আল্লামা আশরাফ আলী নিজামপুরী।।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে আজ সারা পৃথিবী আতঙ্কিত, ক্ষতিগ্রস্ত। সারা পৃথিবীর সামরিক শক্তিধর আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ইতালি, স্পেন এবং তাদের সকল সামরিক শক্তি ছোট্ট একটি করোনা ভাইরাসের কাছে অসহায়।
এ লেখা তৈরীর সময় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে বর্তমান পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। আমাদের বাংলাদেশে সরকারি হিসাবমতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২১৮, মৃত্যুর সংখ্যা ২১ জন।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ভাষ্যমতে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মাত্র শুরু। বাংলাদেশ কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, কী পরিমাণ মানুষ মারা যেতে পারে, বাংলাদেশ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে- তা জানার জন্য আরো দু সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় হল, আমরা আমাদের নিজ নিজ ঘরকে ইবাদতগাহে পরিণত করি এবং কোরআনের ঘরে রূপান্তরিত করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদের স্থলে নিজগৃহে আদায় করি এবং সর্বাবস্থায় ঘরে বসে নিম্নোক্ত দোয়া বেশি বেশি করে পাঠ করি।
حسبنا الله ونعم الوكيل، نعم المولى ونعم النصير (হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল, নি'মাল মাওলা ওয়া নি'মান নাসীর)
আতঙ্কিত না হয়ে এ কথা বিশ্বাস করি যে, হায়াত-মওতের মালিক একমাত্র আল্লাহ।আমার হায়াত যদি থাকে করোনাভাইরাস আমাকে কিছুই করতে পারবে না। আর করোনাভাইরাসে যদি আমার মৃত্যু অবধারিত হয়, তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তি আমাকে রক্ষা করতে পারবে না- এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করে যদি করোনা ভাইরাসে আমার মৃত্যু হয়, মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। المطعون شهيد
মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যায় তারা নিঃসন্দেহে শহিদ।
তবে মনে রাখতে হবে দুনিয়া দারুল আসবাব। চিকিৎসা নেয়া, সর্তকতা অবলম্বন করা আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা, যেকোনো ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলা, হাঁচি ও কাশির সময় মুখমন্ডল ঢেকে রাখা, ঔষধ ব্যবহার করা শরীয়ত পরিপন্থী নয়; বরং এ সকল সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে শরীয়তসম্মত।
ইতোপূর্বে সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত 'রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত' হওয়ার কারণে আমরা মানতে পারিনি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের সিদ্ধান্তসমূহ নিজের স্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে নয়; বরং দেশের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে।
মসজিদে নামাজ আদায়, জুমার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তে ঈমানদারদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে এ ব্যাপারে কিছুই করার নেই।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। বাংলাদেশে প্রায় ৫ লক্ষ মসজিদ। মসজিদে আজান-ইকামত, জামাত হবে। জামাতের সময় মসজিদ খোলা থাকবে। মসজিদের ইমাম, মুআজ্জিন, খাদেম, মুতাওয়াল্লি, সাধারণ মুসল্লিদের মসজিদে আসতে বাধা দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। সাধারণ মুসল্লিদের বাধা দেয়ার কাজ প্রশাসনকেই করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম সহযোগী।
লেখক, সিনিয়র মুহাদ্দিস, দারুল উলুম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
-এটি