মানবতার কল্যাণে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে একঝাঁক তরুণ আলেমের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘ইকরামুল মুসলিমিন ফাউন্ডেশন’। দেশ জাতি ও সামাজের দুস্থ গরিব এতিম সুবিধাবঞ্চিতদের মানবিক সেবাপ্রদানে এক বৃহৎ ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে এই ফাউন্ডেশনটি। এটি সামাজিক ও দীনি সেবামূলক একটি সংগঠন। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মতো মহামারির আক্রমণে অসহায় পড়েছে মানুষ। আমাদের দেশের চিত্রও একই। এ কঠিন পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ‘ইকরামুল মুসলিমিন ফাউন্ডেশন’। তাদের কর্মতৎপরতা নিয়ে কথা হয়েছে ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক, প্রখ্যাত ওয়ায়েজ মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের ডেপুটি এডিটর আবদুল্লাহ তামিম।
আওয়ার ইসলাম: মানবতার সেবায় আপনারা ইকরামুল মুসলিমিন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আপনাদের লক্ষ্যে কতটা সফল? আলেম হিসেবে এ মানবসেবা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ: বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের এই কঠিন মুহূর্তে আমরা ইকরামুল মুসলিমিন ফাউন্ডেশনের ব্যানারে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের লক্ষ্য অনেক বড়। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। একদিন দুই দিনে তো আর লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।
আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে অসহায় দুস্থ গরিবদের সহায়তা দেয়া। বিশেষ করে গরিব বেকার যারা আছে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সমাজের অগণিত অপরিস্ফুট প্রতিভা যারা সুযোগের অভাবে নিজেদের বিকশিত করতে পারছে না, তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। এছাড়াও উঠতি বয়সী এমন অনেক মেধা আছে, যাদের কেউ লেখক হতে আগ্রহী, কেউ আলোচক, কেউ সাংবাদিক; আবার এমন অনেক মেধাবী ছাত্র আছে, যারা সুযোগ খোঁজে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার, কিন্তু যোগাযোগ এবং জানাশোনা না থাকায় কিছুই করে উঠতে পারে না। এমন সব স্বপ্নবান প্রতিভাকে সঠিক কক্ষপথে উঠিয়ে দেয়া। বন্যা, শীত বা শুধু ঈদভিত্তিক সেবা নয়, তারা পরিকল্পিতভাবে সামাজিক ও মানবিক সেবায় নিয়োজিত থাকতে চায়। দাঁড়াতে চায় সকল ধর্ম-মতের অসহায়দের পাশে।
আমাদের মিশনের আরও কিছু মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ইসলাম, দেশ, মানবতাবিরোধী ও সামাজিক-চারিত্রিক অবক্ষয়মূলক সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কার্যকরী শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যৌন হয়রানি, মাদক, শিশু নির্যাতন, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান করা।
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, অভিভাবকহীন নারী ও বৃদ্ধ, সর্বহারা পরিবার এবং অসহায় এতিমদের চিকিৎকসাসহ যাবতীয় সহায়তা ও সেবা প্রদান করা। প্রতিভা বিকাশে সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। উপযুক্ত, অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীল আলেম এবং সুস্থ চিন্তাধারার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে লেখক, ওয়ায়েজ, শিক্ষক, ছাত্র ও ছাত্র রাজনীতিকদের তরবিয়ত এবং কর্মশালার আয়োজন করা।
রাষ্ট্রীয় ও ইসলামিক বিশেষ দিন ও ইস্যুতে সৃজনশীল প্রোগ্রামের আয়োজন করা। পর্যায়ক্রমে সকল জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ‘হৃদ্যতার সংলাপ’ আয়োজন করা। আত্মমর্যাদাশীল গরিব আলেম পরিবারের খোঁজে সফর করা এবং গোপনে সহায়তা প্রদান করা। উলামায়ে কেরামের ঐক্যের লক্ষ্যে কার্যকরী প্রোগ্রাম ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বছরে এক বা একাধিক আলোচনা সভা, সেমিনার, মতবিনিময় সভা ও ইসলামি মহাসম্মেলনের আয়োজন করা।
এর আগে ব্যাপকভাবে অসহায়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার একটি কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা আমাদের এই কর্মসূচি পালন করব।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা দিনমজুর, অসহায়, অসহায় আলেম পরিবার অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সহায়তার একটা কর্মসূচিও হাতে নিয়েছি। তাদের মধ্যে আছে হিজড়া সম্প্রদায়সহ অমুসলিম অসহায় পরিবার। কর্মহীন সুবিধাবঞ্চিত বিধবা এতিম শিশু অসহায় শিশু এদেরকেও সহায়তা প্রদান করে থাকি।
খুব অল্প সময়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলেও আমরা ধীরে ধীরে আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা অসহায়দের লিস্ট করেছি। সে লিস্ট অনুযায়ী আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি।
সচ্ছল ব্যক্তিরা যদি আমাদের সংগঠনের পাশে দাঁড়ায়, অর্থশালীরা যদি এগিয়ে আসে আমরা মনে করি ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। আর মানবসেবার এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
আলেম হিসেবে আসলে আমি বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করি। মূলত মানবসেবা আলেমদেরই কাজ। আমরা শুরু করেছি, আগে ছোট পরিসরে ছিল। আলহামদুল্লিাহ এখন বড় পরিসরে কাজ করছি।
নবী করিম সা. বৃদ্ধ অসহায় গরিব দুঃখী এতিমদের খবর রাখতেন। তাদের সহায়তার প্রতি খেয়াল করতেন। নবীর ওয়ারিস হিসেবে আলেমদের অন্যতম একটি বড় কাজ মানবসেবা। আলেমরা এ কাজে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। এ কাজ আলেমদেরই করতে হবে। আলেমদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে।
আওয়ার ইসলাম: করোনার প্রকোপে স্থবির হয়ে গেছে দেশ। এ কঠিন মুহূর্তে মানবসহায়তায় কী কী উদ্যোগ নিয়েছে ইকরামুল মুসলিমিন।
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ: করোনার এ কঠিন মুহূর্তে আমরা অনেক সহায়তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এরমধ্যে বিধবা, গরিব আলেম পরিবার, অসহায় সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ অসহায়দের মাঝে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করেছি ও করছি। ভূমিহীন ঘরহীন মানুষ, হিজড়া সম্প্রদায় এসব মানুষের লিস্ট তৈরি করেছি বিভিন্ন এলাকার। আর্থশালী হৃদয়বান মানুষদের সহায়তা পেলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি। তাদেরকে ভরপুর সহায়তা দিতে পারবো।
আওয়ার ইসলাম: এ মহান কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ: মানবসাহয়তার ক্ষেত্রে মানবিক বাধা আছে। এটা আমরা সহায়তা করতে বা ত্রাণ বিতরণ করতে না নামলে বুঝতে পারতাম না। গ্রাম অঞ্চলগুলোতে এ পরিমাণ অসহায় মানুষ যা কল্পনাও করা যায় না। দেখা যায় আমরা ১০০ জনকে ত্রাণ সহায়তা করলে আরো একশজন ত্রাণ নেয়ার জন্য ভিড় করে। কিন্তু আমরা তাদের দিতে পারি না। অনেক সময় কাড়াকাড়িও করে। এছাড়া আমাদের কোনো বাধা এখন পর্যন্ত সহায়তা পৌছানোর ক্ষেত্রে আসেনি। বড় ধরনের কোনো বাধার সম্মুখীন হলে অবশ্যই আমরা জানাবো।
আওয়ার ইসলাম: আপনার চোখে দেখা অসহায় মানুষের চিত্র একটু যদি বলতেন। যেন মানুষ এ কাজে এগিয়ে আসে।
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ: আমি গত জুমা মসজিদে আদায় করেছি। পাশে যে লোক নামাজ আদায় করেছেন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এখন তো সব বন্ধ কীভাবে চলছে দিনকাল। তিনি আমার কথা শুনে কেঁদে ফেলছিলেন, বললেন ভ্যান চালাই, এখন তো আর রাস্তায় নামতে পারছি না। খাবো কী? ছেলে সন্তান আছে, তারা তো আর অভাব বুঝে না। তাদের জন্য একটা চকলেট পর্যন্ত নিতে পারছি না। এমন অনেক মানুষের চিত্র আমার চোখে দেখা। আমি এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী।
যে ঘটনাগুলো মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে প্রচুর মানুষ অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। যারা খাবার পাচ্ছে না। সংসার চালাতে পারছে না। ঘরে রান্না হচ্ছে। এ কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যারা যেমন সামর্থ আছে সেভাবেই সহায়তা করা দরকার।
-এটি