। তারা প্রতিযোগিতা মূলক দুর্নীতিতে নেমেছে, কে কার চেয়ে বেশী দুর্নীতি করতে পারে। আর দুদক যেন চোখে কালো চশমা পরে বসে আছে, যদি সরকারী দলের লোক হয় তা হলে সে হয়ে যায় বৈধ, আর যদি বিরোধী দলের লোক হয় তা হলে সে হয়ে যায় অবৈধ। এই হলো আমাদের দেশের জাগতিক শিক্ষার ফলাফল।

কলেজ ইউনিভার্সিটির সেভেনটি পাইভ % ছেলে এখন মাদক আসক্ত। কেউ আছে সন্ত্রাশীর সাথে জড়িত আর কেউ আছে মাদক নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষিত ছেলের মাদকের টাকার জন্য কত বাবা-মাকে জীবন দিতে হয়েছে এবং এই মাদকের টাকার যোগান দিতে গিয়ে কত গরীব দুঃখী বাবার পকেট শূন্য হয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। আর এই মাদকের টাকার জন্যই প্রতি নিয়ত কত আপনজন আপনজনকে ক্ষুন করছে। ক্ষুন হওয়া মানুষের রক্তে দৈনিক পত্রিকার পাতাগুলো লাল হচ্ছে।

আফসোস হলো- তারপরেও আমরা এ সমস্ত মাদক সেবী শিক্ষিত ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি। আমি কসম খেয়ে বলতে পারব! এবং চ্যালে দিয়ে বলতে পারব। কাওমী মাদ্রাসায় আপনি এক % ছেলেও পাবেন না, যারা মাদক আসক্ত বা বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাশীর সাথে জড়িত। এই পর্যন্ত যারাই আমাদের দেশে সন্ত্রাশী করেছে, বোমাবাজী করেছে, তারা সবাই হলো দেশের নামী-দামী কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এটা আমাদের কারো অজানা নয়। আমরা সকলেই তা-জানি। পত্র-পত্রিকা আমরা সকলেই পড়ি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সত্য এবং বাস্তব বিষয়টি উপলব্ধি করার তাওফীক দান করুক। আমীন।

মুহতারাম হাযেরীন!
কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে, যে শিক্ষার গুরুত্ব ও ফযিলতের কথা বলা হয়েছে সে শিক্ষা হলোÑ এক মাত্র দ্বীনী ইলমের শিক্ষা। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানুষকে যে, সর্বশ্রেষ্ট মাখলুক বানিয়েছেন এবং সবার চেয়ে সম্মানিত বানিয়েছেন, তাও এই ইলমের কারণেই বানিয়েছেন। এই ইলমের কারণেই তিনি মানুষকে ফেরেশতার উপর মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করার পর সর্বপ্রথম তাঁকে ইলম শিক্ষা দিয়েছেন। সূরায়ে বাকারার ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا

অর্থাৎ আমি আদমকে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছি। তারপর তিনি ফেরেশতাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاءِ
তোমরা আমাকে এ সকল বস্তুর নাম বল। ফেরেশতারা বলল- سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
“হে প্রভু এ সমস্ত বস্তুর ইলম তো আমাদের জানা নেই। আমরা তো অতটুকুই জানি যত টুকু আপনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম আ.-কে ডেকে সব কিছুর নাম জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত আদম আ. একে একে সব কিছুর নাম বলে দিলেন, যার কারণে আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে مسجو د الملا ئکہ বানিয়ে দিয়েছেন।

অর্থাৎ ফেরেশতাদেরকে দিয়ে তাকে সিজদা করিয়েছেন, সমস্ত ফেরেশতারা সে দিন আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশে হযরত আদম আ.-কে সিজদা করেছিলেন এবং তাঁর ইলমের সম্মান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ। প্রথম সিজদা দাতা ফেরেশতা হযরত ই¯্রাফিল আ. এর পুরস্কার।

মুহতরাম হাযেরীন!
আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ পেয়ে সকল ফেরেশতারা হযরত আদম আ.-কে সিজদা করেছিলেন, তবে সবার আগে যিনি সেজদা করেছেন তিনি হলেন- হযরত ইস্রাফীল আ.। যিনি বড় বড় চার ফেরেশতার এক জন। তিনি সর্বপ্রথম হযরত আদম আ.-কে সজদা করার কারণে এবং হযরত আদম আ. এর ইলমকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। পুরস্কারটি হলো আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কপালে পুরো কুরআন শরীফটি লিখে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ

শুধু ইলম ওয়ালাকে সম্মান করার কারণে যদি এই পরিমাণ পুরুষকার হয়ে থাকে, তা হলে যিনি স্বয়ং নিজেই ইলম শিখেছেন তাঁর কী পরিমাণ পুরুষকার হবে? অপর দিকে শয়তান হযরত আদম আ.-কে সিজদা না করার কারণে এবং তাঁর ইলমকে সম্মান না করার কারণে আল্লাহ্ পাক তাঁকে চির অভিশপ্ত ও ملعون الملائکہ বানিয়ে দিয়েছেন। নাউজুবিল্লাহ্।

ইলম শিখার ফযিলত
ইলমের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ،
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্ পাক তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ \
আবু দউদ শরীফে আছ-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًاسَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقَ الْجَنَّةِ ،
যে ব্যক্তি এলেম শিক্ষার জন্য কোন পথ অবলম্ভন করে। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের রাস্তাকে সহজ করে দেন।
وَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ ،
এবং ফেরেশতারা তাঁর পায়ের নিচে নূরের পর বিছিয়ে দেয়। সুবহানাল্লাহ \
মুহতরাম হাযেরীন!
এই সম্মান মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের জন্য নয়।
অন্য এক হাদীসে আছে

وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ، وَمَنْ فِي الْأَرْضِ، وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ ،
যারা ইলম অন্বেষন করে তাদের জন্য গর্তের পিপিলিকা থেকে নিয়ে সমুদ্রের মৎস পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। সুবহানাল্লাহ \ কী সম্মান আর কী ফযিলত রেখেছেন আল্লাহ্ তায়ালা ইলম অর্জনের মধ্যে।

মুহতারাম হাযেরীন!
একই বাড়ী থেকে যখন দুটি বাচ্চা দুদিকে রওয়ানা হয়, একজন বুকে কোরআন নিয়ে মাদ্রাসার দিকে রওয়ানা হয়। আরেকজন প্যান্ট শার্ট পরে বুকে টাই লাগিয়ে কিন্টার গর্ডেনের দিকে রওয়ানা হয়। দেখতে শুনতে ২য় বাচ্চাটিকে অনেক ভালো মনে হলেও রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেনÑ প্রথম বাচ্চার পায়ের নিয়ে ফেরেশতারা নূরের পর বিছিয়ে দেয়। আসমানের উপরে জমিনের নিচে এবং ما بین السماوات والإرض আসমান এবং জমিনের মাঝখানে যত মাখলূক আছে সমস্ত মাখলূক তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোআ করতে থাকে। সুবহানাল্লাহ

অপরদিকে ২য় বাচ্চাটি যখন পেন্ট শার্ট টাই পরে বুকে টাই লাগিয়ে কিন্টার গার্ড়েনের দিকে রওয়ানা হয়, তখন শয়তান তার বাহিনী নিয়ে তাকে স্বাগতম জানায়। নাউজুবিল্লাহ

একই বাড়ী থেকে একজন রওয়ানা হয় সুন্নতী পোষাক পরে নবীর আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য। আরেকজন রওয়ানা হয় বিধর্মীদের পোষাক পরে তাঁদের আদর্শে আদশবার্ন হওয়ার জন্য। এখন আপনিই চিন্তা করে দেখুন আপনি কোন সন্তানের বাবা হবেন? কাকে নিয়ে আপনি গর্ব করবেন? যাদি আপনি প্রথম সন্তানের বাবা হতে পারেন, তা হলে রাসূলুল্লাহ্ সা. দিয়েছেন আপনার জন্য চমৎকার সু-সংবাদ।

أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ ، ضَوْءُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ ،
এমন সন্তানের বাবা যে হবে কাল কিয়ামতের ময়দানে তাঁকে নুরের মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে। যেই মুকুটের আলো হবে সূর্যের আলোর চেয়েও বেশী। সুবহানাল্লাহ

কারণ তিনি হলেন গর্বিত সন্তানের গর্বিত বাবা। ওয়ারেছে আম্বীয়ার জন্ম দাতা বাবা। আর যদি আপনি ২য় সন্তানের বাবা হন, তা হলে আপনার জন্যও রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক পুরুষ্কার। আপনার এই সন্তান যদি এলেম না শিখার কারণে জাহান্নামী হয়, নাউজুবিল্লাহ্ তা হলে আপনার এই সন্তান আপনার বুকের উপর পা দিয়েই সে জাহান্নামে যাবে। কেন আপনি তাঁকে দ্বীনী ইলম শিখালেন না।

মুাহতারাম হাযেরীন!
বুঝা গেল, কাল কিয়ামতের ময়দানে বাবা হবে দুই ধরনের। কারো বাবা হবে মুকুট পরিহিত রাজা, আর কারো বাবা হবে সন্তানের পায়ে পদদ্বলিত আসামী। এখন আপনিই ঠিক করুন! আপনি কোন ধরনের বাবা হবেন? প্রথম সন্তানের বাবা হয়ে মুকুট পরিহিত রাজা হবেন? নাকি ২য় সন্তানের বাবা হয়ে পদদ্বলিত আস্বামী হবেন?

মুহতারাম হাযেরীন!
সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করা এটা আপনার ঈমানী দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আপনি আপনার সন্তানকে দুনিয়ার সব কিছু শিখালেন, বড় ডাক্তার বানালেন, বড় ইঞ্জিনিয়ার বানালেন, মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে বিদেশ পাঠিয়ে তাকে ংবঃঃষব করে দিলেন। কিন্তু আপনি তাকে দ্বীন শিখালেন না, তা হলে আপনি বাহ্যিকভাবে যদিও তাকে সফল করেছেন কিন্তু পরোক্ষভাবে তার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিেেয়ছেন। কাল কিয়ামতের ময়দানে বুঝে আসবে আপনি আপনার সন্তানের কী ক্ষতি করেছেন। অপরদিকে আপনি যদি আপনার সন্তানের জন্য টাকা পয়সা ধন- দৌলত কিছুই করতে না পারেন, কিন্তু আপনি তাকে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন, আলেম বানিয়েছেন, হাফেজে কুরআন বানিয়েছেন, তা হলে আপনি তাঁকে আখেরাতের বাদ্শাহ বানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ

এতে আপনি সফল হয়েছেন। কাল কিয়ামতের ময়দানে আপনার মাথায় থাকবে রাজকীয় মুকুট। সুতরাং যদি কেউ আখেরাতের বদশাহ হতে চায়, রাজকীয় মুকুট পরিধাণ করতে চায়। তা হলে সে যেন তাঁর সন্তানকে আলেম বানায় হাফেজে কুরআন বানায়, তা হলে এটাই হবে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পুঁজি।

দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী, দুনিয়ার সম্পদ ক্ষনস্থায়ী। আখেরাতের জীবন চীরস্থায়ী, আখেরাতের সম্পদ চিরস্থায়ী। তাই দুনিয়ার ডিগ্রি অর্জন না করে, আখেরাতের ডিগ্রি অর্জনের ফিকির করুন। দুনিয়ার সার্টিফিকেট অর্জন না করে আখেরাতের সার্টিফিকেট অর্জনের ফিকির করুন। দুনিয়াতে যত সার্টিফিকেটই অর্জন করুন না কেন? যত ড়িগ্রি অর্জন করুন না কেন? যদি আপনার কাছে আখেরাতের সার্টিফিকেট না থাকে এবং আখেরাতের ডিগ্রি না থাকে, তাহলে আপনার এ ডিগ্রি আর সার্টিফিকেট আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ \
একটি ঘটনা শুনুন

এটাকে পরিষ্কার করার জন্য আমি আপনাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। দৃষ্টান্তটি কৌতুহল পূর্ন হলেও বাস্ততার সাথে এর খুবই মিল আছে। আমরা দেখি মাঝে মাঝে আমাদের ছেলেরা পরীক্ষার ছুটি ফেলে বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক করতে যায়। তেমনি একবার কিছু ছাত্র পরিক্ষা ছুটিতে একটি নৌকা ভাড়া করে সমুদ্র ভ্রমনে বেরিয়েছে। চিত্তবিনোদন এবং আনন্দ উল্লাশ ছিল তাদের উদ্দেশ্য। নৌকা বাতাসের তালে তালে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ছাত্ররাও ঢেউয়ের তালে তালে আনন্দ পুর্তিতে ভাসছে। ইতিমধ্যে তাদেরই একজন লক্ষ্য করল- মাঝিটি মনে হয় একটু ধার্মীক, মুখে সুন্দর লম্বা দাড়ি। তবে মনে হয় যেন মূর্খ, শিক্ষা-দিক্ষা কিছুই নেই। তাই ছেলেটি হাঁসি তামাসার চলে মাঝিকে লক্ষ্য করে বলল- চাচা মিয়া! লেখা পড়া কিছু করেছেন?

উত্তরে মাঝি বলল, নারে বাবা! পড়াশোনা করতে পারিনি। ভাল কোনো ব্যবস্থা ছিল না বিদায় পড়াশোনা আর হয়ে উঠেনি। ছেলেটি একটু কৌতুকের চলে আবার জিজ্ঞোসা করল, তা হলে আপনি বিজ্ঞান, ভূগোল, পাটি গনিত বীজ গনিত, কিছুই শিখেন নি? না বাবা! এগুলোর তো আমি নামই শুনিনি। এমন উত্তর শুনে ছেলেটি এবং তাঁর সাথীরা রীতিমত অট্ট হাঁসি হাঁসল। মাঝি বললো- হ্যাঁ বাবা! তবে আমি ক্রুআন শিখেছি বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। ছেলেগুলো আবারো অট্ট হাঁসি দিয়ে বলল, চাচা! বিজ্ঞানের যুগে এখন কি আর শুধু এগুলো হলে চলে? এখন হলো, বিজ্ঞানের যুগ, বিজ্ঞান নিয়েই আমাদেরকে চলতে হবে। চৌদ্দশত বছর আগের সেই পুরোনো জ্ঞান নিয়ে পড়ে থাকলে আর চলবে না। পড়া লেখা না করে তো জীবনের অর্ধেকটাই মাটি করে দিলেন। ছেলেগুলোর মূখে এমন কথা শুনে মাঝি বেচারা নীরব হয়ে গেল, কিছুই বলতে পারছে না। এমন সময় হঠাৎ আকাশের কোনে কালো মেঘের আনাগোনা। মুহুর্তের মধ্যে মেঘের ঝাপটায় চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। এদিকে পানির ঢ়েউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রচন্ড বাতাসও বইতে শুরু করল। এতে নৌকার বেহাল অবস্থা, ছেলেগুলোর জন্য এটাই ছিল জীবনের প্রথম সমুদ্র সফর। সুতরাং তারা আগে থেকে এমন সফরে অভ্যস্ত না। এদিকে তারা একজনও সাতার জানে না, যার ফলে তারা বেঁচে থাকারা ভরসাই হারিয়ে ফেলল। সকলে হাউ-মাউ করে কাঁদতে লাগল।

মাঝি এই সময়টিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করল এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, কি বাবারা তোমরা এত কিছু শিখেছ কিন্তু সাতার শিখ নি? তারা উত্তর দিল না চাচা মিয়া! আমরা তো সাঁতার শিখি নি। মঝি বেচারা বললেন, তা হলে তো এখন আর মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই। আমি তো সাঁতার জানি তাই আমি সাঁতরে কিনারে উঠে যাব, কিন্তু তোমদের কি অবস্থা হবে? কী লাভে হলো তোমাদের এই পড়া লেখা করে। আমিতো আমার জীবনের অর্ধেকটা মাটি করেছি। কিন্তু তোমরা তো দেখছি পুরো জীবনটাই মাটি করে দিয়েছ! কারণ আজকে এই সাগরের বুকে তোমাদের ঐ লেখা পড়া আর কোন কাজে আসবে না কাজে আসবে শুধু সাঁতার। সাঁতারই আজ তোমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন!

মুহতারাম হাযেরীন!
এটাই হলো আমাদের জীবনের বাস্তবতা। সব শিখলাম, বড় ডিগ্রি অর্জন করলাম, সার্টিফিকেট অর্জন করলাম। কিন্তু আমার মাওলাকে পাওয়ার মাধ্যমটা শিখলাম না। ছেলেকে বড় শিক্ষিত বনালাম, লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠিয়ে ংবঃঃষব করে দিলাম কিন্তু আল্লাহ তাআলার পরিচয় তাকে শিখালাম না। বিশুদ্ধ ক্রুআন তিলাওয়াত তাকে শিখালাম না। সুতরাং আমি তার পুরো জীবনটাই মাটি করে দিলাম। তাই আসুন! আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, কিন্তু আমাদের সন্তানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। আমরা সু-শিক্ষা থেকে বি ত হয়েছি, কিন্তু আমাদের সন্তানদেরকে আমরা বি ত করব না।

সত্যিকারের গর্বের বিষয় কী?

মুহতারাম হাযেরীন!
আপনার ছেলে যদি আলেম হয়, হাফেজে কুরআন হয়, তা হলে সেটা হবে আপনার জন্য গর্বের বিষয় এবং আপনার নাজাতের কারণ। ......... হাদীস শরীফে আছে وَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ کن عالما أو متعلما أو ناصرا ولا تکن رابعافتهلک ،
হয়তো তুমি আলেম হও, নতুবা ইলম অন্বেষণকারী ছাত্র হও, নতুবা ইলম অন্বেষনকারী ছাত্রদের সাহায্য কারী হও, চতুর্থ প্রকার হইও না। চতুর্থ প্রকার হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

এক কাজী সাহেবের ছেলের ঘটনা
কাজী সাহেব মারা গেলেন, কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিল গর্ববতী।

এক হাজী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হযরত আপনার ছেলে মেয়ে কতজন এবং কী পরিমাণ সম্পদ আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে দান করেছেন?

নেককার সন্তান হলো সদকায়ে জারিয়া।হাদীস শরীফে আছে-

মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল সব সময় চালু থাকে। এবং এর সাওয়াব তাঁর কবরে পৌঁছতে থাকে। এক নাম্বার হলোÑ সদকায়ে জারিয়া অর্থাৎ যে টাকা পয়সা সে আল্লাহ্র রাস্তায় দান করেছে। এর সাওয়াব সব সময় তাঁর কবরে পৌঁছতে থাকে। দুই নাম্বার হলোÑ ইলম যার দ্বারা সে উপকৃত হয়েছে এবং অন্যকেও উপকৃত করেছে। তিন নাম্বার হলোÑ নেককার সন্তান, আপনার সন্তান দুনিয়াতে যেই আমল করবে সেটা আপনার কাছে পৌঁছে যাবে।

ভালো আমল করলে ভালো আমল পৌঁছবে আর খারাপ আমল করলে খারাপ আমল আপনার কাছে পৌঁছবে। সুতরাং যদি কবরে বসে নেক আমল পেতে চান তা হলে নিজের সন্তানকে নেককার বানান। আর নেককার সন্তান তৈরীর কারখানা হলো কাওমী মাদ্রাসা। এখন ডিসেম্বর মাস বছরের শেষ, দুই মুখি শিক্ষা আমাদের দেশে চালু আছে- এক হলো মাদ্রাসা শিক্ষা আরেকাটি হলো জাগতিক শিক্ষা। মাদ্রাসা বলতে কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষার কথায় বলা হচ্ছে। কারণ সরকারী মাদ্রাসা গুলো এখন আর সেই মাদ্রাসার পর্যায়ে নেই। যা আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং আমরা যারা সন্তানের বাবা হয়েছি তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেন আমার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমার সন্তানের সোনালী ভবিষ্যত নষ্ট না হয়। এবং পরকালে যেন আমকে আসামীর কাঠ-গড়ায় দাঁড়াতে না হয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝার তাওফীক দান করুক। আমীন।

পরিশেষে আমি আল্লাহ্ তাআলার কাছে দোয়া করি। আল্লাহ্ তাআলা যেন আমাদেরকে হক্কানী আলেম এবং হাফেজে কুরআনের বাবা হওয়ার তাওফীক দান করেন। আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ