সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


যে কারণে ইসলামে বিলম্বিত বিবাহ নিষেধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া ইসলামে বিলম্বিত বিবাহ নিষেধ। উপযুক্ত বয়সে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছে পোষণ করে, তখন অন্য পক্ষ থেকে এতে বাঁধা দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।

ছেলে-মেয়ে বিবাহের বয়সে উপনীত হওয়ার সাথে সাথেই তাদেরকে বিবাহ দিয়ে দেওয়া প্রত্যেক মুসলমান অভিভাবকের জন্য অপরিহার্য। ইসলামে ছেলে-মেয়েকে সময়মতো বিবাহ দেওয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম প্রত্যেক নর-নারীকে যথাসময়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সুন্দর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আদেশ করেছে। এই হালাল এবং বরকতময় বন্ধনে অযথা বিলম্ব করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

ইসলামে বিলম্বিত বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়ে জিম্বাবুয়ের গ্রান্ড মুফতি শাইখ ইসমাইল মেঙ্ক'র বক্তব্যটি অত্যন্ত চমৎকার।

মুফতি মেঙ্ক বলেন, বিলম্বে বিবাহ করা আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারায় পরিণত হয়েছে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মানে এই নয় যে, স্ত্রীকে অবশ্যই স্বামীর সাথে থাকতে হবে। বরং বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর স্বামী-স্ত্রী চাইলে যে যার বাসায় অবস্থান করতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে আয়ের উৎস তৈরি করে স্বামী স্বাবলম্বী হতে পারে এবং স্ত্রীও চাইলে নিজ বাসায় থেকে তার অবশিষ্ট পড়াশোনা শেষ করতে পারে।

ইসলাম আমাদেরকে এই সুযোগটি দিয়েছে। এতে করে ছেলে-মেয়ে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। এবং বিবাহের পর নিজেরা একান্তে মিলিত হলেও গুনাহ হবে না।

কিন্তু উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়ার পরও ছেলের নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং মেয়ের পড়াশোনা শেষ করার অজুহাতে বিবাহে বিলম্ব করা অনুচিত। অন্যথায় তাদের বিবাহবহির্ভূত অবৈধ মেলামেশার কারণে তারা গুনাহগার হবে, এবং যথাসময়ে বিবাহ না দেওয়ার অপরাধে তাদের এই গুনাহের একটি অংশ অভিভাবকদের উপরও বর্তাবে।

মুফতি মেঙ্ক আরও বলেন, আমাদের সমাজে বিয়ে নিয়ে প্রচলিত বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় রেওয়াজ বিলম্বিত বিবাহের জন্য প্রধানত দায়ী। এ সমস্ত রেওয়াজ কিংবা সংস্কৃতির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

পাত্রের ভালো কোনো চাকরি না থাকা কিংবা পাত্রীর বিশেষ কোনো শিক্ষাগত ডিগ্রী না থাকা বিবাহবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা হয়। প্রকৃতপক্ষে বিবাহের সাথে ভালো চাকরি কিংবা উচ্চ ডিগ্রী অর্জনের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সমাজকে ভয় না করে বরং আল্লাহকে ভয় করা উচিত।

তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক কোনো ডিগ্রীর উপর নির্ভর করে না। সত্যিকারের সুখী দাম্পত্য জীবন তো তাদের যারা একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে। স্ত্রীর কাছে স্বামীর পরিচয় কোনো ডা. - ইঞ্জিনিয়ার নয়; বরং ইসলামে স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের পোশাক বলা হয়েছে। যেখানে ডিগ্রী কিংবা অর্থনৈতিক কোনো পার্থক্য নেই।

বিবাহের ক্ষেত্রে ধর্মীয় মানদণ্ড অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সা. বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রের দ্বীনদারিয়্যাত দেখতে বলেছেন। দ্বীন ঠিক থাকলে বিবাহের জন্য ওই পাত্রই উপযুক্ত। চাকরি কিংবা ব্যবসাকে দ্বীনদারিয়্যাতের উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তা'য়ালার উপর। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
إن يكونوا فقراء يغنهم الله من فضله

অর্থাৎ "যদি তারা দরিদ্র হয়, আল্লাহ তা'য়ালা নিজ দয়ায় তাদেরকে ধনী বানিয়ে দেবেন।"

বিবাহের জন্য ধনী পাত্রের চেয়ে দরিদ্র হলেও সচ্চরিত্রবান পাত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলে উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ তা'য়ালাই তাদেরকে ধনী বানিয়ে দেবেন।

সালাতের সময় হয়ে গেলে যেমন দেরি না করে সালাত আদায় করে নিতে হয়, জানাজাহ সামনে আনা হলে যেমনিভাবে বিলম্ব না করে সালাতুল জানাজাহ আদায় করে নিতে হবে, তেমনিভাবে ছেলে-মেয়ের বিবাহের সময় (বয়স) হয়ে গেলেও কালবিলম্ব না করে যথাসময়ে তাদেরকে বিবাহ দিয়ে দেওয়া উচিত।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ