শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
১৬ টি বছর জুলুম-ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল মাদরাসার ছাত্ররা: ড. শামছুল আলম  ‘সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন’ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ যেসব সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশিদের সুখবর দিলো ইতালি, পুনরায় ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনে কোনো সাফাই নয়: সারজিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে সিলেট মহানগর জমিয়তের শোক

করোনায় চাকরি হারিয়েছেন? ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

করোনা সংকটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব বাজার। বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চাকরি হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। বাড়ছে অর্থসংকট।

করোন পরিস্থিতিতে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। পরিবার চালাতে বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্তরা। এহেন দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্বস্তি মিলতে পারে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা স্থাপনের মাধ্যমে।

সবকিছু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায়ই হচ্ছে

তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। তাকদিরে বিশ্বাস করা ব্যতীত কারো ঈমান সস্পূর্ণ হয় না। সুতরাং চাকরি চলে গেলে বুঝতে হবে এটাও আল্লাহ তা'য়ালার ইচ্ছায়ই হয়েছে।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, পৃথিবীতে এবং তোমাদের ব্যক্তি সত্তার উপর যেসব বিপদ-মুছীবাত আপতিত হয় তার একটিও এমন নয় যে, তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আমি একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখিনি। অবশ্যই এমনটি করা আল্লাহর জন্য একেবারেই সহজ। সূরা হাদীদ: ২২

আর বিপদে ধৈর্যহারা হতে নিষেধ করে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, জেনে রেখো, ধৈর্যের সাথেই রয়েছে বিজয়। আর কষ্টের পরেই রয়েছে সুখ। তিরমিযী

রিজিকের মালিক আল্লাহ; চাকরি নয়

আল্লাহ তা'য়ালার একটি গুণবাচক নাম হলো আররাজ্জাক অর্থাৎ রিজিকদাতা। যে আল্লাহ চাকরি হারানোর পূর্বে খাইয়েছেন, চাকরি হারানোর পরও সেই আল্লাহই খাওয়াবেন। তিনি তো সেই সত্ত্বা যিনি বান্দাকে তার মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়ও রিজিক দিয়েছেন। চাকরি তো একটি উসীলা মাত্র; আর আল্লাহ তা'য়ালা চাইলে কোনো উসীলা ছাড়াই সবকিছু করতে পারেন।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আসমান-জমীনে আল্লাহ তা'য়ালা ছাড়া আর কোনো প্রভু কি আছে যে তোমাদেরকে রিজিক দেয়? না! তিনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই। সূরা ফাতির: ৩

মানুষের জন্মের পূর্বেই তার রিজিক লিপিবদ্ধ

মানুষ যখন তার মায়ের গর্ভে ১২০ তম দিনে উপনীত হয়, তখন আল্লাহ তা'য়ালা তার রিজিক লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেন। সুতরাং যাই হোক না কেনো, মানুষ তার নির্ধারিত রিজিক লাভ করবেই।

আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন প্রত্যেকের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়, সে জান্নাতী না জাহান্নামী তা লেখা হয়, তার রিজিকের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ও তার হায়াতের সময়সীমা লিপিবদ্ধ করা হয়। বুখারী

সুতরাং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রিজিক থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা কারো নেই। কারো নির্ধারিত রিজিক শেষ করার পূর্বে তার মৃত্যু হবে না।

এটা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ পরীক্ষা

মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তা'য়ালা বান্দাকে বিপদগ্রস্ত করে তার ধৈর্য্য পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখতে চান, তার বান্দা বিপদে পড়ে তাঁকে ভুলে যায় কিনা, তাঁর উপর আস্থাহীন হয়ে পড়ে কিনা।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, জানমালের ক্ষতি ও কর্মফলের মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। আর ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। সূরা বাকারা: ১৫৫

বিপদের মাধ্যমে পাপমোচন হয়

বিপদ-আপদ পাপমোচনের একটি মাধ‌্যম। এর দ্বারা আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
যেকোনো বিপদ দিয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার পাপমোচন করেন ও তার নেকিবৃদ্ধি করেন; এমনকি তা যদি সামান্য একটি কাঁটা বিঁধিয়েও হয়। মুসলিম।

রাসুলুল্লাহ সা. আরো বলেন, মুমিন নরনারীর উপর তাদের জানমাল ও সন্তানসন্ততি নিয়ে এতো বেশি বিপদ আসবে যে (সেগুলো ধৈর্যসহকারে সহ্য করার মাধ্যমে) একসময় তারা পাপহীন অবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালার সাথে সাক্ষাত করবে। তিরমিযী

বর্তমান পরিস্থিতিতে যা যা করণীয়

আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা স্থাপন

সবসময় মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তা'য়ালা যা করেন, বান্দার ভালোর জন্যই করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমরা এমন জিনিস ঘৃণা করতে পারো যা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক; আবার তোমরা এমন কিছু পছন্দ করতে পারো যা আসলে তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর আল্লাহ তা'য়ালাই সব জানেন, তোমরা জানো না। সূরা বাকারা: ২১৬

ধৈর্যধারণ করা

স্মরণ রাখতে হবে, কষ্টের পরেই রয়েছে সুখ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। মুসলিম।

প্রচুর পরিমাণে ইস্তিগফার করা

বিপদে পড়লে পেছনের জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে‌। দেখা যাবে, গুরুত্বপূর্ণ কিছুর ঘাটতি রয়ে গেছে, বাজে কিছু কাজ আছে যা বাদ দিতে হবে, আল্লাহ তা'য়ালা রাগান্বিত হন এমন কাজগুলো বর্জন করতে হবে।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, বিপদ-আপদ যা কিছুই আপতিত হয়, সবই তোমাদের হাতের কামাই। সূরা শুরা: ৩০

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, মানুষ তার গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। ইবনে মাজাহ।

জীবনটাকে আদ্যপান্ত স্ক্যান করে যদি এমন কিছু পাওয়া যায়, তাহলে এখনই তা ঠিক করে নিতে হবে। আল্লাহ তা'য়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন, কেননা তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।

আল্লাহকে ভয় করা

আল্লাহ তা'য়ালার আনুগত্য তাঁর রহমত লাভের চাবিকাঠি; আর তাঁকে ভয় করা সকল সফলতার মাধ্যম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করবে ও তাঁর আনুগত্য করবে, আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর জন্য (বিপদ থেকে উত্তরণের) উপায় বের করে দেবেন। সূরা তালাক: ২-৩

বেশি বেশি দুয়া করা ও সৎকর্ম করা

ভুলে গেলে চলবে না যে, মুমিনের অস্ত্র হলো দুয়া। কবুলের আশা নিয়ে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে দুয়া করলে, তিনি অবশ্যই সেই দুয়া কবুল করবেন। এবং সাথে সাথে কুরআন তিলাওয়াত, রোজা রাখা ও দান-সদকাসহ সকল সৎকর্ম বাড়িয়ে দিতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, পুরুষ ও নারী যে কেউ সৎ কাজ করবে এবং ঈমান আনবে,অবশ্যই তাকে আমি এমন জীবন দান করবো,যে জীবন হবে ভাল ও পবিত্র এবং তাদের কাজ অনুযায়ী তাদের আমি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো। সূরা নাহল: ৯৭

আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় করা

পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তার কাছ থেকে দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। কারো সাথে কথাবার্তা বন্ধ থাকলে, কথাবার্তা বলা শুরু করতে হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কেউ যদি চায় যে তার রিজিক বৃদ্ধি পাক, তার হায়াত বৃদ্ধি পাক, তাহলে সে যেনো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।

হালাল রিজিক অন্বেষণ করা

পরিবারের খরচ বহন করার জন্য হালাল রিজিক অন্বেষণ করা আল্লাহ তা'য়ালার আদেশ। ইমাম আহমাদ রহ. কে এমন‌ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, যে সবসময় মসজিদে পড়ে থাকতো আর রিজিক লাভের জন্য কোনো কর্ম করতো না। তিনি বললেন, এমন ব্যক্তি হলো মূর্খ ও নির্বোধ।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, কল্যাণকর কোনো কিছুর জন্য আল্লাহ তা'য়ালার সাহায্য কামনা করতে হবে ও সাথে সাথে চেষ্টাও করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নিরাশ হওয়া যাবে না। মুসলিম

আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া

মনে রাখতে হবে, এই দুনিয়া ক্ষণিকের। সত্যিকারের জীবন হলো আখিরাতের জীবন। সুতরাং একজন মু'মিনের দুনিয়ার সাময়িক লোভ-লালসা প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে আখিরাতের সফলতার জন্য কাজ করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবে সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আহমাদ।

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, রিজিক আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিজিক দান করেন, আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা রিজিক ছিনিয়ে নেন। সুতরাং সর্বদা আল্লাহ তা'য়ালার আনুগত্য করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করতে হবে।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ