সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোহিঙ্গা শিবিরের পর এবার করোনা হিরো গাজী ইয়াকুব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাকারিয়া মাহমুদ।।

গাজী ইয়াকুব ভাই। তিনি আমাদের প্রিয় মাওলানা গাজী ইয়াকুব। আলোকিত এক যুবকের নাম। তিনি আমাদের হিম্মত ও প্রেরণার এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ইয়াকুব ভাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রার্থী। মানব সেবায় এক অনন্য নাম গাজী ইয়াকুব ভাইয়ের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যখনই কোন ব্যক্তি, পরিবার বা সমাজ বিপদগ্রস্ত হয়, তখনই নিজের সাধ্যমত ছুটে যান এ যুবক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইয়াকুব ভাই নিজেকে সর্বাত্মক উৎসর্গ করেছিলেন। ডেঙ্গু ইস্যুতে ঢাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরে ডেঙ্গু নিধনে কাজ করেছিলেন।

অনেকে তাকে গাজী ভাই বলে ডাকেন। আমি ইয়াকুব ভাই-ই ডাকি। আমি এর মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাই। ইয়াকুব ভাইয়ের সঙ্গে আমার যতোটা না বাহ্যিক সম্পর্ক তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আত্মার সম্পর্ক। করোনার এই ক্রান্তিকালে যখন সবাই নিজেকে বাঁচাতেই ব্যস্ত তখন নিজের জীবনবাজি রেখে দিন-রাত কোথায় কে কষ্টে আছে, না খেয়ে আছে তিনি তা নিয়ে ব্যস্ত। ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরন্তর ছুটোছুটি করছেন মানুষের জন্য। প্রতিদিন দুস্থ ও অভাবী মানুষকে সাহায্য করছেন। ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছেন। নগদ অর্থ সহায়তা করছেন।

আলেম-ওলামাদের সাধ্য মতো সাহায্য সহযোগিতা করছেন। বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০ পরিবারে প্রায় দের হাজার মানুষকে রেডি খাবার দিচ্ছেন। বিশেষ করে সারা দেশে করোনার লাশ দাফন-কাফনে তিনি যে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তা অত্যন্ত বিরল। এদেশের মানুষ তা যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। এভাবে সারাদিন খাটাখাটুনির পর রাতদুপুরে যখন ইয়াকুব ভাই বিছানায় একটু গাটা এলিয়ে দেন তখনও বান্দার শেষ নেই, এবার পার্সোনাল খোঁজখবর নেয়ার পালা। মাঝেমধ্যেই তিনি আমাকে মদ্ধরাতে ফোন দেন। দিলের কথাগুলো বলেন। দিনের কারগুজারী শেয়ার করেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে খুশি হন, তাদের দুঃখে কাঁদেন, সুখে হাসেন। আমার ও পরিবারের খোঁজখবর নেন। আমি তাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দেই।

এই তো যেদিন আমার আব্বা ইন্তেকাল করেন সেদিনও ইয়াকুব ভাই এই লকডাউনের মাঝেও গাড়ী দিয়ে তার কর্মীদের পাঠিয়েছেন। বললেন, ভাই ২৫/৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি, চলবে তো? আমি সেদিন সত্যিই বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছিলাম। একজন মানুষ কতোটা উদার হতে পারে! সত্য বলতে কি, মানুষ দেখেছি অনেক, কিন্তু গাজী ইয়াকুব ভাইয়ের মতো মানুষ দেখেছি একজন। করোনার এই দুঃসময় আমাকে সেটা দেখিয়েছে। গাজী ইয়াকুব ভাই ছাড়া আর কেউ আমাকে জিগ্যেস করেনি, ভাই আপনি কেমন আছেন? কীভাবে চলছেন? যদিও কারো জিগ্যেস করা না করা নিয়ে আমি কখোনো ভাবিনি। আর আমার কোনো সাহায্যেরও প্রয়োজন নেই, আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। কিন্তু কেউ যখন একটু খোঁজখবর নেয় তখন অন্তরে একটু প্রাশান্তি অনুভব হয়। ইয়াকুব ভাই আমার এই জায়গাটা দখল করেছেন। তার এই আন্তরিক বদান্যতা আমার আজীবন স্বরণ থাকবে।

ইয়াকুব ভাই মাঝেমধ্যে আমার অফিসে আসেন। আমি তার সম্মানে চেয়ারটা ছেড়ে দেই কিন্তু বিনয়ী এই মানুষটাকে কখনো টানা হেঁচড়া করেও আমার চেয়ারে বসাতে পারিনি। একবার খুব জোর করে বসিয়েছিলাম। এ যুগে ইয়াকুব ভাইয়ের মতো বিনয়ী আলেম আমি খুব কমই দেখেছি। চতুর্দিকে আত্মহংকারী আত্মম্ভরি মানুষের মাঝে ইয়াকুব ভাই এক সদাহাস্যজ্বল, বিনয়ী, বিনম্র সফেদ দিলের এক ভিন্ন মানুষ।

গত সপ্তাহে আসরের পর অফিসে বসে আছি। আরেক নন্দিত আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ্ ভাইয়ের কাজ করছিলাম কম্পিউটারে। হঠাৎ ফোনটি তার কর্মের জানান দিলো, স্ক্রিনে ভেসে ওঠলো প্রিয় ইয়াকুব ভাইয়ের নম্বর। রিসিভ করতেই ওপার থেকে সালাম দিয়ে ব্যস্তকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন শায়খ, হজরত কোথায় আছেন? বললাম অফিসে। বললেন, আমি এখনই আসছি, একটু অপেক্ষা করেন। একটুপর সদলবলে গাড়ী নিয়ে চলেও এলেন, সাথে ১২০ জনের রেডি খাবার। এভাবে গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপকালেও আমার এলাকার জন্য বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি।

আসলে পৃথিবীতে মানুষের অভাব নেই, কিন্তু ভালো মানুষের বড্ড অভাব! দুনিয়ায় বিদ্বান আছে কিন্তু বিনয়ীর বড় অভাব। এ দেশে আল্লামা ফাহ্যামার শেষ নেই, শাইখুল মাশায়েখের অন্ত নেই, কিন্তু প্রকৃত ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। জগতে যৌবনদীপ্ত যুবকের অভাব নেই, কিন্তু ত্যাগ, সাধনা, সংগ্রাম ও বিপ্লবে যাওয়ার হিম্মত অনেকেরই নেই। আমরা যতোটা গর্জে উঠি ততেটা বর্ষি না। আমরা যতোটা বাহুর শক্তি প্রদর্শন করি বিপরীতে ততোটাই ক্ষিন ও দূর্বল। ইয়াকুব ভাই সেই সাহসী যুবকদের আলোর মিছিলের শ্রেষ্ঠ বীর সেনানী, দূর্যোগে, দুঃসময়ে, বিপ্লবে, সকল সংগ্রামে যুদ্ধের ময়দানে যিনি গর্জে ওঠেন অকুতোভয়ে, অপরাজেয় তীব্র লড়াকু সৈনিকের বেশে।

ইয়াকুব ভাই যেভাবে অকাতরে নিজের স্বর্বস্ব বিলিন করে দিয়ে ইসলাম, দেশ ও দশের জন্য কাজ করছেন তেমনি তিনি সমাজ ও রাস্ট্রের সম্মান ও স্বীকৃতিও পাচ্ছেন। গেল ০৩-০৫-২০ ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে এডিশনাল আইজি জনাব মাহবুব হোসেন ইয়াকুব ভাই প্রতিষ্ঠিত তাকওয়া ফাউন্ডেশন-এর দেশব্যাপী সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সামনে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন ও ইয়াকুব ভাইয়ের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের গাজী ইয়াকুব ভাই, তার তাকওয়া ফাউন্ডেশন এবং সমূদয় খেদমতগুলোকে কবুল করুন। আরো ব্যাপক করে দিন। মীযানে হাসানাতে ভারী করে দিন। আমীন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ