মুুফতি রুহুল আমিন (বাবা হুজুর)।।
মুহাদ্দিস, জামেউল উলুম মাদ্রাসা মিরপুর ১৪ ঢাকা।
রহমত,নাজাত আর মাগফিরাতের বার্তা সম্বলিত মহিমান্বিত মাহে রমজান আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছে।মুসলমানদের জন্য এমাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। এ মাসকে পাওয়ার জন্য মুমিন-হৃদয় সদা সর্বদা ব্যাকুল হয়ে থাকে। পরম সমাদরে মুসলমানরা এ মাসকে বরণ করে। এ মাসকে কেন্দ্র করে পৃথিবীজুড়ে পবিএতার পরশ বয়ে যায়।সবার মাঝে কাজ করে একধরনের মুগ্ধতা ও ভালবাসা । এ মুগ্ধতা পবিএতার। এ মুগ্ধতা ভালবাসা ও হৃদ্যতার।
রহমত,নাজাত আর মাগফিরাতের এ মাসকে পাওয়ার জন্য স্বয়ং রাসূলে কারীম (সা:) দুআ-মুনাজাত করেছেন।হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা:)রজব এবং শা'বান এ দু’মাসে রমজানকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহন করতেন। আল্লাহর কাছে এই বলে দুআ’-মুনাজাত করতেন,আয় আল্লাহ!আমাদেরকে রজব এবং শা’বানে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছিয়ে দিন।
এতেই বুঝা যায় মুসলমানদের এবং ঈমানদারদের জন্য রমজান মাস কতটা গুরুত্ব ও ফজীলতপূর্ণ।
বহু কাঙ্ক্ষিত, অপেক্ষিত ও ফযীলতপূর্ণ এই রমজান মাস ইতিমধ্যেই আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে ।ঈদুল ফিতর উদযাপনের মাধ্যমে রমজান পরবর্তী 'শাওয়াল' মাস আমাদের মাঝে আগমন করেছে। এ মাসটিও মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ ।
শাওয়াল মাসের এই গুরুত্ব ও তাৎপর্যের পিছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। শাওয়াল হলো হিজরী সন তথা আরবি চান্দ্র বছরের দশম মাস।
এ মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে রোজা ও রমজানের। এ মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে সদকা ও যাকাতের। এ মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে ঈদুল ফিতর এবং সাদকাতুল ফিতরের। এছাড়া এ মাসের সঙ্গে হজ্বেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে।কেননা এটি হজ্বের তিনমাস তথা --শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ এর প্রথম মাস।
বিজ্ঞজনদের মতে শাওয়াল যেহেতু আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো: উন্নত ভূমি;উঁচু করণ;উন্নতকরণ; পূর্ণতা লাভ করা;পাল্লা ভারী হওয়া। সুতরাং এই মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ হয়; নেকির পাল্লা ভারী ও সমৃদ্ধ হয়; গৌরব ও সফলতা অর্জিত হয়।
শাওয়াল মাসের বিশেষ আমল ও ছয় রোজার ফজিলত:
অন্যান্য আমলের পাশাপাশি এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে এ মাসে ছয়টি রোজা রাখতে হয়।কোন কোন এলাকায় এই ছয় রোজাকে "সাক্ষী রোযা"ও বলে থাকে। এই ছয় রোযা রাখা সুন্নাত বা মুস্তাহাব তবে এর সওয়াব ও ফযীলত অপরিসীম। রাসূলে আকরাম (সা:) নিজে এই রোযা রেখেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে (রা:) রাখতে উৎসাহিত করেছেন।
শাওয়ালের এই ছয় রোযা সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সা:) ইরশাদ করেন, যে রমজানের রোযা রাখলো অত:পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলে,সে যেন সারা বছরই রোযা রাখলো।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ৬ দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ৬ দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যা হিসাবে তার আমলনামায় নেকি লিখে দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তার দারাজাতকে বুলন্দ করে দেবেন।’
হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।
পবিএ কোরআনে আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন,
‘যে একটি সৎকাজ নিয়ে আসবে(করবে), সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬০)
কোরআনে কারীমের এই আয়াতের উপর ভিওি করে উলামায়ে উম্মত শাওয়ালের ছয় রোযাকে রমজানের এিশ রোজার সাথে মিলিয়ে মোট ছএিশটি রোজার হিসেব করে থাকেন।পুন্যময় কাজের সওয়াব ''দশ গুন" বৃদ্ধির কথা যেহেতু পূর্বেউল্লেখিত সূরা আনআ’মের ১৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। তাই উলামায়ে কেরামগন ৩৬ কে ১০ দিয়ে গুন করে ৩৬০ দিনের হিসেব করে থাকেন।সুতরাং বছরে ছএিশটি রোযা রাখলে ৩৬০ দিন তথা কেমন যেন সারা বছরই রোযা রাখা হলো। এই হলো সারা বছর রোযা রাখার হেকমত।
শুধু নিয়্যতের পার্থক্য ছাড়া শাওয়াল মাসের রোজা রাখার বিশেষ কোন নিয়ম নেই। রমজানে ফরজ রোজার নিয়্যত করতে হয় আর শাওয়ালের ছয় রোজার ক্ষেএে নফল রোজার নিয়্যত করতে হয়।
যার যার সুবিধানুযায়ী এই ছয় রোজা ধারাবাহিকভাবে একসাথেও রাখতে পারবে। আবার মাঝখানে বিরতি দিয়েও রাখতে পারবে।
হায়েজ-নেফাস, সফর এবং অসুস্থতাজনিত কারণে কাযা হওয়া রমজানের ফরজ রোজা বছরের যে কোনদিন রাখা যায়।তবে শাওয়ালের ছয় রোজা আদায়ের পূর্বে কাযা রোযা আদায় করে নেওয়া ভাল ও উওম।
সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করে শাওয়ালের এই ছয়টি নফল রোজা আমরা ছেড়ে দিবো না।কেননা, শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের ফরজ রোজায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা দূর করে দেয়।
তাই প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছরের সওয়াব হাসিল করা।
-এটি