আবদুল্লাহ তামিম চুন সুরকির গাঁথুনিতে ৫০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য। স্থাপত্যটির পাশে ও সামনে মাথা নিচু করে প্রবেশ করার জন্য প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট।
সুন্দর এ স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শেল্পিক রূপ। স্থাপত্যটির পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী। ৫’শ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান বাইন্ন্যা পুকুড় এলাকার দক্ষিণ পার্শ্বের একটু অ দূরে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন সাহেব বিবির মসজিদটি। ওই স্থানের মানুষের প্রাণের মসজিদ এটি। সারা চট্টগ্রামে বেশ পরিচিত এ মসজিদটি দেখতে অনেক মানুষ সেখানে আসে। কেননা দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসেও এখানে নামাজ আদায় করেন।
এটি একটি দর্শনীয় মসজিদও। ইসলাম ধর্মের অন্যতম কালের সাক্ষী এ মসজিদটি দেখার জন্য পর্যটকদেরও কমবেশি ভিড় হয়। সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও স্থানীয় প্রবীনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ৫’শ বছর পূর্বে মসজিদটি নির্মাণ করেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আনোয়ারা থানার শোলকাটা রাউজান গ্রামের জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী ও চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মলকা বানুর মাতা সাহেব বিবি।
স্থানীয়দের তথ্যমতে কবরস্থানসহ মসজিদটি ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত। বিভিন্ন কারু কাজ-সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদটির সামনে একটি ঈদগাহ ও পাশে কবরস্থান রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ। পাশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর। আগে দেয়াল চমৎকার কারুকার্য খচিত থাকলেও রূপগত পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে টাইলস।
মসজিদের উত্তর পাশে খনন করা হয়েছিল সাহেব বিবি দিঘী নামে এক বিশাল দিঘী। কেউ কেউ এটিকে শাহী পুকুরও বলে থাকেন। সত্তরোর্ধ বয়সের আলী আকবর চৌধুরী বলেন, আমরা ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি ৩/৪শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমার দাদাও তাঁর দাদার মুখে শুনেছিল এটি বিদেশী মিস্ত্রী দ্বারা শত শত বছর পূর্বে নির্মাণ করেছে।
এই মসজিদে নাকি তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে মোছাভাত (আঞ্চলিক শব্দ) অর্থাৎ কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পাঁয়ে হেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো নামাজ পড়ার জন্য।
জানা যায়, বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল সাহেব বিবির মসজিদ। তিনি আরো বলেন, সাহেব বিবির মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
গত ২ বছর আগে রূপগত পরিবর্তন করা হয়। ৫’শ বছর পূর্বে নির্মিত সাহেব বিবি মসজিদের সঠিক তথ্য না থাকলেও গত দেড় মাস আগে বাংলা একাডেমীর একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে এলাকার বৃদ্ধদের কাছ থেকে ও তাদের প্রজন্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গেছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে সাহেব বিবি মসজিদের পাশাপাশি ডাবুয়া আমির চৌধুরী জামে মসজিদটিও একই আমলে করা। তবে আমির চৌধুরী মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন নির্মাণ করায় সে পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।
-এটি