মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।
এলাকা ও মৌসুমভেদে মানুষ যে কোনো রকম পোশাক পরতে পারে। বিশেষ কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করেনি ইসলাম বরং ইসলাম মানুষকে পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে বেসিক নির্দেশনা দিয়েছে। সূরা আরাফের ৩২ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে ঘোষণা করেন, বল, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব শোভাময় বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে? বুঝা গেল পোশাকের ব্যাপারে কড়াকড়ি আইন নেই মহাগ্রন্থ আল কোরআনে। তবে আমাদেরকে যথাসম্ভব নবী (সা.) এর তরিকা অনুসারে পোশাক পরতে হবে। সুন্নতসম্মত নয় এমন পোশাক পরা আমাদের জন্য উচিত হবে না।
পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ, এটাই সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা আরাফ, আয়াত : ২৬) উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়ার পোশাক পরিধান করার কথা বলেছেন, যাতে করে লজ্জাস্থানেরও হেফাজত হয় এবং নবীজি (সা.) এর নির্দেশনার বিপরীতও না হয়।
নবীজি (সা.) এর পোশাক ছিল অত্যন্ত সাধাসিধে এবং সাধারণ মানের। নবীজির জীবনটাই তো ছিল দারিদ্রতাপূর্ণ।
লুঙ্গি, চাদর, কোর্তা, জুব্বা এবং কম্বল ছিল নবীজির পোশাকের তালিকায়। অনেক কাপড়েই নবীজি তালি লাগিয়ে পরতেন। সবুজ কাপড় নবীজির পছন্দের ছিল। অবশ্য সাধারণত নবীজির পরনে থাকতো সাদা পোশাক। নবীজির কাছে একটি লাল সবুজাভ ইয়েমেনি চাদর ছিল। সেটাও নবীজির কাছে খুব পছন্দের ছিল। তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি এ চাদরটি পরিধান করতেন। নবীজি (সা.) যে পোশাকগুলো পরতেন এগুলো নিয়ে এখানে কিছুটা আলোচনা করা হলো।
টুপি : নববি পোশাকের ব্যাপারে যতো স্থানে টুপির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে সব স্থানে এমন টুপির সন্ধান মেলে যা মাথার সাথে চেপ্টা হয়ে লেগে থাকে। সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও এ ধরনের টুপি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। সাহাবাদের টুপি মাথার সাথে চেপ্টা হয়ে লেগে থাকতো।
পাগড়ি : নবীজি (সা.) সর্বদা পাগড়ি ব্যবহার করতেন। উভয় কাঁধের মাঝ বরাবর পাগড়ির শামলা ঝুলিয়ে রাখতেন। অবশ্য কখনো ডানে আবার কখনো বামে ঝুলিয়ে রাখতেন কিংবা কখনো সামান্য নিচে পাগড়ি গুটিয়ে নিতেন। পাগড়ির নিচে নবীজি (সা.) অবশ্যই টুপি পরতেন এবং বলতেন, আমাদের এবং মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য হলো আমরা পাগড়ির নিচে টুপি ব্যবহার করি আর তারা পাগড়ির নিচে টুপি ব্যবহার করে না। (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল লিবাস)
হাদিস শরিফে আরও এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বদর ও হুনায়ন যুদ্ধে আমার সাহায্যের জন্য যে ফেরেশতা নাজিল করেছেন তারা সবাই পাগড়ি পরিহিত ছিলেন।
লুঙ্গি : মানবতার মুক্তির দূত মহানবী (সা.) এর সমস্ত কাপড় টাখনুর উপরে থাকতো। বিশেষকরে লুঙ্গি পায়ের গোড়ালির অর্ধেক পর্যন্ত থাকতো।
পায়জামা : হাদিস শরিফে এসেছে, দুজাহানের নবী (সা.) মক্কার মিনা বাজারে পায়জামা বিক্রি হতে দেখে পছন্দ করেছেন এবং বলেছেন, এর মধ্যে লুঙ্গির চেয়ে বেশি আবৃতকরণ আছে। নবীজি (সা.) থেকে পায়জামা কেনার কথাও প্রমাণিত। অবশ্য নবীজি কখনো পায়জামা ব্যবহার করেননি। (সিরাতে মুস্তফা ৩/২৮১)
মোজা : নবীজি (সা.) থেকে মোজা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। নবীজি (সা.) মোজার উপর মাসেহ করতেন।
খিরকা : নববি পোশাকের মধ্যে খিরকা তথা পশমের কাপড়ের আলোচনা খুব পাওয়া যায়। সমস্ত নবীদের পশমের পোশাক ছিল। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবীগণ গাধার উপর সওয়ার হতেন। পশমের কাপড় পরতেন এবং বকরির দুধ পান করতেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের সাথে যেদিন নবী হজরত মূসা (আ.) এর কথা বলার সৌভাগ্য হয় সেদিন তার পরনে ছিল পশমের কম্বল, তার টুপি, জুব্বা, পায়জামা সবই ছিল পশমের এবং জুতাও ছিল মৃত গাধার চামড়ার।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নবীজির সুন্নত মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: ইসলাম বিষয়ক গবেষক
-এটি