আওয়ার ইসলাম: জেনিফার গ্রাউত একজন মার্কিন সংগীতশিল্পী। ২০১৩ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ২০১৫ সালে, ইউটিউবে কোরআন তিলাওয়াতের একটি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে। ডিসেম্বর ২০১৯ সালে নওমুসলিম তরুণ এই সংগীতশিল্পী আল-জাজিরা আরবির সঙ্গে তার ইসলাম গ্রহণ, পারিবারিক জীবন ও নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকার বাংলায় ভাষান্তর করেছেন বেলায়েত হুসাইন।
প্রশ্ন : প্রথমেই আপনার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাই, আপনি ২০১৩ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিসের প্রভাবে আপনি ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন?
উত্তর : আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে মুসলমানের জীবনপ্রণালী, যা একটি মুসলিম দেশে সফর করার সময় দেখেছিলাম। ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করার পর আমি মরক্কো সফরে যাই। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে সেখানে গিয়েছিলাম। পুরো গ্রীষ্মে মরক্কোয় ছিলাম। তখন যে বিষয়টি আমাকে প্রথম আকর্ষণ করে তা হলো আজানের ধ্বনি। যেখানেই যেতাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান শুনতে পেতাম। আমি জানতে পারলাম, আজানের মাধ্যমে সবাইকে নামাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি আমাকে পুলকিত করে। সত্যি বলতে আজানের সুরই আমাকে প্রথম ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে।
তা ছাড়া অন্যের প্রতি মরক্কোর মানুষের সম্মানবোধও আমাকে স্পর্শ করে। আমি অনুভব করি, এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মুসলিমদের রীতি-নীতির সম্পর্কে জানার প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মাল আমার ভেতর। ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে পড়তে শুরু করলাম। কিছু পড়ার পর ইসলামের সৌন্দর্য আমাকে বিস্মিত করল। ধীরে ধীরে ইসলামের দিকে ঝুঁকে গেলাম এবং একপর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম।
প্রশ্ন : জেনিফার! আপনি ২০১৩ সালে আরবের প্রসিদ্ধ সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘Arabs Got Talent’-এ সেরা শিল্পী মনোনীত হয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ করেই অন্তত তিন বছর সব রকম সংগীত থেকে আড়ালে চলে গেলেন। এই আড়ালে থাকার কোনো কারণ ছিল?
উত্তর : যদি আমার শব্দ চয়ন ঠিক হয়, তাহলে এটাকে আমি আধ্যাত্মিক সফর বলব। যখনই আপনার কোলে নতুন অতিথির আগমন হবে, স্বাভাবিকই আপনার জীবনে তখন বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তো সব কিছু গোছগাছ করার জন্য আমার একটি বিরতির প্রয়োজনও ছিল। আর এই আড়ালে থাকার আরেকটি কারণ, যেন অর্থবহ একটি নতুন ও সুন্দর জীবনে প্রবেশ করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ! আমার বিশ্বাস, আমি লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার কোরআন তিলাওয়াত শুনে ভক্তরা আপনার কণ্ঠকে ঐশীস্বর আখ্যা দেন। কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আপনি কোন শায়েখের তিলাওয়াত বেশি অনুসরণ করেন এবং কার তিলাওয়াত বেশি শোনা হয়?
উত্তর : অনুসরণের বিষয়ে বলব, হয়তো যে কারো তিলাওয়াতের সঙ্গে আমার তিলাওয়াত মিলে যেতে পারে, তবে আক্ষরিক অর্থে আমার তিলাওয়াতের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আমি বলব, এটা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। আমি মিসরের বিখ্যাত কারি শায়খ সিদ্দিক আল মিনশাবির তিলাওয়াত খুব বেশি শুনি। সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী তিলাওয়াতে তিনি অদ্বিতীয়। মিনশাবির কণ্ঠে সুরা ইউসুফ ও সুরা তাকবির শুনতে আমার অসম্ভব ভালো লাগে।
প্রশ্ন : আপনি একাধিক দেশ সফর করেছেন। সবচেয়ে পছন্দের জায়গা কোনটি? যেখানে বারবার যেতে মন চায়?
উত্তর : মক্কা-মদিনার চেয়ে আমার কাছে বেশি প্রিয় আর কোনো জায়গা নেই। মক্কা-মুকাররমায় পবিত্র কাবা শরিফ জিয়ারত করা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।
প্রশ্ন : মরক্কো এসে সাঈদ নামের স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন এবং আপনাদের কোল আলোকিত করে ‘কমার’ (চাঁদ) নামের এক কন্যাসন্তানের জন্ম হওয়ার খবর শুনেছি—ব্যাপারটি কি এমনই?
উত্তর : হ্যাঁ, হ্যাঁ...।
প্রশ্ন : ‘কমার’ নামটি কি আপনার পছন্দ?
উত্তর : অবশ্যই আমার। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আগে থেকেই এই সুন্দর নামটি আমি মেয়ের জন্য পছন্দ করে রেখেছি। আমার মেয়ের মুখ আমার কাছে কমারের (চাঁদ) মতোই উজ্জ্বল ও সুন্দর। যখন আমার মেয়েকে গর্ভে ধারণ করি, তখনই সিদ্ধান্ত নিই, যদি আমার মেয়ে হয়, তবে তার নাম ‘কমার’ রাখব।
জেনিফারের তেলাওয়াত
https://www.facebook.com/jennigrout/videos/2471635726411950/
আরএম/