জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী নানা সময়ে ছিলেন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বয়ানের সৌন্দর্য ও সুস্পষ্ট ভাষায় মানুষ যেমন মুগ্ধ হয়েছে, ঠিক তেমনি ভাবে কয়েকটি মাসালাকে কেন্দ্র করে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন সমালোচনাও।
দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইসলামি স্কলার দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত। সেখান থেকে মাঝে মাঝে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন। এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য দিকনির্দেশনা পাঠান।
সে নিয়ম অনুযায়ী গতকাল রাতে ফেসবুক লাইভে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন সময়ে কোন এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া যাবে। যেহেতু এটি সুন্নত না নফল। যদিও এ বিষয়টি অপছন্দনীয়। কিন্তু আম্মাজান আয়েশার রা. দাস এমনটি করেছেন যা হাদিসে প্রমাণিত।
বাংলাদেশে ফিকহে হানাফী প্রচলিত থাকায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। আবার অনেকে পক্ষে মতামত পেশ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম ও ফকিহ শায়েখ আহমাদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় আওয়ার ইসলামের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মাওলানা সুফিয়ান ফারাবীর।
নামাজের ভিতরে কুরআন দেখে পড়ার বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
আসলে বিষয়টি ফিকহি মতপার্থক্য পূর্ণ বিষয়। বিষয়টি এভাবে বললে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হয়তো মালয়েশিয়াতে আছেন। সেখানে হয়তো কিছু কিছু মানুষদেরকে এমনটি করতে দেখেন। এছাড়াও সৌদি আরবের কিছু কিছু মসজিদেও প্রচলিত আছে। তারা একজন সাহাবির হাদিসকে দলিল দিয়ে এমনটি করে থাকেন।
আমাদের দেশের অডিয়েন্সদের কাছে এরকম ভিন্ন কোন মত বললে অবশ্যই সেটার পূর্বে
শিংহভাগ ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত মত, যেটাকে স্থানীয় সকল ওলামা কেরাম গ্রহণ করেছেন সেটাকে আগে উল্লেখ করে পর্যালোচনার পর আর একটি মত হিসেবে এটিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
ভিন্ন হিসেবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটাকে সমাধান হিসেবে উল্লেখ করা ঠিক হবে না। কারণ আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ একটি মত অনুসরণ করে। এখানে সমাধান হিসেবে ভিন্ন পথ বা মত উল্লেখ করলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
এক্ষেত্রে আরবের আলেমদের মতামত কী?
শাইখ আহমাদুল্লাহ: আরবের ওলামায়ে কেরাম এটাকে জায়েয মনে করেন। কিছু কিছু মসজিদের ইমাম সাহেবরা উক্ত হাদীসের উপর আমল করেন। কিন্তু আমরা যদি কিবারে ওলামায়ে আরবদের দেখি, তাহলে দেখব তারা বিষয়টিকে জায়েজ ফতোয়া দিলেও অপছন্দ করেন এবং নিরুৎসাহিত করেন। সচরাচর এবিষয়টি দেখা যায় না।
এজন্য এ বিষয়ে ঢালাওভাবে কোন প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া মতামত প্রকাশ করা উচিত নয়।
এ ধরনের মতবিরোধপূর্ণ মাসালাগুলো বর্ণনা করার আদর্শ পদ্ধতি কী হতে পারে?
শাইখ আহমাদুল্লাহ: মতবিরোধপূর্ণ মাসালা যে দেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলা হবে সে দেশের অধিকাংশ মানুষ যে মতটি অনুসরণ করেন সেই মতটি আলোচনা করে তারপর মতবিরোধপূর্ণ মাসআলাগুলো উপস্থাপনা করতে পারেন।
একটি দেশের যদি দু'তিন ধরনের মাসালা প্রচলিত থাকে সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ যেটি ফলো করে সেটিকে বর্ণনা করে তারপর অন্যান্য মতামত বর্ণনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও এটি সুস্পষ্ট হওয়া উচিত।
এক দেশে কোন একটি ফিকাহ প্রচলিত আছে। সেখানে ঢালাওভাবে বিপরীত মাসালা বলে চলে যাওয়া খুবই মুশকিল।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম