মাওলানা আব্দুল্লাহ আল কাউসার।।
শবে কদর বান্দার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত এক বিরাট নিয়ামত। পুরো রামাদানজুড়ে সবকটি রজনিতেই রয়েছে তা সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা।তবে বিশেষত, রমাযানের শেষ দশকে শবে কদর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি!
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে; হযরত আয়েশা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ﺗَﺤَﺮَّﻭْﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
“তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।)
শবে কদরের ক্ষেত্রে শুধু সাতাইশ রমাযানকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া অাদৌ ঠিক না। সেক্ষেত্রে হাদিস দেখুন,
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: « ﺃُﺭِﻳﺖُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺛُﻢَّ ﺃَﻳْﻘَﻈَﻨِﻰ ﺑَﻌْﺾُ ﺃَﻫْﻠِﻰ ﻓَﻨُﺴِّﻴﺘُﻬَﺎ ﻓَﺎﻟْﺘَﻤِﺴُﻮﻫَﺎ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻟْﻐَﻮَﺍﺑِﺮِ »
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুলকদর দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।) তবে হ্যাঁ! শেষ সাত দিনের বেজোড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চোখ রাখুন নিম্নোক্ত হাদিসে
ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ – ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ – ﺃَﻥَّ ﺭِﺟَﺎﻻً ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃُﺭُﻭﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻨَﺎﻡِ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – « ﺃَﺭَﻯ ﺭُﺅْﻳَﺎﻛُﻢْ ﻗَﺪْ ﺗَﻮَﺍﻃَﺄَﺕْ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ، ﻓَﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺘَﺤَﺮِّﻳَﻬَﺎ
ﻓَﻠْﻴَﺘَﺤَﺮَّﻩَﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ »
ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, কয়েকজন সাহাবী রমাযানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফতে শবে কদর হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি দেখতেছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অতএব কেউ চাইলে শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) তাছাড়া, এ মর্মে আরো অনেক হাদিস বর্ণিত আছে!
আবার কেউ সাতাইশ তারিখের ব্যাপারে সুনিশ্চিতের অভিমত পেশ করেন। কিন্তু, রাসুল (সা.) হতে, সুনির্দিষ্ট করে সাতাইশ রমাযান শবে কদর সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে! এক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক সাহাবির অভিমত বর্ণিত রয়েছে। যেমন; ইবনে আব্বাস (রা:), মুআবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা:)।
তাই, সাহাবিদের মতের উপর ভিত্তি করে, সাতাইশের রাতে লাইলাতুলকদর সংগঠিত হওয়াটা অধিক সম্ভাবনাযুক্ত বলা যেতে পারে। সহিহ (সঠিক) কথা হল, শবে কদর কখনো ২১, কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭ আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।
সুতরাং শুধু সাতাইশ তারিখ নয়, বরং কোন ব্যক্তি যদি রমাযানের শেষ দশকের উপরোক্ত পাঁচটি রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাইশ'র রাত্রি জাগলে শবে কদর পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম গঁড়গাঁও টাইটেল মাদ্রাসা, রাজনগর মৌলভীবাজার।
-এটি