সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আদমপুর পাহাড়ে একদিন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম:
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>

(আওয়ার ইসলাম) চলছে রোযার মাস। তাই বলে কি ঘুরে বেড়ানো থেমে থাকবে? ভ্রমণ যাদের নেশা তাদেরকে ঘরে আটকে রাখা কিন্তু অসম্ভব। তবে করোনা ভাইরাসে কারণে ইদানিং এক মাস যাবৎ বাসা থেকে বের হয়নি, আজ ২য় রমজান,সকালে আকাশের মেঘ নেই, এরকম একটি দিনে কেমন জানি বন্ধু আনোয়ারকে ফোন দিলাম, সাথে সাথে চলে এলো হঠাৎ আড্ডা থেকেই শুরু হয় আদমপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত।

সিদ্ধান্তটা ছিল মাত্র পাঁচ মিনিটের। যেই কথা, সেই কাজ। বাইক নিয়ে রাওন পথে বন্ধু মুন্না কে নক করলাম সেও চলে এলো..আমরা আদমপুরের কোনাগাঁও (খিল) গ্রামের হারুন বাড়িতে পৌছে যায় তারপর সেখানে ফ্রেশ হয়ে বাইক রেখে কিছু সময় বিশ্রাম করে রওনা হলাম পাহাড়ের পথে।

গ্রাম থেকে দূরের কোলাহলমুক্ত নির্জনতা, চারদিকে সবুজ গাছপালা, মাঝে মাঝে পশু-পাখির ডাক আর শীতল বাতাস। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি আপনাকে দেবে এক পাহাড়সম মানসিক প্রশান্তি। হ্যাঁ, বলছিলাম সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আদমপুর বিট এর কথা।

স্থানীয়দের কাছে এ বনটি কাউয়ারগলা বিট নামেই বেশি পরিচিত। রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চারটি বিটের মধ্যে আদমপুর সবচেয়ে বড়। আয়তনে এটি প্রায় ১৩ হাজার ৮০ একর প্রায়। সীমান্ত ঘেঁষা এ জঙ্গলের পরেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।

দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম কাউয়ারগলা পাহাড়ের পাদদেশে। এ দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনে হলো আদমপুর বন বেশ নির্জন। মানুষের আনাগোনাও খুবই কম। বনের পাশেই কিছুদূরে মানুষ আছে এখানকার মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে বনে যায়। জঙ্গল ভ্রমণের ফাঁকে ঢুঁ মারতে পারেন এই জায়গায়। এছাড়া আদমপুর বনের আগে সড়কের দুইপাশে আছে অনেক আগর বাগান।

রাস্তার দুই দিকেই বিভিন্ন ধরনের অনেক গাছপালা আপনার নজর কাড়বে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারলাম, এই ছোট্ট এলাকায় সাঙাইশাবী নামে একটি গ্রাম আছে।

বেশিরভাগই উঁচুনিচু টিলা জুড়ে আদমপুরের জঙ্গল। বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। কোথাও কোথাও দুই টিলার মাঝখান থেকেই চলে গেছে পথ। চলতে চলতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। আরও আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি।

কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম সাঙাইশাবী গ্রামের দিকে। এই বনের ভেতরেই আছে বড় বড় বাঁশ মহাল। মুলি, মিটিঙ্গা, ডলু, রূপাই জাতের বাঁশ এ বনে বেশি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়াপথে এ বনের বাঁশ নামানো হয়। স্থানীয় এই মুন্না ও হারুন কাছ থেকে জানতে পারলাম এইসব কথা।

সাঙাইশাবী গ্রামের পৌছে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই, সেখানে একটি প্রাথমিক স্কুল ও মসজিদ রয়েছে। গ্রামের মানুষ করোনা ভাইরাসে এই সময়ে খুব কষ্টে জীবন কাটাছে, স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছ, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ার প্রায় একমাসেও এ দুর্গম এলাকায় এখনো পৌঁছেনি সরকারি বা বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা।

যেখানে ত্রাণ পৌঁছেছে সেখানেও তাতে আয় রোজগারহীন এই অচলাবস্থায় খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গহীন পাহাড়ের হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষগুলো। একদিকে গ্রাম আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে আবার টিলায় মানুষের বাড়িঘর। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে যাবে চোখ।

-এ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ