মুফতি জাওয়াদ তাহের।।
নাম হল একজন মানুষের পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবকগণের ওপর দায়িত্ব এবং কর্তব্য। রাসূল সা: অসংখ্য হাদীস দ্বারা সুন্দর নামের গুরুত্ব ফোটে উঠে। সুন্দর নামের প্রভাব সন্তানের জীবনে প্রতিফলিত হয়,এবং খারাপ নামের বদ আছর বাস্তবায়িত হয়।
আপনি আপনার সন্তানের যে নাম রাখবেন হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা এ নামেই ডাকবেন যেমনটি এসেছে হযরত আবুদ দারদা রা. হতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে- অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখ। (আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৮)
কারো নাম অসুন্দর হলে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। হাদীস শরীফে এ ধরনের একাধিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنّ ابْنَةً لِعُمَرَ كَانَتْ يُقَالُ لَهَا عَاصِيَةُ فَسَمّاهَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ جَمِيلَةَ.
হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর রা.এর এক মেয়ের নাম ছিল আছিয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জামীলা। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৩৯) কারণ আছীয়া অর্থ অবাধ্য নাফরমান ইত্যাদি সে জন্য রাসূল এ নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
মানসিকতা ও ¯^ভাবের উপরও নামের প্রভাব থাকে।
أَخْبَرَنِي عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدّثَنِي: أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ. قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ: فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.
আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না।
সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৬৪)
অন্য হাদীসে এসেছে তোমরা নবীগনের নামে নাম রাখ। আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।সবচেয়ে সত্য নাম হচ্ছে হারেস এবং হাম্মাম আর সবচেয়ে খারাপ নাম হচ্ছে হারব এবং মুররাহ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৫০)
অহংকার ও ঔদ্ধদ্য প্রকাশ প্রকাশ পায় এমন নাম নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করতেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: أَخْنَى الأَسْمَاءِ يَوْمَ القِيَامَةِ عِنْدَ اللهِ رَجُلٌ تَسَمّى مَلِكَ الأَمْلاَكِ.
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হবে ঐ ব্যক্তির নাম, যে মালিকুল আমলাক (রাজাধিরাজ) নাম ধারণ করেছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬২০৫)
আজকাল আমাদের মাঝে অনেকেই শুধু আনকমন নাম খোঁজার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। নামের অর্থ কি সে দিকে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। হাদীসে আমাদেরকে এ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যে, নাম রাখার সময় আমরা যেন অর্থের দিকে লক্ষ রাখি। নিজে না বুঝলে যিনি বুঝেন তার শরাণপন্ন হয়।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক জামিয়া বাবুুস সালাম বিমান বন্দর ঢাকা-১২৩০
-এটি