মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
পৃথিবী নামক গ্রহ আজ এক অদ্ভুত সঙ্কটের সম্মুখীন। বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগে সঙ্কটের সময় মানুষ কত অসহায়!এমনি অসহায়ত্বের সময়ে পৃথিবীর মানুষ থমকে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছে - সময়ের উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। আমাদের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলো যারা ইটালী,স্পেন, আমেরিকা কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোকে উন্নত বলে মনে করে তাদের অনুসরণ করছি, তারা প্রতিনিয়ত এসব রাস্ট্র-সমাজের ক্ষয়িষ্নু রূপটিকে প্রকাশিত হতে দেখতে পাচ্ছি।
সাথে সাথে আমরা নিজেদের সমাজকে ও মানবিকতাহীন হিসেবে পাচ্ছি। যেখানে পিতা পূত্রের,পূত্র পিতা মাতার, স্বামী স্ত্রীর, স্ত্রী স্বামীর ,ভাই বোনের,বোন ভাইয়ের লাশ গ্রহনে অসম্মতি জানানোর মতো উদাহরণ ইতোমধ্যেই প্রদর্শন করে ফেলেছেন।
ঐ সমস্ত কথিত উন্নত ও সভ্য দেশগুলো ইতোমধ্যেই তাদের কল্যান রাস্ট্রের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দিয়েছেন।ঐ রাস্ট্রগুলোর প্রায় সবগুলোই সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়ে চলেছেন।সেসব দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ চিকিৎসাসহ প্রায় সকলক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন।
সামাজিক দর্শনের ক্ষেত্রেও তাদের দর্শন আর কাজ করছে না। তাদের সামাজিক দর্শন বৈষয়িক উপাদান আর অর্থসম্পদ নির্ভর।
এটা সুস্পষ্ট একটি বিষয় যে,করোনা আক্রান্ত প্রায় প্রতিটি দেশ (ব্যতিক্রম ব্যতীত) বৃদ্ধ, বেশি অসুস্থ, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের বোঝা বলেই মনে করছে যার কারণে এদের চিকিৎসা বা তাদের বাঁচানোর বিষয়টিকে এ সময়ে গুরুত্বই দিতে চাইছে না।অর্থ উপার্জন আর বৈষয়িক স্বার্থই যেখানে মূখ্য, সেখানে এইসব অসহায় মানুষের এই দুই ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব না থাকায় এরা ঐসব সমাজে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
তথ্যসূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশগুলোর বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ মৃত্যবরণ করেছেন যেব্যাপারে এসব সমাজ বা রাষ্ট্র আদৌ আগ্রহ প্রকাশ করেনি।কাজেই খুব স্পষ্টভাবেই তাদের সামাজিক দর্শনের ব্যর্থতা প্রকাশিত হয়েছে।
নৈতিকতার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান আরো করুণ। কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে, টিকে থাকার প্রয়াসে,অন্যদের কথা না ভেবে তাদের জনগণ যেভাবে তাদের দোকান-পাঠ খালি করে ফেলেছে- সেগুলোর সব অদ্ভুত এবং বিচিত্র তবে বাস্তব তথ্য উঠে এসেছে, তা করুণ নৈতিকতার পরিচয় বহন করে।
যেখানে অসহায়ত্বের সময় মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে নৈতিকতার চরম বিপর্যয় ঘটিয়ে জনপদগুলো সাধারণ মানুষকে করেছে অসহায়,আর অসহায় রা তাদের অস্তিত্বই খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের রাস্ট্রনায়কেরা খেই হারিয়ে জনগণকে সাহস এবং সান্ত্বনা দেওয়ার পরিবর্তে বলছেন "প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হউন"। কি বিচিত্র! কি অদ্ভুত! তাই না?
করোনা ভাইরাস তুলনা মূলক দেরীতে ঐসমস্ত দেশগুলোতে যাওয়ার পরেও , এমনকি তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও তারা প্রত্যাশিত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে- যা সুস্পটই তাদের আভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ।
আমাদের অবস্থাও কি তাদেরকেই অনুসরণ করছে? তবে কি আমরা ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক দর্শন ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে তাদেরই অনুসারী হতে চলেছি?
-এটি