আবদুল্লাহ তামিম।।
‘কোটা কিনাবালু সিটি মসজিদ’ বোর্নিও দ্বীপে পূর্ব মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের রাজধানী কোটা কিনাবালুতে অবস্থিত দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। নীল এবং সোনালি রঙের গম্বুজ দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি ভ্রমণপিপাসুসহ অনেক দর্শনার্থীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
সিটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববীর আদলে। আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত এই মসজিদের আকর্ষণ অন্যান্য অনেক মসজিদ থেকে বেশি। ২০০০ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৮৯ সালে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ভিত্তি গড়া হয় ১৯৯২ সালে। ’৯৩ এবং ’৯৪ সালে তহবিলের অভাবের কারণে নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।
মালয়েশিয়ান মুদ্রা রিঙ্গিতের হিসেবে এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৩৪ মিলিয়ন রিঙ্গিত। মসজিদটির চারপাশ কৃত্রিম হ্রদ দিয়ে ঘেরা। দেখে মনে যেন হ্রদের মাঝে একখ- ভূমির মতো ভেসে আছে মসজিদটি। হ্রদের পানিতে চাইলে দর্শনার্থীরা নৌকায় চড়ে ঘুরতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন। দিনের বেলা এই পানিতে মসজিদের প্রতিবিম্ব পড়ে, রাতে চাঁদের আলোতে সেই দৃশ্য যেন আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।
সিটি মসজিদের অবস্থান দক্ষিণ চীন সাগরের লাইকাস বে উপকূলে পাসির রোডে। সাগরের পানির গর্জনকে পেছনে ফেলে কোটা কিনাবালু-ওয়ান বোর্নিও রোডে শাঁই শাঁই গাড়ি ছুটে চলে।
পথচারীরা হেঁটে যান গাছের সঙ্গে মিলিয়ে সবুজ রং করা হাঁটাপথ ধরে। কেউ যদি মসজিদের সৌন্দর্য কিছুটা দূর থেকে বসে উপভোগ করতে চান তবে এই সাগর পাড়ে বসে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তা দেখা যায়। অনেকটা অর্ধবৃত্তাকারে শুয়ে থাকা সাগরের ওই অংশটার নাম লিকাস বে। এ জায়গাটার নামও লিকাস। রাজধানী কোটা কিনাবালু থেকে এখানে আসতে মিনিট পনেরোর বেশি সময় লাগবে না।
এক সঙ্গে ১২ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এখানে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ৩টি মাদ্রাসার কার্যক্রম চলে। শুধু বাইরে থেকেই নয়, মসজিদের ভেতরেও খুব সুন্দর করে সাজানো-গোছানো সবকিছু। মূল কম্পাউন্ডে আছে তথ্যকেন্দ্র আর ফাস্টফুড কর্নার। মসজিদে প্রবেশমুখে আরও আছে বিনে পয়সায় পানি পানের অটো মেশিন, ব্যাংকের এটিএম বুথ। গোটা কয়েক মেসেজ চেয়ার আর বিপরীতে আতর সুরমার পসরা সাজিয়ে রাখা। আছে কোরআন শরিফ ও কোরআনদানিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক। নানা আকারের খেজুরের প্যাকেটও আছে একপাশে।
আছে মিসওয়াক, দাঁতের খিলান। মাঝে মাঝে গোলাকার স্তম্ভ ঘিরে গড়া বৃত্তাকার র্যাকে কোরআনসহ ধর্মীয় পুস্তক সাজিয়ে রাখা। মিহরাব আর মিম্বরে নকশাখচিত কারুকাজ। সামনের মূল অংশটার ওপরে একটাই গম্বুজ। তার নিচে সুদৃশ্য প্যানেল। পেছনের লাগোয়া ছাদের চার কোনায় চারটি মিনার। দূর থেকে মনে হয় গম্বুজটাকে ঘিরে রেখেছে মিনারগুলো।
ঘরের ভেতরে ঘর, তার ভেতরে ঘর স্টাইলে মসজিদের মূল ভবন গড়া। তাই একের পর এক দরজা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয় সামনে। প্রতি দরজার দু’পাশে এলসিডি মনিটর। তাতে খুৎবা আর বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মসজিদটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। মসজিদে প্রবেশের আগে পর্যটকদের গেটে রেজিস্টার খাতায় নাম এন্ট্রি করতে হয় এবং তাদের পরিহিত পোশাক নজরে রাখা হয়। পুরো শরীর পোশাকে আবৃত করলেই কেবল মসজিদে প্রবেশের অনুমতি মেলে। ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে মসজিদের সামনে কিছু বিড়ম্বনার সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
-এটি