মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের রিজিক উপার্জনের ব্যাপারেও নিদের্শনা রয়েছে এ ধর্মে। ইসলাম ধর্ম নির্দেশিত মূলনীতি ও নীতিমালার আলোকে যে রিজিক উপার্জন হবে তা হালাল বলে গণ্য হবে। ইসলাম হালাল রিজিক উপার্জনের এবং হারাম রিজিক থেকে বেঁচে থাকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিস এ ব্যাপারে আমাদের ভরপুর নির্দেশনা দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তোমরা তা আহার করো এবং কোনোক্রমেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৬৮)
হালাল উপার্জন এবং উত্তম রিজিকের অসংখ্য বরকত। হালাল খাবার পেটে গেলে সেখান থেকে ভালো কিছুই প্রকাশ পায়। নেক কাজের প্রচার-প্রসারের মাধ্যম হয়। পক্ষান্তরে হারাম খাদ্য মানুষকে শেষ করে দেয়। ঈমানের নূর চলে যায়। অন্তর জগত বিরান হয়ে যায়। তার অন্তরে বাসা বাঁধে ইবলিশ শয়তান।
এমন লোক কেমন যেন সমাজের জন্য কষ্টদায়ক জানোয়ারে পরিণত হয়। যে মুখে হারাম খাবার লেগে আছে সেখান থেকে ভালো কিছু কিভাবে আশা করা যায়? হালাল-হারামের পার্থক্য স্পষ্ট। হালাল ও পবিত্র উপার্জনকারী আল্লাহর কাছে মাকবুল হয়ে যায়। তার দোয়া কবুল হয়। পক্ষান্তরে হারাম দ্বারা শরীর পালিত হয় এমন ব্যক্তি বিতাড়িত হয় আল্লাহর কাছে।
হালাল উপার্জন অনেক গুরুত্বের দাবিদার। ফজিলতও রয়েছে অনেক। হজরত মিকদাম ইবনে মা‘দিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন খায়নি যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। নবী দাউদ (আ.)ও নিজ হাতের উপার্জন খেতেন।’ (সহিহ বোখারি)
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা যা খাও এর মধ্যে সবচে বেশি উত্তম সেটাই যা তোমরা উপার্জন করেছ এবং তোমাদের সন্তানাদি উপার্জন করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি) অর্থাৎ সন্তানের উপার্জনও হালাল সম্পদে গণ্য হবে।
নবীজি (সা.) আরেক হাদিসে বলেন, ‘ফরজ ইবাদতসমূহের (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জন করাও একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে।’ (কানজুল উম্মাল) মুসলমান যখন রুযি উপার্জন করার জন্য চেষ্টা করে। পেরেশান থাকে। তখন ইসলাম তাকে উপার্জন করতে নিষেধ করে না বরং তাকে উপার্জনের জন্য কিছু সীমারেখা এবং নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দেয় যাতে ঐ নিয়মকানুনগুলো মেনে পরিবার-পরিজনের জন্য উপার্জন করে এবং তাতে বরকত হয়।
হারাম উপার্জন বাহ্যত দেখতে বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তাতে বরকত হয় না। হালাল রিজিক দ্বারা তৈরি তিনজনের খাবার পাঁচজনের যথেষ্ট হয়ে যায়। কখনো খাবার অতিরিক্ত হয়। পক্ষান্তরে হারাম উপায়ে উপার্জিত রিজিক দিয়ে তৈরি তিনজনের খাদ্য তিনজনের জন্যও যথেষ্ট হয় না।
হারাম ধনসম্পদের কদর্যতা বর্ণনা করে মহানবী সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি একমাত্র পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। আল্লাহ রাসূলদের যে আদেশ করেছেন, মুমিনদেরও সে আদেশ করেছেন।
অতঃপর তিনি বলেন, হে রাসূলরা! তোমরা হালাল পবিত্র খাদ্য ভক্ষণ করো এবং নেক আমল করো।’ তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আমার দেওয়া হালাল রিজিক খাও। অতঃপর রাসূল সা. উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তি দূর-দূরান্তে সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলে শরীরে ধুলাবালি লেগে আছে। এমতাবস্থায়ও ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে কাতর স্বরে হে প্রভু! বলে ডাকছে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম। সেই হারামই খেয়ে থাকে। ওই ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে! (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৯৩)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা হারাম সম্পদ অর্জন করে, যদি তাকে সদকা করে দেয় তবে তা কবুল হবে না। আর যদি খরচ করে তাহলে তাতে বরকত নেই। মৃত্যুর পর রেখে গেলে তবে জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ।’ (মুসনাদে আহমদ)ৎ
মহানবী সা. ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)
আমাদের নবীজি সা.-কে আল্লাহতায়ালা হাবিবুল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) বলেছেন। আর নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু।’ কত ফজিলতের বিষয় তাদের জন্য যারা হালাল রিজিক উপার্জন করে। নবীজি (সা.) তাদেরকে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। এটা কোন সাধারণ দয়া আর অনুগ্রহ নয়।
আল্লাহর প্রিয় ওলি-আওলিয়ারাও হালাল রিজিকের জন্য দৌড়-ঝাপ করতেন। রাজা-বাদশাহগণ তাদের কাছে হাদিয়া-উপঢৌকন পাঠালে তারা গ্রহণ করতেন না। বরং ফিরিয়ে দিতেন।
আল্লাহপাক আমাদেরকে হালাল উপার্জন করার এবং হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম, বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।
-এটি