সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ বিবাহ একটি ইবাদত, এর পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি নারী অধিকার কমিশনের সুপারিশে আলেম প্রজন্ম-২৪-এর আপত্তি  জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি: মির্জা ফখরুল নারীবিষয়ক সুপারিশগুলো কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: জামায়াত আমির ‘১৬ বছরের জঞ্জাল দূর না করে নির্বাচন দিলে সমস্যা সমাধান হবে না’  প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা সরকারি নিবন্ধন পেল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কলরব’ ‘সিরাহ মিউজিয়াম’ চালু করছেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী মহাসমাবেশ সফল করতে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে হেফাজত

আত্মসাৎ কোনো মুসলিমের সঙ্গে যায় না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।

আখেরাত যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে সে ব্যক্তি মুমিন। আর মুমিন কখনও আমানত আত্মসাৎ করতে পারে না। কেননা আমানতদারীর ওপর আমল করাও ঈমানের অংশ। নবী কারিম (সা.) বাহ্যত নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে সবার মাঝে সাদিক সত্যবাদী ও আমানদার উপাধীতে সুপরিচিত ছিলেন।

বর্তমানেও এই উপাধী পবিত্র মদিনা শরিফের জালে লেখা আছে। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলে আকরাম আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি, যার আমানত নেই তার ঈমানও নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দ্বীনও নেই।’-(মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২৫৬৭, মিশকাত, হাদিস ৩৫)। যেন ঈমানের আবশ্যিক দাবি হলো মানুষ বিশ্বস্ত হওয়া।

আমানত আত্মসাৎ না করা। আরবি ভাষায় আমানত শব্দের অর্থ হলো কোন বিষয়ে কারও ওপর ভরসা করা। আমানত আত্মসাৎ করা হাদিসে মুনাফিকের আলামত বলা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, হজরত নবী কারিম (সা.) বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে পাক্কা মুনাফিক এবং যার মধ্যে তার একটি থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে- ১. যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয় সে তাতে খেয়ানত করে, ২. সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, ৩. যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে এবং ৪. যখন কারও সাথে ঝগড়া করে, তখন সে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে।’-(সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০৬)।

হাদিসটি দ্বারা পরিস্কার বুঝা গেলো যে, কেউ অন্যকে কোনো কাজ, কোন বস্তু, কোনো সম্পদ দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে এ ভেবে বসে থাকে যে ঐ লোক সঠিকভাবে দায়িত্ব আদায় করবে। অবহেলা বা কোনো রকম ত্রæটি করবে না। এটাই আমানতের মর্মকথা। আমানতের এই মর্মকে সামনে রাখা হলে অসংখ্য বিষয় এতে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে। বর্তমানকালে আমানতের এই মর্মকে খুব সীমিত মনে করা হয়।

আমাদের মন-মস্তিষ্কে আমানতের কল্পনা হলো, ‘কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে এসে বললো এই টাকাগুলো আপনার কাছে আমানতস্বরূপ রেখে দিন। যখন প্রয়োজন হবে তখন আপনার কাছ থেকে নিয়ে নেবো।’ আমানত এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। আমানতের মর্মার্থ অনেক ব্যাপক। অনেক জিনিস আমানতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

যে বিষয়গুলো আমাদের মাথায়ও আসে না। জমা রাখা টাকা-পয়সার সংরক্ষণ করা এবং হুবহু টাকাগুলো এ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া, মানুষের ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করা, কারো হক বাকি থাকলে পরিশোধ করা, কারো হক নষ্ট না করা, ধোঁকা না দেয়া, কারো জমা রাখা সম্পদ আটকিয়ে না রাখা, চাকরির টিউটি আদায় না করা, কারও গোপন কথা জানা থাকলে অন্য কাউকে না বলা ইত্যাদি এ সব বিষয় আমানতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

আত্মসাৎ অনেক বড় অপরাধ। এতে অনেক বড় গোনাহ। সত্যিকার মুমিন তো তিনিই যিনি আমানতের কোনো সেক্টরে কোনো রকমের আঁচ লাগতে দিবেন না। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! খেয়ানত করো না আল্লাহর সাথে ও রাসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে।’-(সূরা আনফাল, আয়াত ২৭)।

যারা আমানত রক্ষা করে না তারা মুনাফিক। মুনাফিকদের ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিংসন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে দোজখের সর্বনিম্ন স্তরে।’-(সূরা নিসা, আয়াত ১৪৫)।

এ বিষয়ে কুরআনের অনেক আয়াত এবং অসংখ্য হাদিস হাদিসে ভাণ্ডারে বিদ্যমান। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মানুষ জিহাদ করতে করতে আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হয়ে যাবে, তার সকল গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু আমানত পরিশোধে ত্রুটি করে থাকলে এই শাহাদাতবরণ তার গোনাহ মাফের কারণ হবে না।

আমানত আত্মসাৎ করা হারাম। আত্মসাৎকারী লোক বাহ্যত আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হলেও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এ মর্মে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, খাইবার যুদ্ধের দিন নবী (সা.)-এর ক’জন সাহাবি এসে বলতে লাগলেন, অমুক অমুক শহিদ হয়ে গেছেন। অবশেষে তাঁরা আর একজন লোকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, অমুকও শহিদ হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: কখনো নয়। সে একখানা চাদর অথবা (বলেছেন) একটি জুব্বা যুদ্ধ-লব্ধ মাল থেকে আত্মসাৎ করার দরুণ আমি তাকে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে দেখতে পেয়েছি। দেখুন নবীর একজন সাহাবির ব্যাপারেও কত কঠোর বিধান ঘোষিত হয়েছে।

তাই আসুন আমরা আমানত যথাযথ আদায়ের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। আত্মসাতের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকি। তাহলেই আমাদের সমাজ হবে সুন্দরম, মদিরম, মনোরম।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ