হাফেজ মাওলানা মূসা আল-কাযীম৷৷
পবিত্র মাহে রামাজান চোখের পলকেই যেন অস্তাচলে উপনীত৷ মুমিনের বহুল প্রতিক্ষিত মাহে রামাজানের সরু চাঁদটি ষোলকলায় পূর্ণ হতে হতে শাওয়ালের চাঁদকে স্বাগত জানাতে চলেছে৷ বরকতময় সাহরী ও আনন্দময় ইফতারী এ বছরের মতো বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ৷ পূণ্যের বসন্তকালে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহে মুমিনের হৃদয় সরল হিসাব কষছে৷ জীবন থেকে আরো একটি বারাকাত ও ফাযায়েলের মাসের বিদায় জানাতে মুমিনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে৷
সামনেই আসছে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মিয় উৎসব "ঈদুল ফিতর"৷ দীর্ঘ একমাস মুমিনদের উপর মহান আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক ফরয বিধান সিয়াম পালনের পর পশ্চিমাকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা দেয়ার প্রথম দিনটিই হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর৷ একমাস সিয়াম সাধনার পর মহান মালিকের প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে প্রত্যক মুনিনের উপর "সদকায়ে ফিতর" এবং "ঈদুল ফিতর" এর সালাত আদায় অত্যাবশ্যক৷
সাদাক্বায়ে ফিতরের পরিচয় >
সাদাকাতুল ফিতর দুটি শব্দযোগে আরবী যৌগিক শব্দ ৷ সাদাক্বা অর্থ- দান,খায়রাত, ফিতর অর্থ- ইফতার করা, রোযা খোলা, রোযা ভঙ্গকরা ৷ পূর্ণার্থ দাড়ায় রোযা খোলার সাদকা বা দান ৷ সাদাকায়ে ফিতর এমন এক সাদকা যা রামাদানুল মুবারকের রোযার শেষে ঈদের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার পর প্রত্যেক সামার্থবান মুমিনের উপর ওয়াজিব হয় ৷
এটা গরীব মুসলমানের জন্য। তো এই গরীব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করাটা হচ্ছে, গরীবদের জন্য সদকাতুল ফিতর- এর মূল উদ্দেশ্য।
সাদাক্বায়ে ফিতরের ফজীলত >
মহান আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় ৷ সূরা আ'লা,আয়াত ১৪
কোন কোন মুফাসসিরীনে কিরাম এ আয়াতে "পরিশুদ্ধ "দ্বারা সাদাক্বায়ে ফিতর উদ্দেশ্য নিয়েছেন ৷
অর্থাৎ যিনি সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করবেন তিনি সাফল্য লাভ করবেন ৷
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ গম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন এবং নামাযের পূর্বে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাদাক্বাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯
হযরত জারির (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রামাদানের রোযা সদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। -আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৯৬
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন যেন মক্কার পথে পথে সে এ ঘোষণা করে যে, জেনে রেখো ! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সাদাক্বায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু। -জামে তিরমিজি: ১/৮
সাদাক্বায়ে ফিতর কেন আদায় করতে হয় >
★আল্লাহ কর্তৃক মুমিনের উপর অত্যাবশ্যকীয় বিধান ৷
★হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী "তুহরাতুল্লিসসায়িম" অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা তথা ক্ষতিপুরণ স্বরূপ ৷
★হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী "তু'মাতুল্লিলমাসাকীন" অর্থাৎ সমাজের অসহায়,দুস্হ-দরিদ্র,রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে ৷
★দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক পানাহারের অনুমতি মিলায় তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ৷
সাদাক্বায়ে ফিতর কাদের উপর ওয়াজিব >
নারী-পুরুষ, শিশু , আবাল , বৃদ্ধ , বনিতা , স্বাধীন , পরাধীন, এমনকি হিজড়া সম্প্রদায়সহ সকল সামার্থ্যবান মুসলমানের উপর ওয়াজিব ৷ সদকায়ে ফিতর নিজের এবং নিজের নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ হতে আদায় করবে, যদি তারা নিসাবের মালিক না হয়। আর তারা নিসাবের মালিক হলে তাদের মাল থেকেই সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করবে। বালেগ সন্তান পাগল হলে পিতার পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব ৷
সাদাক্বায়ে ফিতর কখন ওয়াজিব হয় >
ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সর্বশ্রেণীর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুমিনের উপর সাদাক্বায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ৷
সাদাক্বায়ে ফিতর কখন আদায় করতে হয় >
সাদাক্বায়ে ফিতর ঈদের সালাত পালনের পুর্বে আদায় করা সর্বোত্তম ৷ তবে আগেও আদায় করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং এক বিবেচনায় আগে আদায় করা উত্তম হতে পারে যাতে প্রাপ্য ব্যক্তিগণ ঈদের কেনাকাটায় ব্যয় করতে পারে ৷ ঈদের সালাতের পরেও আদায় করা জায়েয় আছে তবে অনুত্তম ৷ প্রিয় নবী (সাঃ) সর্বদা ঈদগাহে যাওয়ার প্রাক্কালে সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করে দিতেন ৷
নিজের খেদমতের গোলাম চাই মুদাব্বির (মুনিবের মৃত্যুর পর আযাদের শর্তে যে গোলাম) হোক কিংবা উম্মে ওয়ালাদ (মুনিব কর্তৃক ঔরসজাত সন্তানের মা যে দাসী) হোক তাদের পক্ষ থেকে মুনিবের সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। তবে ব্যবসার গোলামের পক্ষ হতে এবং নিজের স্ত্রী, বালেগ সন্তানাদি ও মুকাতাব (অর্থভিত্তিক চুক্তির গোলাম) গোলামের পক্ষ হতে সাদাক্বায়ে ফিতর মুনিবের আদায় করা আবশ্যক নয় তবে আদায় করে দিলে আদায় হয়ে যাবে ৷ অনেকে মনে করে সাদাক্বায়ে ফিতর শুধুমাত্র রোযাদারদের উপর ওয়াজিব , বিষয়টি এমন নয় বরং সকল সামার্থ্যবান মুসলমানের উপর ওয়াজিব ৷
সাদাক্বায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ >
ঈদুল ফিতরের দিন কোন স্বাধীন মুসলমান যাকাতের নিসাব তথা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা তার সমমুল্যের নগদ অর্থ পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর সাদাক্বায়ে ফিতর ওয়াজিব। উক্ত নিসাব ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনাদির অতিরিক্ত হতে হবে। তবে তা যাকাতের ন্যায় এক বছর অতিক্রম হওয়া ও বর্ধনশীল মাল হওয়া শর্ত নয়।এরূপ নিসাবের অধিকারী ব্যক্তির জন্য সাদাক্বা গ্রহণ করা হারাম।
আসবাবপত্র, ঘর-বাড়ি ,স্হাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়)যাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয় ৷ কিন্ত সাদাক্বায়ে ফিতরের ক্ষেত্রে প্রয়োজনাতিরিক্ত আসবাবপত্র,ঘর-বাড়ি ও স্হাবর সম্পদ,ভাড়া বাড়ির,মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদী (যেসব,উপার্জন নির্ভরশীল নয়) এসবের মূল্যের হিসাবও সাদাক্বায়ে ফিতরের নিসাবের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে ৷
সাদাক্বায়ে ফিতর আদায়ের দ্রব্যাদি ও পরিমাণ >
সাদাক্বায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে পার্থক্য। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই।
২ পরিমাপে ৫ প্রকার দ্রব্যে সাদাক্বায়ে ফিতরের হিসাব >
★ সাদাক্বায়ে ফিতর গম বা আটা দিয়ে আদায় করলে অর্ধ সা' (৮০ তোলা সেরের মাপে ১ সের সাড়ে বারো ছটাক যা কেজির মাপে এক কেজি ৬৬২ গ্রাম) গম বা আটা বা তার মুল্য দিতে হবে ৷ তবে পূর্ণ ২ সের বা তার মুল্য দেয়া উত্তম ৷
★ সাদাক্বায়ে ফিতর খেজুর,যব,কিসমিস কিংবা পনির দিয়ে আদায় করলে ১ সা' (৮০ তোলা সেরের মাপে ৩ সের ৯ ছটাক যা কেজির মাপে ৩ কেজি ৫২৩ গ্রাম) খেজুর,যব,কিসমিস কিংবা পনির বা তার মুল্য দিতে হবে ৷ তবে পূর্ণ ৪ সের বা তার মুল্য দেয়া উত্তম ৷ (সূত্রঃ আহকামে যিন্দেগী)
সামার্থ্যানুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্যে সাদাক্বায়ে ফিতর >
হাদীসে এ ৫ টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্য-মানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে?
আসলে এক্ষেত্রে হক্বদার গরীব জনগোষ্ঠির সর্বোচ্চ উপকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এমনটি করা উচিত যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে।
আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই্ উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রেও একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সাদাক্বায়ে ফিতর আদায় করেছেন, এমনটি কখনো হয়নি ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক ধার্য্যকৃত ২০২০ সালে ঈদুল ফিতরের সদকায়ে ফিতর >
৫ প্রকার দ্রব্যে টাকার পরিমাণে সাদাক্বায়ে ফিতর
★আটা,গম ৭০ টাকা ৷ (১কেজি ৬৫০ গ্রামের মূল্য) ★যব ২৭০ টাকা৷ (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য) ★কিশমিশ১৫০০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য) ★খেজুর ১৬৫০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য) ★পনির ২২০০ টাকা (৩কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য)
সূত্রঃ ইফা কর্তৃক প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি ৷
(সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা)
সাদাক্বায়ে ফিতর যাদের প্রাপ্য>
যারা যাকাতের হক্বদার তারা সাদাক্বায়ে ফিতরেরও হক্বদার আর যারা যাকাতের হক্বদার নয় তারা সাদাক্বায়ে ফিতরেরও হক্বদার নয় ৷ যেসব খাতে যাকাত দেয়া যায়না সাদাক্বায়ে ফিতরও সেসব খাতে দেয়া যাবেনা ৷
পণ্যকে নগদ অর্থে রুপান্তর করে সাদাক্বায়ে ফিতর >
হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট পণ্যই দিতে হবে এটা মুখ্য নয়। বরং নির্দিষ্ট পণ্য অর্থে রুপান্তর করে সে পরিমাণ নগদ অর্থ দিয়ে তাদের খাদ্যের প্রয়োজন পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ । এতেই তাদের স্বার্থ ও সুবিধা সর্বোচ্চভাবে রক্ষা করা যায়।
সাদাক্বাতুল ফিতরের হাদিসে উল্লেখিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে পনির, কিসমিস, গম, যব ও খেজুর। এখন এদেশে কোনো গরিব মুসলমানকে সদকাতুল ফিতর হিসেবে ৩ কেজির উপরে পনির অথবা কিশমিশ দেওয়া হল, অথচ তার বেশি দরকার চিনি, চাল, ডাল, তেল, সেমাই ইত্যাদি পণ্য। এ পর্যায়ে ওই পনির ও কিসমিস দিয়ে তিনি কী করতে পারবেন? এর পরিবর্তে সমপরিমাণ নগদ অর্থ দিলে তিনি কিন্তু তার প্রয়োজনীয় জিনিসটা বাজার থেকে কিনে নিতে পারবেন।
আর পনির, কিসমিস, খেজুর, যব, গম-এইসব পণ্য দিলে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন পূরণে অনেক ক্ষেত্রে তার কোনো কাজেই লাগবে না। বিশেষত পনির, কিসমিস এবং উন্নত খেজুর তার খানা বা প্রয়োজন পূরণের আয়োজনে কোনো ভূমিকাই রাখবে না। এর জন্য সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে, সদকাতুল ফিতরের জন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত দ্রব্য বা পণ্যের সম পরিমাণ নগদ অর্থ গরীব মানুষের হাতে দিয়ে দেওয়া। এতে তার প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি কেনাকাটা করে ফেলতে পারবেন ৷
আরব দেশের কিছু কিছু জায়গায় হাদিসে বর্ণিত সাদাক্বাতুল ফিতরের নির্দিষ্ট দ্রব্য বা পণ্য গম, যব ইত্যাদি স্থানীয় ইমাম সাহেবের কাছে রেখে আসতে দেখা যায়, যা পরে কোনো কাজে লাগে না। এর চেয়ে সুন্দর হলো, রমাদানের শেষে ঈদের সময় গরীব মানুষ যেন তার সুবিধা মতো খাতে খরচ করতে পারে এজন্য তাকে সাদাক্বাতুল ফিতরের পণ্যকে নগদ অর্থে রুপান্তর করে হক্বদারের হাতে সে পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়া। নগদ অর্থে রুপান্তর করে সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা বেশি উপযোগী , গরীবের সুবিধার জন্য বেশি সামঞ্জস্যশীল।
সাদাক্বায়ে ফিতরের উত্তম পন্হা >
প্রথমত নিজ পরিবার পরিজনের মধ্য যারা হক্বদার তাদেরকে দেয়া উত্তম ৷ একজনকে কমপক্ষে পূর্ণ এক সাদাক্বায়ে ফিতর প্রদান করা ৷ অপরদিকে একজনকে প্রয়োজনে কয়েকজনের সাদাক্বায়ে ফিতর মিলিয়ে এ পরিমাণ দেয়াও উত্তম হতে পারে যাতে প্রাপ্য ব্যাক্তি পরিবার নিয়ে কয়েক বেলা আহারের ব্যবস্হা করতে পারে ৷ কিংবা উক্ত অর্থকে সে উপযুক্ত কোন কাজে লাগাতে পারে ৷
দৃষ্টি আকর্ষণ>
বর্তমান সৌখিনতার জীবনে অধিকাংশ মানুষের প্রয়োজনাতিরিক্ত আসবাবপত্রের মূল্য ও রৌপ্যের নিসাবের(মাত্র ৪০,০০০/- টাকার মতো আসবাবপত্রের মূল্য,কিংবা নগদ ক্যাশ ) দিকে খেয়াল করলে সমাজের বেশিসংখ্যক মানুষের উপরই "সাদাক্বায়ে ফিতর" ওয়াজিব ৷
উদাত্ত আহ্বান>
আসুন পবিত্র মাহে রামাদানের সিয়াম সাধনার পর নিজের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো শুধরাতে "ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ ও রিক্তদের অন্নদান" সাদাক্বায়ে ফিতর, আদায় করত আল্লাহ তা'য়ালার আবশ্যকীয় বিধান পালনে ব্রতী হই ৷
লেখক >> শিক্ষক,তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া খতীব, নূরে দারূসসালাম জামে মসজিদ বিজি প্রেস সংলগ্ন,শিল্পাঞ্চল,তেজগাঁও
পেশ ইমাম,তেজকুনিপাড়া রেলওয়ে মার্কেট জামে মসজিদ তেজগাঁও,ঢাকা-১২১৫
-এটি