আবু তালহা রায়হান।।
বিরামহীন নদীর স্রোতের মতো করোনার বয়ে চলা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের বাঙলাদেশের প্রতিটা গ্রাম,পাড়া-মহল্লা, শহর-বন্দর করোনার ছোঁবলে আক্রান্ত।অদৃশ্য এ শক্তির কাছে সকল শক্তিমানরা পরাজিত। সবাই এখন যার যার ধর্মানুসারে আসমানের দিকে তাকিয়ে করুণ কণ্ঠে প্রার্থনা করছে,"হে প্রতিপালক,আমাদেরকে মুক্তি দাও,মুক্তি দাও,মুক্তি দাও" এই সুরে।
মরণঘাতি করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে বেঁচে থাকতে সবাই সতর্কতা অবলম্বন করছে।দেশে দেশে চলছে লকডাউন।বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আইন-আদালত, ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব কিছু।হতদরিদ্রের দেশ বাঙলাদেশ।এখানকার শতকরা ৭০% লোক রোজ আনে, রোজ খায়।এক বেলা কাজ বন্ধ হলে তিনবেলা তাদের কপালে খাদ্য জুটে না।লকডাউনে সবাই গৃহবন্দী। কেউ কাজ করতে পারছে না।অনাহারে মরছে বাঙালি।পরিস্থিতির শিকার হয়ে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার পর গেল মে মাসের ৩১ তারিখ সরকার যাবতীয় স্বাস্থবিধি মেনে চলার নির্দেশনা প্রদান করে সীমিত আকারে খুলে দিয়েছে লকডাউন।
৩১মে-১০ জুন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে পূর্বের তুলনায় মানুষ দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষয়টির নজরদারি করে জনগণের প্রাণ রক্ষার্থে সরকার পুনরায় লকডাউনের সিদ্ধান্তে যাচ্ছে।গত ৩১ তারিখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।দীর্ঘ এছুটিতে কলম, বই-খাতার সাথে ছাত্রদের সম্পর্ক কেমন যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
ছুটির দিনে সাধারণত ক্লাসের বই পড়তে ভালো লাগে না।এক্ষেত্রে ছাত্রদের রুচি ভিন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
কিন্তু লকডাউনের দীর্ঘ এ ছুটিতে একেবারে অলসতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফেইসবুক,টুইটার আর ইউটিউবের মধ্যেই পার হয়ে যায় তাদের সকাল,দুপুর,সন্ধ্যা।দেখা গেছে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও তাদের পর্যাপ্ত সময়টুকু পড়ার টেবিলে দিচ্ছে না।ফলে আগামীর ধারক-বাহক শিক্ষার্থীরা ক্রমান্বয়ে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
করোনার এ দীর্ঘ ছুটিতে আমরা যারা একটুকু হলেও সময়কে কাজে লাগিয়েছি, সামন দিন থেকে আমরা আরও এগিয়ে যাবো মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে।ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে মাতৃভাষাকে স্মরণ করে ইসলাম।মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন।
পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষার মধ্যে থেকে প্রত্যেক জাতিরই স্বীয় ভাষা রয়েছে।আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাঙলা।পৃথিবীতে বাঙলাই একমাত্র ভাষা যার মর্যাদা আদায়ে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অসংখ্য মায়ের কোল খালি হয়েছে।জগতের এ-এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।অতএব মাতৃভাষাকে রূপে-গুণে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা নিজেরা বিশুদ্ধভাবে ভাষা ব্যবহার করাসহ সবস্তরে বাঙলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে।
পবিত্র কুরআন থেকেই আমরা জানতে পারি যে, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন ইসলামের ভাষাও সর্বজনীন।
বস্তুত ভাষা স্বয়ং মহান আল্লাহর নিদর্শনরাজির অন্যতম।পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-”তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে হলো আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা।” (সূরা আর রূম; ২২)
অন্যত্র বলা হয়েছে -”তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশের ভঙ্গি।” (সূরা আর রাহমান;৩-৪)
মাতৃভাষা চার্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ হয়েছে -”আমি রাসূলগণকে স্বজাতির ভাষা দিয়েই প্রেরণ করেছি,যেনো তাঁরা আপন জাতিকে সুষ্ঠুভাবে বোঝাতে পারেন।” (সূরা ইবরাহিম;৪)
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর উপর নাযিল হয়েছে আমাদের হিদায়াতের জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম;আর তা হচ্ছে আরবী ভাষার সর্বাধিক বিশুদ্ধ রূপ।স্বয়ং নবীজি সা.ও ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ আরবীভাষি। তিনি নিজেই বলেছেন ”আনা আফসাহুল আরব।”
(আমি আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক।) দৈনন্দিন জীবনে নবী সা.বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন।ভাষার ব্যবহারে তিনি অশুদ্ধতা ও আঞ্চলিকতা এড়িয়ে চলতেন।
হাদিস শরিফেও আমরা লক্ষ্য করি যে,সাহাবিদের দৈনন্দিন কাজকর্মেও রাসূল সা.ভাষার বিশুদ্ধতা, উপযুক্ত শব্দচয়ন ইত্যাদির প্রতি তাগিদ করেছেন।একবার জনৈক সাহাবি রাসূল সা.-এর নিকট এলেন।তিনি বাহির থেকে সালাম দিয়ে বললেন, ”আ-আলিজু?” প্রবেশ করা অর্থে এই শব্দের ব্যবহার আরবী ভাষায় আছে,কিন্তু অনুমতি কিংবা প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা প্রমিত শব্দ নয়।প্রমিত শব্দ হচ্ছে ‘আ-আদখুলু?’তো নবী সা. তাঁকে বললেন, তুমি ”আ-আদখুলু” বলো।রাসূল সা. এভাবে তাঁর শব্দপ্রয়োগ ঠিক করেছেন।অথচ তা যিকির আযকার বা এ জাতীয় কোনো কিছু ছিলো না।
সুতরাং মাতৃভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা অপরিহার্য বিষয়। পবিত্র কুরআন-হাদিসে নবী তথা ইসলামের আলোকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সৎ মনোভাব প্রকাশের দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং সর্বোপরি বিশ্বমানবতার কল্যাণে মাতৃভাষার চর্চা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
-এটি