ফরহাদ খান নাঈম।।
সুধারণা পোষণে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। এটি অন্যের ব্যাপারে কুধারণা করা থেকে বিরত করে হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। হৃদয় থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অন্যের ব্যাপারে সুধারণা পোষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা অন্যের ব্যাপারে কুধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ কুধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। তোমরা একে অন্যের প্রতি অনুসন্ধিৎসু হয়ো না, অন্যের সাথে পাল্লা দিও না, কারো সাথে হিংসা করো না, অন্যকে ঘৃণা করো না, কাউকে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করো না। তোমরা অন্যের ব্যাপারে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব পোষণপূর্বক আল্লাহ তা'য়ালার (সত্যিকারের) বান্দায় পরিণত হও।
রাসুলুল্লাহ সা. এর শেখানো এই চমৎকার জীবনদর্শন অনুসরণ করলে সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ-শত্রুতা থাকা সম্ভব নয়। ফলে সমাজে বিরাজ করবে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন।
অন্যের প্রতি সুধারণা পোষণে ইসলাম বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। নিম্নে এবিষয়ে আলোকপাত করা হলো- নিজেকে অন্যের স্থানে কল্পনা করা।
কেউ কারো সাথে অসংলগ্ন আচরণ করলে তার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করার পূর্বে নিজেকে তার স্থানে কল্পনা করা উচিত। এতে করে অজ্ঞতাবশত অন্যের ব্যাপারে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বাঁচা যাবে।
এ ব্যাপারে ইফকের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি? সূরা নূর: ১২
অন্যের কথাকে সর্বোত্তম পন্থায় বিশ্লেষণ করা এমনটাই ছিলো আমাদের পূর্বসূরিদের অভ্যাস। উমর রা. বলেন, অন্যের কথাকে যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তমরূপে বিশ্লেষণ করা যায়, ততক্ষন পর্যন্ত তার ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করবে না।
অন্যের কথাকে উত্তমরূপে বিশ্লেষণ করা না গেলেও তার প্রতি কুধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটাই হলো প্রকৃত ভ্রাতৃত্বচেতনা।
দুর্ব্যবহারের কারণ খোঁজ করা কারো আচরণে দুঃখ পেলে তার ব্যাপারে বিরূপ ধারণা পোষণ করার আগে তার এই আচরণের পেছনে কারণ খুঁজতে হবে। এতে করে তার দুর্ব্যবহারের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ইবনে সিরীন রহ. বলেন, যদি তোমার কোনো ভাই তোমার সাথে অসদাচরণ করে, তাহলে এর পেছনে কারণ খোঁজ করো। কোনো কারণ খুঁজে না পেলে মনে করবে, যদিও আমি খুঁজে পাইনি, তবুও তার এই অসদাচরণের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
অন্যের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিউত্তর করার পূর্বে এর পেছনে থাকা কারণ খুঁজে বের করা উচিৎ। এতে করে কারো ব্যাপারে কুধারণা পোষণ থেকে বাঁচা যাবে।
অন্যের অভিপ্রায় যাচাই করা থেকে বিরত থাকা: এটি অন্যের ব্যাপারে সুধারণা অক্ষত রাখার একটি অন্যতম উপায়। কারো নিয়ত কিংবা অভিপ্রায় যাচাই করার দায়িত্ব আল্লাহ তা'য়ালার। আল্লাহ তা'য়ালা কোনো মানুষকে অপরের নিয়ত যাচাই করতে আদেশ করেননি।
কারো কথা কিংবা কাজে তার অভিসন্ধি যাচাই না করে বরং তার স্বাভাবিক উদ্দেশ্যটিই গ্রহণ করা উচিত।
কুধারণা পোষণের ক্ষতিকর দিকগুলো জানা: অন্যের ব্যাপারে কুধারণা রাখলে সর্বপ্রথম আত্মার প্রশান্তি বিনষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত সমাজের লোকেরা তাকে ঘৃণা করে। এমনকি নিজের নিকটতম প্রতিবেশীও দূরে সরে যায়।
অন্যের প্রতি কুধারণা পোষণের একটি অন্যতম কারণ হলো নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করা। যে নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করে, সে সকল ভুলের জন্য সর্বদা অন্যকেই দায়ী করে। অথচ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, فلا تزكوا أنفسكم আর তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। সূরা নাজম: ৩২
উক্ত আয়াতে নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে বিবেচনা করে আত্মপ্রশংসায় লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে। সর্বোপরি অন্যের প্রতি সুধারণা পোষণ করার জন্য প্রয়োজন আত্মার প্রশিক্ষণ। মনে রাখতে হবে, মু'মিনের ঐক্যে ফাটল ধরাতে শয়তান সর্বদা সচেষ্ট থাকে। শয়তানের এই অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে হৃদয়ে অন্যের প্রতি সুধারণা লালন করার কোনো বিকল্প নেই।
ইসলামওয়েব.নেট থেকে অনুদিত।
-এটি