মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী
মুহতামিম- বড় কাটারা মাদরাসা ঢাকা।
বালা-মসিবত, পরীক্ষায় পড়ে সবর করা অথবা নিরাপদে থেকে নেয়ামত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করা। ইসলামে উভয়টির ফজিলত রয়েছে। উভয় মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। চূড়ান্ত সফলতা লাভ করা যায়। তবে অধিক উত্তম কোনটি?
সবর বা ধৈর্য ধারণ করা আকীদার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনে বিপদ-মুসিবত নেমে আসলে অস্থিরতা প্রকাশ করা বড়যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশা করতে হবে। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নব্বই স্থানে সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “সবর হল জ্যোতি।” (মুসনাদ আহমদ ও মুসলিম)
উমর রা. বলেন “সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি।” (বুখারী)
আলী রা. বলেন: “ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উদাহরণ হল দেহের মধ্যে মাথার মত।” এরপর আওয়াজ উঁচু করে বললেন, “যার ধৈর্য নাই তার ঈমান নাই।”
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেন নি।” [সুনান আবু দাঊদ, অনুচ্ছেদ: নিষ্কলুষ থাকা। সহীহ]
সবরের প্রকারভেদ: সবর তিন প্রকার: ১) আল্লাহর আদেশের উপর সবর করা। ২) আল্লাহর নিষেধের উপর সবর করা। ৩) বিপদাপদে সবর করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।” [সূরা তাগাবুনঃ ১১]
আলকামা বলেন, “আল্লাহ তায়ালা ‘যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন’ সে হল ঐ ব্যক্তি যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”
আফিয়াত বা নিরাপত্তা: সবরের এ ফযিলতের দিকে তাকিয়ে কেউ আবার বিপদ চেয়ে বসে কি না, হাদীস শরীফে সে বিষয়ে আবার সতর্কও করা হয়েছে। বিপদ তো এক অনাকাক্ষিত বিষয়।
সবরের সওয়াবের কারণে অনাকাক্ষিত বিপদ কাক্ষিত হতে পারে না। মানুষ মাত্রই বিপদ থেকে দূরে থাকতে চায়। বিপদে পড়ে গেলে মুক্তি কামনা করে। আর সচেতন ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিপদের আগেই নিরাপত্তা কামনা করে। এটাই স্বাভাবিক। ইসলামের শিক্ষাও তাই। হাদীসের ভাষ্য- أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَسَلُوا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا.
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,) হে লোকসকল! তোমরা শত্রুর মুখে পড়ার কামনা করো না। বরং আল্লাহর কাছে আফিয়াত ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তবে যখন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে পড়বে তখন সবর করো। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৬৫।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, মুমিনের সকল কাজ বিস্ময়কর, তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, আর এই সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া কেউই লাভ করতে পারে না। দুঃখ-কষ্টে নিমজ্জিত হলে সে সবর করে আর এটা হয় তার জন্য কল্যাণকর। সুখ শান্তি লাভ করলে সে শোকর আদায় করে আর এটাও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। (মুসলিম)।
আমাদের করণীয়: হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উল্লেখিত বিষয়ে বলেন , বিপদে আক্রান্ত হয়ে সবর করার চেয়ে অধিক উত্তম হল, বিপদমুক্ত/ নিরাপদ থেকে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা।
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মতের পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল যে , বালা-মুসিবত হল পরীক্ষা। যেকোনো ব্যক্তির জন্যই পরীক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। পাস ফেলের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষভাবে দুর্বল ঈমান এর লোকদের জন্য। হতে পারে তারা পরীক্ষায় ফেল করতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সব সময় আল্লাহ তাআলার কাছে আফিয়াত চাইতেন। সাহাবায়ে কেরামকে এবং উম্মতকে আফিয়ার চাওয়ার ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন।এবং তিনি সব সময় বালা-মুসিবত থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় কামনা করতেন,পানাহ চাইতেন।
এজন্য বালা-মুসিবতে এই দোয়া করব, আয় আল্লাহ! আমরা দুর্বল বান্দা। আমরা সবরের ফজিলত বিশ্বাস করি কিন্তু সবর করার শক্তি আমাদের নেই।পরীক্ষার শক্তি নাই।আপনি আমাদেরকে পরীক্ষায় না ফেলে নিরাপত্তা দান করুন। আপনার আফিয়াত (নিরাপত্তা) , রহমত দান করুন আমরা আপনার রহমতের ভিখারি।
লিখেছেন: বড় কাটারা মাদ্রাসা, চকবাজার, ঢাকা। খতিব-উর্দ্দু রোডস্থ মির্জ্জা মান্না দেউরী জামে মসজিদ।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম