পলাশ রহমান
অতিথি লেখক
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের তড়াশ বেয়ে ঢাকার সিটি নির্বাচন এগিয়ে আসছে। ভাষা আন্দোলন মাসের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে জনমনে কিছু প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে, ভোটাররা ভোট দিতে পারবে তো? বিরোধী দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে তো?
পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হবে তো? ভোট কি রাতে হবে, নাকি দিনে? ভোট কেন্দ্রে গেলে কি বলে দেয়া হবে- বাড়ি চলে যান। আপনার ভোট হয়ে গেছে। নাকি ভোটের মেশিনেই সব কাজ সেরে ফেলা হবে?
এসব প্রশ্নের কোনো সরল উত্তর আমাদের কাছে নেই। আমরা শুধু ১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারি, ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের কাছে অন্যতম এক আবেগের মাস। চেতনার মাস। এ মাসের সাথে মিশে আছে আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। আমাদের অধিকার আদায়ের ইতিহাস।
এই মাসকে যদি সরকার পক্ষ বা নির্বাচন কমিশন কলঙ্কিত করে তা হবে ইতিহাসের সাথে সর্বোচ্চ বেইমানী। যার চরম মাশুলগুনতে হতে পারে সরকারকে। যেমন ১৫ ফেব্রুয়ারীর মাশুল এখনো গুনতে হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপিকে।
২০১১ সালের শেষে ঢাকা ভেঙ্গে দুই খন্ড করা হয়। এতে কী লাভ হয়েছে, ঢাকাবাসী কী সুফল পেয়েছে তা আজও অজানা। আমি আজ অবধি এর কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর পাইনি।
সাবেক দুই মেয়রের কার্যক্রমে ঢাকাবাসীর দূর্ভোগ অধিকমাত্রায় বেড়েছে। এক ডেঙ্গুতেই হাজারের উপরে মানুষ মরেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো বিকার দেখা যায়নি। প্রকান্তরে তারা একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়েছেন, মজা মশকরা করেছেন।
সারা বছর তারা ব্যাস্ত থেকেছেন নিজ দলের মিটিং সমাবেশে লোক সাপলাই দিতে, নগর ভবন কেন্দ্রীক টেন্ডার ও দোকানপাট দলীয়দের মধ্যে বিলিবন্টন করতে। আর পরিস্কার রাস্তায় ময়লা ফেলে ফের পরিস্কারের নামে ক্যামেরা ট্রাইল করে নিজেদের হিরো বানাতে।
নগরবাসীর প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। কারণ, নগরবাসীর রায় নিয়ে তারা মেয়রের চেয়ারে ছিলেন না। তারা কেউ রাজনীতির মানুষ ছিলেন না। তারা ছিলেন অন্য পেশা থেকে আসা ‘চান্স জনপ্রতিনিধি’। জনতার পার্লস তাদের অচেনা। সুতরাং ব্যাবসায়ী বা চান্স জনপ্রতিনিধি দিয়ে কখনো জনতার রাজনৈতিক কল্যাণ হয় না, হয়নি। নিশ্চিৎ করে বলা যায় আগামীতেও হবে না।
১ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে যদি ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তবে মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ বিএনপির মধ্যে এ কথা আলাদা করে বলার দরকার হয় না। কিন্তু এই দুই দলের অতীত ইতিহাস, তাদের প্রতিনিধিদের ইতিহাস যদি ভোটাররা এক ভাগও মনে রাখে তবে নির্ধারিত ‘রাশিফল’ উল্টে যাওয়া একেবারেরই অসম্ভব নয়।
দুই.
ঢাকা সিটির নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের পক্ষে একমাত্র হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণা ইতিমধ্যে সবার নজর কেড়েছে। তারা দুই মেয়রসহ মোট ৬০টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। এর বাইরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে একজন জমিয়ত নেতা প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।
ভোটের মাঠে ইসলামপন্থীদের অন্য কোনো প্রার্থী না থাকা এবং বড় দুই দলের প্রার্থীদের প্রতিশ্রুুতির কাছে বারবার প্রতারিত হওয়া জনগণ যদি নতুন কিছু ভাবে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। বরং সচেতন মহল এটাকেই স্বাভাবিক বলে ভাবতে শুরু করেছেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মতো ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থীরাও ভোটারদের নজর কাড়তে কাড়ি কাড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যা বাস্তবায়ন করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা বিষয় খুব ভালো লেগেছে, হাতপাখার দুই প্রার্থী বলেছেন, নগর উন্নয়ন বা জনকল্যাণের জন্য বরাদ্দকৃত সব টাকা তারা জনকল্যাণে ব্যায় করবেন। অন্যদের মতো ৭০ ভাগ টাকা বেহাত হতে দেবেন না।
তাদের এই কথায় যদি বিশ্বাস রাখা যায়, তারা যদি ক্ষমতার চেয়ারে গিয়ে কথা কাজে মিল রাখতে পারেন তবে সত্যিই ঢাকার জনদূর্ভোগ কমাতে খুব বেশি সময় দরকার হবে না। সুতরাং বারবার প্রতারিত মানুষের সামনে ভেবে দেখার আরেকটি সুযোগ এসেছে।
তিন.
জনসন্দেহ ভোট কেমন হবে? গায়েবী ভোট হলে বিরোধী প্রার্থীরা কী করবেন? বিশেষ করে ইসলামপন্থী প্রার্থীরা বা তাদের দল কী সিদ্ধান্ত নেবে, সে প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখা দরকার।
আমি মনে করি, অগোছালোভাবে ভোটের মাঠ ছেড়ে না দিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করা উচিৎ। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকা উচিৎ। সরকার পক্ষ যতো উস্কানি দিক, যতো বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করুক, ভোটর মাঠ ছেড়ে যাওয়া সঠিক হবে না।
জনগণকে দেখাতে হবে তাদের ভোটাধিকার রক্ষা করতে ইসলামপন্থী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ভোটের অনিয়ম বা বাধা বিপত্তির কাছে মাথানত করে তারা রণভঙ্গ করেননি। এ ভাবেই জনতার আস্থায় আসতে হবে ইসলামপন্থী নেতাদের।
ইসলামি আন্দোলনে নেতা সৈয়দ ফয়জুল করীম বরিশাল সিটি নির্বাচনের সময় যে ভাবে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন ঢাকায়ও তার উপস্থিতি খুব দরকার ছিল। রাজধানীতে ইসলামপন্থীদের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি জন্য তার মতো নেতার সার্বক্ষনিক উপস্থিতি অনেকেই অনুভব করেছেন। অন্তত বাকী সময়টুকু তার অন্যসব কর্মসূচি স্থগিত করে ঢাকায় থাকার গুরুত্ব অনেক বেশি।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, সমালোচক
[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। আওয়ার ইসলাম-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য আওয়ার ইসলাম কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।]
আরএম/