সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


হজ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই নিতে যাচ্ছে সৌদি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: করোনার কারণে এ বছর পবিত্র হজ নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা খুব দ্রুতই কাটবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, করোনা সংক্রমণ রোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ শিথিল করে দুই মাসেরও বেশি সময় পর ৩১ মে থেকে মদিনার মসজিদে নববীসহ সৌদি আরবের প্রায় ৯০ হাজার মসজিদের দ্বার নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এখনও মসজিদে হারাম সর্বসাধারণের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়নি। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ ধীরে ধীরে মক্কা অঞ্চলের মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে আসন্ন হজের দ্বার খুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ৩১ মার্চ হজ পালনেচ্ছুকদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত হজের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন দেশটির হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেনতেন।

সৌদি আরব করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে উমরা স্থগিত করে। ওই পদক্ষেপের পর থেকেই হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হজ বন্ধের গুজব ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি মন্ত্রী এ কথা বলেছিলেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত সৌদি আরব ১৫ শাওয়ালের পর থেকে উমরা ভিসা বন্ধ করে দিয়ে হজের প্রস্তুতি নিত।

আর জিলকদ মাসের শুরু থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব গমন শুরু করতেন। এবার করোনা দেখা দেওয়ার পর থেকে (২৭ ফেব্রুয়ারি) উমরা বন্ধ রয়েছে, তাই এবারের হিসাব ভিন্ন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৪ জুন, সৌদি আরবে শাওয়ালের ১২ তারিখ) পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো ঘোষণা সৌদি কর্তৃপক্ষ দেয়নি হজ নিয়ে।

বিভিন্ন দেশ সৌদি আরবের কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চাচ্ছে হজের বিষয়ে। বেশিরভাগ দেশ হজের জন্য সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এরই মধ্যে এ বছরের হজযাত্রা স্থগিত করেছে ইন্দোনেশিয়া। এশিয়ার এই রাষ্ট্র থেকে সর্বাধিক হজযাত্রী হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। দেশটির জন্য চলতি বছর হজের কোটা বরাদ্দ হয়েছিল ২ লাখ ২১ হাজার জনের। ইতোমধ্যেই এর ৯০ শতাংশের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছিল। তার পরও নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সতর্কতার জন্য দেশটি হজযাত্রা বাতিল করল।

এর আগে সিঙ্গাপুর ঘোষণা করেছে, এবার তার দেশের নাগরিকদের হজ পালনে পাঠাবে না। আফ্রিকার দেশ মরক্কো হজের সিদ্ধান্ত দ্রুত জানাতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ২৮ মে দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক বলেন, তার দেশে ৩৪ হাজার হজযাত্রী সিদ্ধান্ত জানতে ব্যাকুল। আমরা তাদের কিছু বলতে পারছি না। সময় খুব কম, প্রস্তুতির অনেক বিষয় রয়েছে। তাই আমরা সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানাই হজের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার।

ইতোমধ্যে পাকিস্তান ও নাইজেরিয়া নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে হজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চিঠি দিয়েছে। তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে আশা জাগানিয়া কিংবা কঠোর ও বেদনাদায়ক যে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক- সেটা আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু সেটা স্পষ্ট হওয়া চাই।

এদিকে সৌদি আরবে বসবাসকারী একাধিকসূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরবে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, হজ একেবারে বাতিল হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় হজের ক্ষেত্রে সৌদি আরব নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর অন্যতম হলো- করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয় এমন দেশগুলোর হজযাত্রীদের হজের অনুমতি না দেওয়া। হজযাত্রীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা হ্রাস করা। সৌদি আরবে অবস্থানের দিন কমিয়ে আনা। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য কোটা ১০ থেকে ৫০ শতাংশ কমানো। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, ১২ বছরের কম বয়সী ও অসুস্থদের জন্য হজের ভিসা ইস্যু না করা।

এ ছাড়া হজযাত্রীদের ভিসাপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত হিসেবে করোনভাইরাসসহ নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এমনকি সৌদি আরব পৌঁছার পরও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি আরব মক্কা-মদিনাসহ এর আশেপাশে বেশকিছু অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। এসব হাসপাতালে করোনভাইরাস টেস্ট সহজে করার সুবিধা রয়েছে।

হজের সময় সৌদি আরবের নানাবিধ সেবার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটা অনেকটা রুটিন কাজ। ঘোষণার পর তাদের প্রস্তুতি নিতে বেশি সময় লাগবে না উল্লেখ করে একাধিক হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজযাত্রীদের পরিবহন, থাকা, খাওয়া, চলাফেরা ও যাতায়াতের জন্য নতুন করে কিছু করতে হবে না। সুতরাং সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে।

কয়েকজন প্রবাসী বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না দিলেও সৌদি আরব ভেতরে ভেতরে হজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে হজযাত্রীর সংখ্যা কমবে। সৌদিতে অবস্থানের সময়ও কমবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এমন দেশের নির্দিষ্ট নাগরিকরাই কেবল হজের অনুমতি পাবেন। আর মক্কা অঞ্চলকে এখনও কারফিউর আওতায় রাখা হয়েছে হজের প্রস্তুতির জন্যই।

আজিজিয়া এলাকায় বসবাসকারী বেশ কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকার হোটেল ও বাসা-বাড়িগুলো হজ মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন করে কোনো বাসা তারা ভাড়া দিচ্ছেন না, অপেক্ষায় হজের।

এ দিকে হজের বিষয়ে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দেশটির সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আমরা আসন্ন হজের জন্য নিবন্ধনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি। এ বছর বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের হজযাত্রীরা হজপালন করতে পারবেন কি না তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। সব বিষয় বিবেচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নেবে সৌদি সরকার। আশা করছি, এ ব্যাপারে তারা ১৫ জুনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। তাদের সিদ্ধান্ত পাওয়া মাত্রই বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে।’

এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার যাত্রী চলতি বছর হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন বলেও জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। সৌদি আরবের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা।

এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন। কিন্তু করোনা আতঙ্কের কারণে নিবন্ধনে তেমন সাড়া না পড়ায় এবারের পূর্বনির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। নিবন্ধন সার্ভার সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে ২৩ জুন হজ ফ্লাইট শুরু করার আশা প্রকাশ করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, হজে লোক পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার ও হাবের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বিক অবস্থার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সারা বিশ্ব।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ