ফরহাদ খান নাঈম।।
পৃথিবীর বুকে আলকোরআন-ই একমাত্র কিতাব যেটি সকল প্রকার ভুলত্রুটির উর্ধ্বে। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে আল-কোরআন। আর সকল বিপদাপদে মুমিনের মনকে প্রশান্তি দিতে এতে রয়েছে এক মহৌষধ।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, (হে নবী) আমি সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা করে আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি। কুরআন ১৬:৮৯
সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, (এই কিতাবটি) মানবজাতির জন্য একটি পথপ্রদর্শক ও সুস্পষ্ট দলীল এবং সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী।
এই আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন, কুরআন কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল - তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে। আর এতে কুরআন অধ্যয়ন করে সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার পদ্ধতিও বাতলে দেওয়া হয়েছে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বহু প্রশংসনীয় সদগুণাবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছয়টি হলো-
১. পবিত্রতা
গুরুত্বের দিক থেকে ঈমানের পরেই তাহারাত তথা পবিত্রতার স্থান। নবীজী সা. বলেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ইসলাম শারীরিক পবিত্রতার সাথে সাথে আত্মিক পবিত্রতাকেও সমধিক গুরুত্ব দিয়েছে।
আত্মিক পবিত্রতা বলতে নিজেকে গুনাহের কাজ থেকে দূরে রাখাকে বোঝায়। যেকোনো কাজে নিজের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়া আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য হলো, শিরক-বিদআত, হিংসা-বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতাসহ সকল গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া।
আর শারীরিক পবিত্রতা টয়লেট ব্যবহারের পর নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পরিস্কার করা, নিয়মিত শরীরের অপ্রয়োজনীয় লোম অপসারণ করা, গোসল করা, দাঁত মাজা, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করাসহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনার সকল দিকই অন্তর্ভুক্ত করে। পবিত্র কুরআনে পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তোমরা মসজিদে গমনকালে সুন্দর পোশাক পরিধান করো। সূরা আ'রাফ: ৩১
অন্যত্র আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে। সূরা হাজ্ব: ২৬
২. হালাল খাবার খাওয়া
পবিত্র কুরআনে হালাল খাবার খাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে মানবসকল! তোমরা পৃথিবীর সকল হালাল খাবার গ্রহণ করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; কেননা সে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট শত্রু। সূরা বাকারা: ১৬৮
আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদেরকে হালাল খাবার গ্রহণের গুরুত্ব বোঝাতে আসহাবে কাহফ তথা গুহাবাসীদের কাহিনী বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, আমি এমনিভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন কোনো পবিত্র খাদ্য অন্বেষণ করে। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
সূরা কাহফ: ১৯
৩. বিনয়ীভাবে চলাফেরা করা
কুরআনে বর্ণিত মুমিন বান্দাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, তারা সর্বদা বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে। দর্পভরে চলাফেরা করা শয়তানের বৈশিষ্ট্য যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাইলের ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, জমিনের উপর দর্পভরে চলাফেরা করো না; কেননা তুমি (তোমার পা দিয়ে) জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না আর উচ্চতায় পর্বতকেও ছুঁতে পারবে না।
৪. ভদ্রভাবে কথা বলা
কুরআনে বর্ণিত আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো সুন্দরভাবে কথা বলা। একজন মুমিন কখনোই বাজে ভাষায় কথা বলে না এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজের স্বর উঁচু করে না। এ প্রসঙ্গে লুকমান আ. কর্তৃক তাঁর পুত্রকে দেওয়া উপদেশ বাণী প্রণিধানযোগ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা লুকমান আ. এর এই উপদেশ বাণী উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, কন্ঠ নামিয়ে কথা বলবে; কেননা সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার (মতো উচ্চস্বরে) ডাক। সূরা লুকমান: ১৯
৫. দয়াপরবশতা
নবীজীর সা. সাহাবীদের রা. জীবনী মুমিনদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান পাথেয়। সাহাবীদের রা. জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তাঁরা যদিও ধন-সম্পদের দিক থেকে নিতান্তই গরীব ছিলেন; কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্যের প্রতি তাদের দয়াপরবশতা তাদেরকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রেখেছে। সুতরাং দয়ালু হওয়াও মুমিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদয় আচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। সূরা বনী ইসরাইল: ২৩
অন্যত্র আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতীম ও অসহায়দের প্রতি সদয় হও। সূরা বাকারা: ৮৩
৬. অতিথিপরায়ণতা
মেহমানদের প্রতি অতিথিপরায়ণতা না থাকলে নিজের ঈমানকে পুনরায় যাচাই করে নেওয়া উচিত। মুমিনদের শিক্ষার জন্য পবিত্র কুরআনে ইব্রাহিম আ. এর অতিথিপরায়ণতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, (হে নবী) আপনার কাছে কি ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের ঘটনা পৌঁছেছে? যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর সে ঘরে গেল এবং একটি মোটাসোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল।
অতঃপর সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ আপনারা আহার করছেন না কেন? সূরা জারিয়াত: ২৪ - ২৭
যদিও বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমান হিসেবে একজন মুমিন বান্দার গুণাবলী ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন; তবু হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কুরআনে বর্ণিত মুমিন বান্দাদের গুণাবলী অনুসরণ করে জান্নাত হাসিল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
মুসলিম ইংক থেকে অনুদিত।
-ওআই/আবদুল্লাহ তামিম