বিন ইয়ামিন
বিশেষ প্রতিবেদক>
করোনা পরিস্থিতিতে থমকে গেছে অর্থনীতি। রাষ্ট্রের গায়ে বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ছুটি চলায় অর্থনৈতিকভাবে মানুষ চরম সংকটে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি অনুদান গ্রহণ করা না করা নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত। কেউ বলছেন সরকারি অনুদান গ্রহণ কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য পরিপন্থি। আবার কেউ বিবেচনা করছেন, সংকটের সময় রাষ্ট্রকে সকলের পাশেই দাঁড়াতে হবে!
শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করেই সহযোগিতা করতে হবে: মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ
পরিচালক, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
সরকারি অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন প্রক্রিয়ায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। মাদরাসার শিক্ষকদের সসম্মানে সহযোগিতা করা উচিত। তাদের সম্মানের হানি হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না।
তাদেরকে যদি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে অনুদান গ্রহণ করতে হয়, তাহলে এটি তাদের জন্য লজ্জার বিষয়। তাদেরকে বোর্ডের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে তারা সাময়িক সমস্যায় পড়েছে ঠিক, কিন্তু তারা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদেরকে সম্মান এর সাথেই উপঢৌকনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া বেফাক চাইলে একটি বড় পরিসরে তহবিল গঠন করতে পারে বলে আমি মনে করি। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ প্রচুর অর্থায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে সরকারের দ্বারস্থ হতে হয় না। সরকারের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করার লাভ-ক্ষতি এখনই বিবেচনা করা যাচ্ছে না। সেটা বুঝতে হলে আর একটু সময়ের দরকার।
যেকোন মুল্যে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত: শায়েখ নেছার আহমদ নাছিরী
চেয়ারম্যান, মারকাজুত তাহফিজ ফাউন্ডেশন
আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে যে কোনো মূল্যে ঈদের পরে যেন মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর যে সমস্ত শিক্ষকরা সাময়িক অসুবিধায় আছেন তাদের সহযোগিতায় সকলের এগিয়ে আসা উচিত। সরকার এগিয়ে আসতে পারে, শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ভূমিকা রাখতে পারে, আমরাও ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা একটা কথায় গুরুত্ব দিয়ে বলবো যে কোনো মূল্যে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত!
আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী নিজের আশপাশের মাদ্রাসাগুলোতে যাচ্ছি। খোঁজখবর নিচ্ছি। আমার মনে হয় শিক্ষকদের সহযোগিতায় সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত
এখন অনুদান গ্রহণ করলে আগামীতেও এমন দাবি উঠতে পারে: মাওলনা এহসানুল হক
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
করোনাকালীন সংকট দূর করতে সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিচ্ছে। কওমি মাদরাসাগুলোও সরকারী অনুদান গ্রহণ করবে কিনা এটা নিয়ে যখন আলাপ আলোচনা চলছে- এমন সময় খবর এলো সারা দেশের প্রায় সাত হাজার মাদরাসায় ৮ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা সরকারী অনুদান যাচ্ছে।
মাদরাসাগুলোর আর্থিক সহযোগীতা এখন অনেক প্রয়োজন। তবুও আমি মনে করি সরকারী অনুদান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটা কওমি মাদরাসার আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সরকারী অনুদান গ্রহণ না করার ব্যাপারে কওমি মাদরাসাগুলো বদ্ধপরিকর। আদর্শিক এই জায়গা থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।
আমাদের মনে রাখতে হবে, কওমি মাদরাসাগুলোতে আর্থিক সংকট কিন্তু নতুন কিছু নয়। বর্তমান সময়ের এই সংকট নিঃসন্দেহে অন্য যে কোন সময় থেকে বেশি তবুও এখন যদি বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারী অনুদান গ্রহণ করা হয়, তাহলে ভবিষতে কারণে-অকারণে এধরনের দাবি উঠতে থাকবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুদানের পরিমান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে এটা দুঃখজনক। টাকার পরিমাণ কম দেখে সমালোচনা হচ্ছে, তাহলে কি পরিমান বেশি হলে আমরা খুশি হতাম? কখনোই না। তাহলে পরিমাণ নিয়ে সমালোচনা কেন?
ব্যক্তিগতভাবে কেউ সরকারী সহযোগীতা গ্রহণ করাটা সবার জন্য দলিল হতে পারে না। আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা সরকারকে টেক্স দেই। সরকারের পানি, বিদুৎ, গ্যাস করি। সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্য সবাই সরকারের যে সহযোগীতা পাবে আমাদের সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধা নেই। তবে একজন অসহায় কওমি মাদরাসা শিক্ষক হিসেবে সরকারের অনুদান চাই না।
অনুদান গ্রহণ না করাকে আমি মনে করি চিন্তার অপরিপক্কতা: মুমিনুল ইসলাম
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমাদ মাদরাসা মানিকনগর
সরকারি অনুদান গ্রহণ না করাকে আমি মনে করি চিন্তার অপরিপক্কতা। আসলে সরকার কার অর্থ অনুদান দিবেন আমাদের? অবশ্যই জনগণের টাকা যা আমরা এতদিন ট্যাক্স হিসেবে পরিশোধ করতাম।
তাহলে কওমি মাদরাসা গুলো কাদের অনুদানের চলে? জনগণের! তাহলে টাকার উৎসতে কোন পার্থক্য নেই। তবুও যদি আমরা সরাসরি ভাবে অনুদান নিতে ইচ্ছুক না হই তাহলে আমরা সুদ মুক্ত ঋণের দাবি জানতে পারি সরকারের কাছে।
কারণ বেফাকের অনুদান তহবিল থেকে ২ লক্ষ শিক্ষকদের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়! সবার মতের উপর শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি বলতে চাই, দেশে এই জরুরি অবস্থার কথা চিন্তা করে।
আমি মনে করি সরকারী অনুদান গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং উসুলে হাসতেগানার এই বিভাগটি নিয়ে আরো আলোচনা করা যেতে পারে।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম