হাফেজ মাওলানা মূসা আল-কাযীম৷৷
পবিত্র মাহে রামাজান চোখের পলকেই যেন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে৷ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুমিনের দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর৷ মাহে রামাজানের সরু চাঁদটি গোল বৃত্তে পূর্ণ হয়ে শাওয়ালের চাঁদকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে ৷ আল্লাহর মুমিন বান্দাগণ পূণ্যর্জনের এই বসন্তকালের বিদায়কে ক্ষণে ক্ষণে ব্যাথিত হৃদয়ে স্বরণ করছে৷
ঈদুল ফিতরের পরিচয়>
ঈদুল ফিতর দুটি শব্দের সমন্বয়ে আরবী যৌগিক শব্দ ৷ "ঈদ" শব্দের অর্থ উৎসব, আনন্দ, ফুর্তি, উল্লাস, প্রফুল্ল, ইত্যাদি৷ "ফিতর" শব্দের অর্থ ইফতার করা, রোযা খোলা, রোযা ভঙ্গ করা ৷ ঈদুল ফিতরের পূর্ণার্থ দাড়ায় "রোযা ভঙ্গ করার আনন্দ"৷
নামকরণের কারন>
আরবী ঈদ শব্দটির মূল রূপ হচ্ছে "আ'ওদ" যার অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা ৷ যেহেতু এই উৎসব প্রত্যেক বছরান্তে একবার ফিরে আসে এই জন্য ঈদকে ঈদ নামে নামকরণ করা হয়েছে ৷ পবিত্র কুরআনেও সূরা মায়েদার ১১৪ নং আয়াতে এ শব্দের ব্যবহার এসেছে ৷
ঈদুল ফিতরের পটভূমি>
মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদ্যাপন করছে। তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে।
মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ-উৎসব হচ্ছে এই "ঈদ" । (বুখারী মুসলিম)
চাঁদের রাতের ফজীলত >
আমাদের মনে রাখতে হবে আরবী দিনপঞ্জী ও আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাত আগে দিন পরে ৷ যে সন্ধায় ঈদের চাঁদ দেখা যাবে সেই রাতই ঈদের চাঁদ ৷ ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব । বছরে পাঁচ রাতে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন পাঁচটি রাত আছে, যে রাতে কোনো দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রাতগুলো হলো… ১। জুমার রাত। ২। রজব মাসের প্রথম রাত। ৩। শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত। ৪। ঈদুল ফিতরের রাত। ৫।ঈদুল আজহার রাত।
এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ দুই ঈদের দুই রাত। এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী, তাসবীহ্ পাঠ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ ও যিকির-আযকারের মাধ্যমে অতিবাহিত করা অতি উত্তম। দিলের নেক মাকসূদসমূহ মহান আল্লাহ পাকের নিকট জানালে মহান আল্লাহ পাক তা কবুল করবেন।
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের সংবাদ যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্যলাভের মহাসুযোগ। বিশেষ করে ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতমণ্ডিত, তাই ঈদের রাতে জেগে থাকা এবং ইবাদত করার গুরুত্ব, মাহাত্ম্য এবং ফজিলত বহু হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে। সেসব হাদিসের আলোকেই তুলে ধরা হলো ঈদের রাতে ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত।
পবিত্র ঈদের রাত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহার রাতে জাগ্রত থেকে মহান আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল থাকবে, যেদিন অন্য সমস্ত দিল মারা যাবে (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন), সেদিন তার দিল মারা যাবে না ।” এর অর্থ হলো- ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য দিল পেরেশানীতে থাকলেও দু’ঈদের রাতে জাগরণকারী ব্যক্তির দিল শান্তিতে থাকবে। (তাবারানী)
ঈদের দিনের ফজীলত >
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যখন তাদের (রোজাদার বান্দাদের) ঈদের দিন হয় অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন, তখন আল্লাহ তায়ালা রোজাদার বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আমার ফেরেশতাগণ ! বল দেখি, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হবে?”
“ফেরেশতাগণ বলেন, হে প্রভু! পূর্ণরূপে তার পারিশ্রমিক দান করাই তো তার প্রতিদান।”
আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা-বান্দীরা তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে, অতঃপর আমার কাছে দোয়া করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে (ঈদগাহে) গমন করেছে। আমার সম্মান, মর্যাদা, দয়া, বড়ত্ব ও মহানত্বের কসম, জেনে রাখো, আমি তাদের দোয়া কবুল করবো। অতঃপর বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা এখন যেতে পার, আমি তোমাদের পাপগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম ৷
মদীনায় রাসূল (সাঃ) এর প্রথম ঈদ >
মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা ! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা ! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও।
ঈদুল ফিতরের সুন্নাতসমূহ>
(১) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা৷ (২) গোসল করা৷ (৩) মিস্ওয়াক করা৷ (৪) সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা৷ (৫) খুশবু ব্যবহার করা৷ (৬) শরীয়তের সীমার মধ্য থেকে যথাসম্ভব সজ্জিত হওয়া ৷ (৭) নামাযের পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ৷ (৮) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খুরমা বা মিষ্টান্ন জাতিয় কিছু খাওয়া ৷ (৯) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৷ (১০) এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় আসা ৷ (১১) সকাল সকাল ঈদের নামায পড়া ৷(১২) ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া ৷ (সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে পড়া) (১৩) ঈদুল ফিতরে নিম্নস্বরে তাকবীরে তাশরীক পড়া ৷ তাকবীরে তাশরীক নিম্নরূপ :
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، واللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، وللَّهِ الحمد
(উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)
উল্লেখ্য, পুরুষদের জন্য ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। তাই পর্দার জন্য তাদের ঈদগাহে না যাওয়া বাঞ্ছনীয়। তারা ঘরে বসেই জিকির-আজকার ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করবেন।
ঈদুল ফিতরের মুস্তাহাবসমূহ>
১. সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা৷ ২. আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ মনে করে শরীয়তের সীমারেখা ঠিক রেখে আনন্দ এবং খুশি প্রকাশ করা ৷ ৩. নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামায আদায় করা। ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে সর্বদা আদায় করা অত্যন্ত জরুরী এবং ওয়াজিব। তবে দুই ঈদের ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করা অতি উত্তম ৷
সাদাক্বাতুল ফিতর >
ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সর্বশ্রেণীর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুমিনের উপর সাদাক্বায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ৷ নবীজী (সাঃ) সর্বদা ঈদগাহে যাওয়ার পুর্বে সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করে দিতেন
তাই নামাযের পুর্বে সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নাত ৷ (আগে পরে আদায় করলেও হয়ে যাবে)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, কর্তৃক ধার্য্যকৃত ২০২০ সালে ঈদুল ফিতরের সদকায়ে ফিতর >
৫ প্রকার দ্রব্যে টাকার পরিমাণে সাদাক্বায়ে ফিতর
★আটা,গম ৭০ টাকা ৷ (১কেজি ৬৫০ গ্রামের মূল্য)
★যব ২৭০ টাকা৷ (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য)
★কিশমিশ১৫০০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য)
★খেজুর ১৬৫০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য)
★পনির ২২০০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য)
সূত্রঃ ইফা কর্তৃক প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি ৷
(সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা)
পথশিশুর প্রতি মহানবী (সাঃ) এর মায়া >
একদা ঈদের দিন মহানবী (সা.) রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে কাঁদতে দেখে তার কাছে যান। ছেলেটি বলল, তার মা ও বাবা কেউই নেই। সে একজন এতীম ৷ মহানবী (সা.) ছেলেটিকে গৃহে এনে বলেন, আমি তোমার পিতা আর আয়েশা তোমার মা, ফাতেমা তোমার বোন আর হাসান-হোসাইন তোমার খেলার সাথি। মহানবী (সা.) এতিম ছেলেটিকে সন্তানের মর্যাদা দান করেন। এভাবে মহানবী (সা.) ঈদের দিন অসহায়দের সহায়তা দান করতেন।
ঈদুল ফিতরের সামাজিক শিক্ষা ও তাৎপর্য >
যাবতীয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সমাজ জীবনে মানুষের পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা, আতিথেয়তা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানবিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক সুসংহত করার লক্ষ্যে পরিচালিত। তাই ঈদুল ফিতরের দিনে ধনী-নির্ধন সব ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমান সমাজের গরিব-দুঃখীদের আনন্দের সম-অংশীদার করে তোলেন।
মুসলিম জাহানের সব মানুষ যাতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্য এদিনে বেশি বেশি যাকাত, ফিতরা, দান, সাদক্বা প্রদানের জন্য ইসলামে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এমনিভাবে ঈদুল ফিতরের দিন নামাজের আগে সামর্থ্যবান ধনী লোকদের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি ফিতরা, সাদকা প্রদানের আবশ্যকতা রয়েছে
একদিকে ঈদুল ফিতর যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর বহন করে, অপরদিকে অন্য সবার প্রতি ঈদের আনন্দ-উৎসবে সমান সুযোগ সৃষ্টির মহান ইসলামী সাম্যবাদী দর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এরই ফলে স্থাপিত হয় ইসলামের অর্থনৈতিক সুষম বণ্টননীতি এবং একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম জাতীয় ঐক্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রাণবন্ত রূপ। সবাই গৃহবাসী আপনজনের মতো এ আনন্দ-উৎসব মন-প্রাণ ভরে উপভোগ করেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের অশেষ শুকরিয়া আদায় করেন।
ঈদুল ফিতর মানুষকে শিক্ষা দেয় যে, ইসলামের রীতি-নীতি অনুযায়ী ধর্মীয় বিধিবিধান ও দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করার মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নিহিত রয়েছে। এভাবে ঈদুল ফিতরের উৎসব ইসলামী জীবনপদ্ধতির ভিত্তিতে একটি বিশ্বজনীন নীতির ওপর গুরুত্বারোপ বহন করে ৷
ঈদুল ফিতরে করণীয় >
★ নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে সময় অতিবাহিত করা এবং উত্তম উপদেশ দেয়া। যা পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।
★ আত্মীয়-স্বজন, মাতা-পিতার সাথে দেখা করা ও খোঁজ-খবর নেয়া।
★ পাড়া প্রতিবেশী, গরীব-অসহায় নির্বিশেষে সকলের সাথে মিশা, তাদের খোঁজ খবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা।
★ সম্ভব হলে পরস্পরকে দাওয়াত দেয়া এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা।
★ ঝগড়া, বিবাদ, কলহ, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে সবার সাথে মোলাকাত আলিঙ্গন ও একাকার হয়ে যাওয়া।
★ জীবন মানে সময়ের যোগফল। অর্থহীন কাজে সময় ব্যয় করা ও টিভির অনুষ্ঠান দেখার নামে মূল্যবান জীবন শেষ করা থেকে বিরত থাকা ও বিরত রাখা। বিশেষ করে নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে।
★ নিজ নিকটাত্মিয় ও সমাজের অবহেলিত দুস্হ-দরিদ্র মানুষদের প্রতি সদয় হওয়া এবং যথাসাধ্য তাদেরকে বেশি মাত্রায় দান-খায়রত করা ৷
ঈদুল ফিতরে বর্জনীয় >
বর্তমানে মুসলিম মিল্লাতের অনেক পদস্খলন হয়েছে, চারিত্রিক অনেক অবক্ষয় ঘটেছে। ঈদের দিনে অনেক বর্জনীয় কাজ করা হচ্ছে। বর্জনীয় বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
★ বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন : বর্তমান কালে বিজাতীয় আদর্শ অনুসরণে বিজাতীয় আচরণ মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজস্ব সংস্কৃতি, আদর্শ উপেক্ষা করে পোশাক পরিচ্ছদে, চালচলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (সহিহ আবু দাউদ)।
★ জুয়া, মদ, জেনা ব্যভিচার ও মাদকদ্রব্য সেবন : আজকাল ঈদের দিনে আনন্দ ফুর্তির নামে কবিরাহ গুণাহর কাজ হতে দেখা যায়। অশ্লীল গান-বাজনার জমজমাট আসর বসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।” (সহীহ বুখারী)।
★ নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর বেশ ধারণ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। রাসূল (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিশপ্ত করেছেন। (আবু দাউদ)।
★ নারীদের অশালীন পোশাকে রাস্তায় বের হওয়া : খোলামেলা, অশালীন পোশাকে, নগ্ন, ও অর্ধনগ্ন পোশাকে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, একদল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম)।
★ নারীদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ: প্রয়োজনে পর্দার আড়ালে নারীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে। কিন্তু গাইরে মাহরাম তথা শরিয়ত অনুমোদিত নয় এমন নিকট আত্মীয় নারীদের সাথে অবাধে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে না।
★ ঈদের চাঁদের রাত কিংবা দিনে যাত্রাপালা,মেলা বসানো,আতশবাজি করা, পটকা ফুটানো,নাচ-গান করা,তরুণ-তরুণী আড্ডায় জমা,পার্কে বা কোন বিনোদন স্পটে অশ্লিলতা, জুয়া খেলা,মদ,আড্ডা বেহায়াপনা ও পর্দাহীনতার সাথে উপস্হিত হওয়া ৷
উদাত্ত আহ্বান >
পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক অমূল্য নিয়ামত, (যার স্রোতধারায় "মুছে যাক জীবনের গ্লানি") ৷ এটি মুসলিম উম্মাহর শুধু একটি আনন্দের উপলক্ষ নয় বরং মুমিনগণ কর্তৃক বড় একটি ইবাদতও বটে,তাই আসুন আমরা স্বমহিমায় চির ভাস্বর এ দিনটির যথাযথ ভাবগাম্ভির্য বজায় রেখে,সকল বৈষম্য ভুলে, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে করি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর ৷
লেখক> শিক্ষক,তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া খতীব,নূরে দারূসসালাম জামে মসজিদ বিজি প্রেস সংলগ্ন,শিল্পাঞ্চল,তেজগাঁও পেশ ইমাম,তেজকুনিপাড়া রেলওয়ে মার্কেট জামে মসজিদ তেজগাঁও,ঢাকা-১২১৫।
-এটি