ফরহাদ খান নাঈম।।
ইসলাম মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান; শুধুমাত্র রমজানের জন্য নয়। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে জান্নাত হাসিলের পন্থা বাতলে দিয়েছেন।
রমজানের একেবারে শেষে উপনীত হয়ে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, ইসলামের অনুসরণ শুধুমাত্র রমজানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বরং ইসলাম মেনে একজন মুমিনের জীবনের আদ্যপান্ত কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে সজ্জিত করাই রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করা রমজানের পরও দ্বীনের উপর অবিচল থাকার একমাত্র উপায় যা একজন মুমিনকে সার্বক্ষণিক সর্বপ্রকার ফিতনা ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।
যে ব্যক্তি কুরআনের সকল দিকনির্দেশনা মেনে চলবে, আল্লাহ তা'য়ালা তাকে সকল অকল্যান থেকে সুরক্ষিত রাখবেন। আর যে নিজে কুরআন মেনে অন্যকেও এর প্রতি আহ্বান করবে, তার জন্য সীরাতে মুস্তাকিমের উপর অবিচল থাকা সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ তা'য়ালা চাইলে রাসুলুল্লাহ সা. এর উপর রমজানেই গোটা কুরআন একবারে অবতীর্ণ করতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, জীবনের প্রয়োজনে ধাপে ধাপে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে কারীম অবতীর্ণ করার কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মানে হলো, কুরআন শুধুমাত্র রমজানেই নয়; বরং একজন মুমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুরআনের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর (রাসুলুল্লাহ'র) প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে ধাপে ধাপে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি যাতে করে আপনার অন্তকরণ মজবুত হয়। সূরা ফুরকান: ৩২
যেভাবে আল-কুরআন একজন মুমিনকে সার্বক্ষণিক পথ দেখায়-
ক. পবিত্র কুরআন মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের সঞ্চার করে।
খ. কুরআন মুমিনের হৃদয়ের সাথে আল্লাহ তা'য়ালার সর্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন করে, এবং এর মাধ্যমে তার হৃদয় ও মন পরিশোধিত হয়।
গ. কুরআন মাজিদ মুমিনের আত্মাকে প্রশান্তি এনে দেয়। এবং বিপদে আপদে আল্লাহ তা'য়ালার উপর ভরসা করার শিক্ষাদানপূর্বক তার অস্থির অন্তরকে প্রশমিত করে।
ঘ. কুরআনের আরেক নাম হলো ফুরকান তথা সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী। তাই কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করার মাধ্যমে একজন মুমিন সকল পরিস্থিতিতে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে করতে সক্ষম হয়।
ঙ. কুরআন পড়ে ও এর থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার মাধ্যমে একজন মুমিন সর্বদাই আল্লাহ তা'য়ালার নিকটবর্তী থাকতে পারে।
যেমন- সাময়িক ওহি নাজিল বন্ধ থাকার কারণে যখন মক্কার কাফিরেরা রাসুলুল্লাহ সা. কে উদ্দেশ্য করে বললো, হে মুহাম্মাদ! তোমার প্রভু তো তোমাকে পরিত্যাগ করেছে, তখন আল্লাহ তা'য়ালা আয়াত নাজিল করলেন। তিনি বলেন- আপনার প্রভু আপনাকে একটুও ছেড়ে যাননি। সূরা দোহা: ৩
এই আয়াত নাজিলের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি কখনোই তাদেরকে ছেড়ে যান না।
সুতরাং যেহেতু আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দাদেরকে কখনোই ছেড়ে যান না, তাই তাঁর বান্দা হিসেবে আমাদেরও উচিত সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সবসময় তাঁর নৈকট্য অর্জন করার চেষ্টা করা।
বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে যেমনিভাবে আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সাথেই থাকেন, তেমনি আমরাও যেনো রমজানের মতো করে সারাটি জীবন তাঁর নির্দেশিত পন্থা অবলম্বন করে তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। বস্তুত এটিই রমজানের প্রকৃত শিক্ষা।
-এটি