মুফতি তকি উসমানী
বান্দার দুয়া আল্লাহর নিকট অনেক পছন্দের বিষয়। দুনিয়ার কারো কাছে বার বার চাইলে এক পর্যায়ে সে রাগান্বিত হয়, চাই সে যত বড় দানশীলই হোক না কেন।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এমন নন। বান্দা তাঁর নিকট যতবেশি চায় তিনি তার উপর ততবেশি খুশি হোন। হাদিসে এমনও আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট চায় না আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হোন।
দুয়া কেবল চাওয়া পাওয়ার মাধ্যমই নয় বরং এটা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। অর্থাৎ ব্যক্তিগত দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে দুয়া করলেও সেটা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় এবং এর জন্য ছাওয়াবও পাওয়া যায়। আর যত বেশি দুয়া করা হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ততবেশি বৃদ্ধি পাবে। শুধুমাত্র সংকট ও সমস্যার সময়ই দুয়া নয় বরং আনন্দ ও সুখের সময়ও দুয়া করতে থাকা উচিত। হাদিসে আছে, কেউ যদি চায়, বিপদাপদের সময় যেন তার দুয়া কবুল হয় সে যেন সুখ ও আনন্দের সময় বেশি বেশি দুয়া করে। (জামিউল উসুল, তিরমিযির উদ্ধিৃতিতে)
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ওয়াদা করেছেন, ‘আমার কাছে দুয়া কর আমি কবুল করব।’ আল্লাহর এই ওয়াদা ভুল হতে পারে না। এজন্য এই দৃঢ় বিশ^াসের সাথে দুয়া করতে হবে যে, অবশ্যই কবুল হবে। তবে কবুল হওয়ার ধরণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। কখনো যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। কখনো বান্দা যা চায় আল্লাহর নিকট সেটা বান্দার জন্য কল্যাণকর নয় বলে আল্লাহ তায়ালা এর চেয়ে উত্তম ও উপকারী বস্তু দুনিয়া ও আখেরাতে দান করে থাকেন। এমনিভাবে প্রতিটি দুয়ার তিনটি ফায়দা রয়েছে।
১. দুয়া কবুল হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল হয়।
২. প্রতিটি দুয়ায় ছাওয়াব পাওয়া যায়।
৩. বেশি বেশি দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।
যদিও দুয়া করার আদবের মধ্যে এগুলো লক্ষণীয় বিষয়- কেবলামুখি হয়ে হাত উঠিয়ে মুখে মুখে দুয়া করা এবং প্রথমে হামদ-ছানা ও দুরুদ শরিফ পড়া, তথাপি যদি সুযোগ না হয় তাহলে এসব কিছু ছাড়াও দুয়া করা জায়েয। আল্লাহ তায়ালা দুয়াকে এমন আসান করে দিয়েছেন যে, তা সব সময় সব জায়গায় করা যায়।
চলতে ফিরতে উঠতে বসতে, কাজ করার সময়ও। কখনো যদি মুখে উচ্চারণ করার সুযোগ না থাকে (যেমন বাথরুমে) তাহলে দিলে দিলে দুয়া করা যায়।
দুয়ার মধ্যে শুধু বড় বড় বিষয়ই চাওয়া হবে এমন নয় বরং নিজের সর্বপ্রকার ছোট বড় প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাওয়া যায়। এমনকি হাদিসে আছে ‘যদি জুতার ফিতাও ছিড়ে যায় তাহেলও আল্লাহর কাছে চাও।’
এজন্য এ অভ্যাস গড়ে নেওয়া উচিত, যেকোন ছোট থেকে ছোট প্রয়োজনই সামনে আসুক না কেন তা আল্লাহর কাছেই চাইব। সাধারণ কোন কষ্ট লাঘবের জন্যও আল্লাহর নিকট দুয়া করব।
যেমনিভাবে বাচ্চাদের যখন কোন প্রয়োজন হয় বা কোন সাধারণ কষ্ট হয় তখন সে তার মাকে ডাকে। তেমনিভাবে বান্দার উচিত সে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকবে এবং ডাকতে থাকবে। চলতে ফিরতে উঠতে বসতে, কাজ করতে করতে মোটকথা সবময়ই কিছু না কিছু চাইতে থাকা উচিত। অভ্যাস গড়ে ফেলতে পারলে এর দ্বারা অনেক উন্নতি হবে ইনশা-আল্লাহ।
সূত্র: আসান নেকিয়াঁ- মুফতি তকি উসমানী। ভাষান্তর: মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম