গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী।।
জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এ দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের গন্তব্য কুয়েত। সেখানে তিন ঘণ্টা ট্রানজিট শেষে ঢাকার পথে যাত্রা। ইমিগ্রেশনের লাইনে হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম, দেখতে অবিকল মুফতি নুরুল্লাহ সাহেব এর মত একজন মানুষ। চেহারা, পোশাক, শরিরের আকৃতি, কথা বলার ঢং একেবারে মুফতী সাহেব হুজুরের মত। হুজুরের বেশ কয়েকজন সন্তানের সঙ্গে আমার ভালো পরিচয় আছে। বিশেষ করে মাওলানা এনায়েতুল্লাহ সাহেব, মাওলানা সিবগাতুল্লাহ নুর ভাই। কিন্তু উনাকে দেখে ঠিক চিনতে পারছিলাম না।
বয়স্ক মানুষ তিনি, হজের সফরে বেশ ক্লান্ত, কিছুটা অসুস্থতাও বোধকরি গ্রাস করেছে। হযরতের সাথে উদ্যমী দুজন তরুণ আছেন। একপর্যায়ে এগিয়ে গেলাম। একটু ইতস্ততা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হযরতের পরিচয়টা যদি জানতে পারতাম! সঙ্গে থাকা তরুণটি কথা বলে উঠলেন, ইনি মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ সাহেব।
মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ সাহেবের সাথে এটাই আমার প্রথম এবং শেষ দেখা। সেদিন পুরো সফরে হযরতের সঙ্গে অনেক কথা হলো। পারিবারিকভাবেই আমরা মুফতি নুরুল্লাহ হুজুরের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। আব্বাজান রহমতুল্লাআলাইহি যখন আম্মাকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বড় মসজিদ সংলগ্ন মুফতি নুরুল্লাহ সাহেব বাসায় মেহমান, আমি এখনো পৃথিবীতে আসেনি। সে বাসায় সেদিন ঝুল দিয়ে শিং মাছ পাক করা হয়েছিল। বরকতময় সে খাবারের ছিল অসাধারণ স্বাদ। এ গল্প আম্মা এখনো করেন।
আব্বাজানের ইন্তেকালের আগে মাওলানা এনায়েত উল্লাহ সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মসজিদে নববীতে। আব্বার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে দুই পরিবারের আন্তরিকতার গল্পগুলো নতুন করে জেগে উঠেছিল সেদিন। মুফতি নুরুল্লাহ সাহেব রহমাতুল্লাহ আলাইহি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয় বরং গোটা দেশের একজন সাহসী মানুষ ছিলেন। খ্যাতিমান আলেম ছিলেন, বাতেলের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর ছিলেন। পিতার সেই আদর্শিক রূপ নিয়ে গড়ে উঠেছে তার সন্তানরা। এটা হযরতের সন্তানদের দেখে সবসময় আমার মনে হয়েছে। গতকালকে জানতে পারলাম মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ সাহেবের ইন্তেকাল করেছেন। নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহ..।
মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ সাহেবের জীবনের শেষ হজ সফরের বরকতময় সময়ের কিছু স্মৃতি শুনেছিলাম কুয়েত এয়ারপোর্টে বসে। কিছু আলাপ হয়েছিল সেদিন। যে স্মৃতিগুলো জমা রেখেছি হৃদয়ের মণিকোঠায়। আফসোস রয়ে গেল, হযরত এর সাথে আর দেখা হলো না। রব্বুল আলামিন ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই মানুষটিকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন আমিন।
-এটি