আবদুল্লাহ তামিম।।
মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব ইংলিশ লিগে বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে। দিন দিন মুসলিম ফুটবলারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতিও বিকশিত হচ্ছে সমানতালে।
অনুশীলনের সময় মাঠের সবুজ ঘাসে নামাজ পড়ার দৃশ্য কিংবা গোল উদযাপনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সিজদা আদায়ের মতো দৃশ্যগুলো এখন নিয়মিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। গত দুই দশকে ইংলিশ লিগে মুসলিম ফুটবলারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশেরও বেশি।
১৯৯২ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যখন নতুন নামে যাত্রা করে, তখন মোহাম্মদ আলী আমর নাঈম নামের একজন মুসলিম ফুটবলারই ছিল লিগ জুড়ে। স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডার টটেনহ্যামে খেলেছেন ১৯৮৮-৯৩ সালে। তবে শুধু সংখ্যাধিক্য কিংবা দলভারী নয়- মুসলিম খেলোয়াড়রা একেকজন তারকা।
মোহাম্মদ সালাহ, মেসুত ওজিল, পল পগবা নামগুলো এমনই। তারা ফুটবলের একেকটি তারকা নাম। অসংখ্য ভক্ত তাদের। ক্লাব ফুটবলে খেলছেন একই লিগ ইংলিশ প্রিমিয়ারে। এই তিনজনের কথা আলাদা করে বলার কারণ, তিনজনই মুসলিম ফুটবলার।
হ্যাঁ, ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ বলা হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে (ইপিএল)। যেখানে মুসলিম খেলোয়াড়দের একটা আলাদা জায়গা প্রতিষ্ঠিত।
পগবা, ওজিল, সালাহ প্রত্যেকেই খেলছেন বড় ক্লাবে। যথাক্রমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, লিভারপুল। আইকন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপন নৈপুণ্যে।
এদের মধ্যে মিসরিয় ফরোয়ার্ড সালাহর কথা জোর গলায় বলতে হবে। তার চেলসি অধ্যায়টা (২০১৪-১৬) সুখকর ছিলো না। কিন্তু গত বছর লিভারপুলে যোগ দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। একের পর এক গোল করে ও করিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডদের কাতারে। গত জানুয়ারিতে ফিলিপ্পে কুতিনহো বার্সেলোনায় চলে যাওয়ায় অল রেডসদের আস্থার প্রতীক এখন তিনিই।
তবে শুধু সংখ্যাধিক্য কিংবা দলভারী নয়- মুসলিম খেলোয়াড়রা একেকজন তারকা ২০১৬ সালে সে সময়কার রেকর্ড ট্রান্সফার ফি’তে (১০৫ মিলিয়ন ইউরো) জুভেন্টাস (২০১২-১৬) ছেড়ে ম্যানইউতে ফেরেন পগবা। বলা চলে, রেড ডেভিলসদের মূল খেলোয়াড় এই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার।
রিয়াল মাদ্রিদ (২০১০-১৩) ছেড়ে ইংলিশ ফুটবলে পাড়ি জমান ওজিল। সেই থেকে আর্সেনালের মাঝমাঠ সামলাচ্ছেন জার্মান সেনসেশন।
সালাহ-পগবা-ওজিল ছাড়াও ইংলিশ লিগে মুসলিম তারকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চেলসির ফ্রেঞ্চ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এন’গোলো কান্তে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে লিচেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জয়ের ইতিহাসের অংশীদার তিনি। ইপিএলে কান্তের প্রথম বছরটা ছিল রীতিমতো স্বপ্নের মতো। এক সিজন কাটিয়েই নাম খেলান চেলসিতে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশ, মুসলিম ফুটবলারদের অনেকেই ধর্মের ব্যাপারে খুবই সচেতন। তারা একাগ্রচিত্তে ধর্ম পালন করার চেষ্টা করেন। ইসলাম ধর্মের বিধান মতে, মদ পান নিষিদ্ধ হওয়ায় মুসলিম ফুটবলার মদ জাতীয় কোনো পানীয় পান করেন না। এখন পর্যন্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় শ্যাম্পেনের বোতল। মুসলিম ফুটবলাররা তা গ্রহণ করেন না।
এমনকি বেশিরভাগ মুসলিম ফুটবলার সারা মাস রমজানের রোজা রাখেন। কিছু ফুটবলার তো অনুশীলন থেকে শুরু করে ম্যাচের দিনও রোজা রাখেন। ক্লাবগুলোও তাদের মুসলিম ফুটবলারদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছে।
-এটি