ফরহাদ খান নাঈম।।
মানুষের যা কিছু আছে তাই নিয়েই যদি সে সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তাহলে আক্ষরিক অর্থে কোনো দরিদ্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তা'য়ালা তাকে যা দিয়েছেন, তাই নিয়েই যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তাকে আর অন্য কারো মুখাপেক্ষী হতে হয় না, যদিওবা এই দুনিয়াতে তার বেশি কিছু না থাকে।
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, আমি জানি, অল্পেতুষ্টি হলো ধনাঢ্যতার মূল। আর এটি অনুসরণ করার কারণে আমাকে কখনোই সাহায্যের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়নি। ফলে কোনো দিরহাম ছাড়াই আমি রাজার মতো চলতে পারতাম।
রাসুলুল্লাহ সা. অল্পেতুষ্টির উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তা'য়ালা যা দিয়েছেন তাই নিয়েই যদি তুমি সন্তুষ্ট থাকতে পারো, তাহলে তুমিই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী।
তিনি সা. আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করতেন, اللَّهُمَ قَنِّعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي، وَبَارِكْ لي فِيهِ، وَاخْلُفْ عَلَيَّ كُلَّ غَائِبَةٍ لِي بِخَيْرٍ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাই নিয়ে যেনো আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারি, এবং এতে আমাকে বরকত দান করুন ও আমি যা হারিয়েছি, তার বিনিময়ে আপনি আমাকে উত্তম জিনিস দান করুন।
পরশ্রীকাতরতা বর্জন করে আল্লাহ প্রদত্ত যা কিছু আছে তাই নিয়েই যদি কেউ সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তাহলে সে আত্মায় পরম প্রশান্তি লাভ করবে। ফলশ্রুতিতে সে আল্লাহ তা'য়ালার প্রিয়ভাজনে পরিণত হবে।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, পার্থিব জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা তোমাকে ভালোবাসবেন। অন্যের যা আছে তা কামনা করো না, তাহলে মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।
তাছাড়া অল্পেতুষ্টির বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে না পারলে, আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সা. আবু হুরায়রা রা. কে সম্বোধন করে বলেছেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি তাক্বওয়া অর্জন করো, তবে তুমিই হবে সর্বাধিক ইবাদাতকারী; অল্পে তুষ্ট থাকো, তবে তুমিই হবে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ বান্দা; তুমি তোমার নিজের জন্য যা ভালোবাসো, তা অন্যের জন্যও ভালোবাসো, তবে তুমি একজন সত্যিকারের মু'মিন হতে পারবে।
অল্পে তুষ্ট ব্যক্তির রয়েছে এক মহৎ অন্তকরণ; কেননা সে ধ্বংসোন্মুখ পৃথিবীর তুচ্ছ ধন-সম্পদের পেছনে ছোটে না। এধরনের লোকদেরকে আল্লাহ তা'য়ালা ভালোবাসেন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, (এ দান) আল্লাহ তায়ালার পথে নিযুক্ত দরিদ্রদের জন্য, যারা জীবিকার সন্ধানে চলতে পারে না, তারা (অন্যের নিকট) হাত পাতে না বলে অজ্ঞরা তাদেরকে ধনী মনে করে; আপনি তাদের লক্ষণ দ্বারা তাদেরকে চিনতে পারবেন। তারা সচরাচর মানুষের কাছে হাত পাতে না। সূরা বাকারা: ২৭৩।
অল্পে তুষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, সে ব্যক্তি সফল যে ইসলামকে গ্রহণ করেছে, প্রয়োজনানুপাতে রিজিক লাভ করেছে, এবং যাকে আল্লাহ তা'য়ালা পরিতুষ্টি দান করেছেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, লোভই হলো প্রকৃত দারিদ্র্য, আর পরশ্রীবিমুখতাই হলো প্রকৃত ধনাঢ্য।
ليس الغِنى عن كثرة العَرَض ولكن الغِنى غِنى النفس
সম্পদের আধিক্য প্রকৃত ঐশ্বর্য নয়; বরং প্রকৃত ঐশ্বর্য হলো আত্মার ঐশ্বর্য।
ওআাই/আবদুল্লাহ তামিম