মাওলানা রিয়াজুল ইসলাম: হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদার রাত লাইলাতুল করদ ফার্সিতে বলা হয় শবে কদর।অর্থ ভাগ্য রজনী, সম্মানিত রজনী ইত্যাদি।
মাহে রমজানের আজ ২৬ তারিখ। আজকের দিবাগত রাতটি সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে পরিচিত।
কোরআনে কারিমে একটি সূরা নাজিল হয়েছে এ প্রসঙ্গে। এতে ঘোষণা করা হয়েছে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি।
সুরা কদরের অনুবাদ : নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ( জিবরীল আমীন) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল-কদর, আয়াত: ১-৫)
লাইলাতুল কদরের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এ রাতের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন: ‘হা-মিম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪)
আল্লাহতায়ালা এ রাতে কুরআন নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি।
হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন।
কোরআনে কারিমের বর্ণনা অনুযায়ী এই এক রাতের ইবাদতের বিনিময়ে হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াবের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হয়তো আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল (সা.) চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এ জন্য এটাকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়। যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি তা যদি সহজে পাওয়া যেত তাহলে মানুষ হয়তো এটাকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।
কেউ কেউ রমজানের যে কোনো অংশে এ রাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামি স্কলারের মতে রমজানের শেষ দশকেই তা লুকায়িত রয়েছে। আবার কারও কারও মতে এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর ২১, কোনো বছর ২৩, কোনো বছর ২৫, কোনো বছর ২৭ আবার কোনো বছর ২৯ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ের অনেক মনীষী রমজানের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ ব্যাপারে সাহাবিদের মধ্যে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ কারি হিসেবে আখ্যায়িত হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি জোর দিয়ে বলতেন, রমজানের ২৭তম রাতই কদরের রাত।
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন ২৭ রমজানের রাতটিই কদরের রাত? জবাবে তিনি বলেন, এ রাতের যেসব আলামত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেছেন আমরা সেগুলো ২৭ তারিখে পেয়েছি।
যে রাতটি লাইলাতুল কদর হবে সেটি বুঝার কিছু আলামত হাদিস, আসার ও উলামায়ে কেরামের অভিজ্ঞতার আলোকে নিম্নে দেয়া হলো:
# রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
# নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
# মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
# সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
# ঐ রাতে হালকা বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
# সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, কদরের রাতের যে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য তার মূল উপাদান কোরআনে কারিম। শেষ নবীর উম্মতের জন্য জীবনব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসেবে কোরআনে কারিম নাজিলের সাথে রাতটি সম্পর্কিত হওয়ায় এই মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব এ রাতের সুফল পুরোমাত্রায় পাওয়ার জন্য কোরআনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই আসল উপায়।
কোরআন পাঠ ও অধ্যয়ন এবং কোরআনি বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণেই নিহিত রয়েছে মানুষের প্রকৃত সাফল্য। লাইলাতুল কদরে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিলের সঙ্গে যেমন অতীত জীবনের পাপরাশি মোচনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে তেমনি তার তওফিক প্রার্থনা করতে হবে কোরআনকে জীবনের দিশারি হিসেবে মেনে চলার।
অধিকন্তু এবছরের আজকের রাত জুমার রাত।জুমার রাতে ইবাদতের আলাদা ফযিলত রয়েছে।তাছাড়া আজকের জুমাতুল বিদার রাত।জুমাতুল বিদারও আলাদা মর্যাদা আছে।