বেলায়েত হুসাইন: ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলাধীন সাতৈর শাহী জামে মসজিদ স্থানীয় মুসলিম সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন। উপজেলার ৬ মাইল উত্তরে অবস্থিত সাতৈর গ্রামে ১৫১৯ সালে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। এটি নির্মান করেন সে সময়ের স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ।
ধারণা করা হয়, আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ ছিলেন হযরত শাহ সুফী শায়েখ শাহ ছতুরী (রহ.)-এর একনিষ্ঠ মুরিদ। স্বীয় মুরশিদের সম্মানার্থে সুলতান মসজিদটি নির্মান করেছিলেন। পরে গ্রামের নামেই মসজিদটি ‘সাতৈর মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
কেউ কেউ মনে করেন, ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি নির্মিত হয়েছে শের শাহ সূরীর শাসনামলে ১৪৮৬ সালের মে মাসে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বৃটিশ আমলে হিন্দুদের প্রতাপে পরবর্তী সময়ে মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হওয়ার পর মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
বর্তমানে তুঘলকাকৃতিতে তৈরি বর্গাকার এই মসজিদটি বাইরের দিক থেকে প্রতিপাশে ১৭.৮ মিটার এবং ভেতরের দিক থেকে ১৩.৮ মিটার বিস্তৃত । পূর্বে ভূমি থেকে মসজিদটির মেঝে প্রায় ০.৭৬ মিটার উঁচু ছিল, বর্তমানে এটি ০.৬ মিটার উঁচু। মোট নয়টি কন্দ আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভেতরে পাথরের তৈরি ৪ টি স্তম্ভ, দেয়ালে এবং দেয়াল সংলগ্ন মোট ১২ টি পিলার রয়েছে। গম্বুজ নির্মাণে পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিমে তিনটি মেহরাব আছে যার কেন্দ্রটি তুলনামুলক ভাবে বড়।
এছাড়াও মসজিদের চত্বর ঘেঁষা প্রাচীর বেষ্টিত একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ধারণা করা হয়, জায়গাটি সুলতানের মুরশিদ হযরত শাহ সুফী শায়েখ শাহ ছতুরী (রহ.) এবং তার ভক্তকুল এবং একান্ত কয়েকজন সহচরের মাকবারা। আর মসজিদের অদূরেই বিরাট একটি পুকুর রয়েছে।
সম্ভবত মসজিদ নির্মানের সময় সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ বিরাট পুকুরটি খনন করেছিলেন। এভাবে ফরিদপুরের ‘সাতৈর মসজিদ’ পাশেই অবস্থিত সুফি সাধকদের মাকবারা এবং বৃহদায়তন পুকুরটি মুসলিম সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে আজও বেঁচে রয়েছে। বর্তমানে মসজিদের পাশেই গড়ে উঠেছে হিফজখানা ও মক্তব সহকারে সুন্দর একটি মাদ্রাসা।
-এএ