ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা। বিশ্ব তাবলিগের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব তিনি ‘ঈমানকে দেয়া হয়েছে ঈমানের মেহনতের জন্য’ শীর্ষক আম বয়ান পেশ করেন। তার বয়ানের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
মানুষের কাজের গুরুত্বপূর্ণ দিক দুইটি। একটি হলো- নিয়ত। হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ যে নিয়তে কাজ করে সে নিয়ত অনুযায়ী তার কাজের প্রতিদান পায়৷ এ জন্য আমরা নিয়তের সাথে আমলের জন্য দ্বীনি কথা শুনি।
অন্যটি হলো- মেহনত। মেহনতের অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার কাজের প্রতিদান দিয়ে থাকেন৷ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার নিয়ত ও মেহনতের দ্বারাই সবকিছু দিয়ে থাকেন৷ নিয়ত করি যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো, ততদিন আমরা দ্বীনের মেহনতের সাথে থাকবো।
একবার এক অপরিচিত সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সফরসঙ্গী হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (ওই অপরচিত সাহাবিকে) অনুমতি দিলেন।
যখন তিনি (রাসুলুল্লাহ) গন্তব্যে পৌঁছলেন এবং কাজ সামনে আসলো তখন তিনি প্রত্যেককে তাদের কাজ বণ্টন করে দিলেন। অপরিচিত সেই সাহাবিকে বাহনজন্তু দেখাভালের দায়িত্ব দিলেন৷ সে (অপরিচিত সাহাবি) বাহনের দায়িত্ব পেয়ে তার কাজে নিয়োজিত হয়ে গেলো।
এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাজে গিয়েছিলেন সে কাজ পূর্ণ হওয়ার পর (গণিমতের) অনেক মালামাল হাসিল হলো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম সে মাল সবাইকে বণ্টন করে দিলেন এবং বাহনজন্তু দেখভালকারীকে (সাহাবিকে) একটা অংশ দিলেন৷
সে উপস্থিত না থাকায় তার অংশ অন্য এক সাহাবির কাছে আমানত হিসেবে রাখলেন৷ পরবর্তীতে যখন তাকে (অপরিচিত সাহাবিকে) তার মাল বুঝিয়ে দেয়া হলো, তখন সে বললো- আমি এই মালের জন্য আসিনি। এই মাল আমার প্রয়োজন নেই৷
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কেন আসছো? তিনি বললেন, এখানে এসেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য। দুশমনের পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে টার্গেট করে তীর আসবে আর সে তীর আমার গলায় বিঁধবে। তিনি (অপরিচিত সাহাবি) হাত দিয়ে (গলার) সে জায়গা দেখালেন৷ কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো হুবহু তেমনি ঘটলো।
পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষয়টি জানানো হলো। তিনি বললেন, ‘সে কি ওই ব্যক্তি; যে সফরসঙ্গী হওয়ার অনুমতি চেয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জুব্বা দিয়ে ওই সাহাবির কাফন দিয়ে দাফন করলেন এবংতাকে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন এবং দোয়া করলেন- ‘হে আল্লাহ আমি তার নিয়ত ও মেহনতের স্বাক্ষী দিচ্ছি।’
তার (ওই অপরিচিত সাহাবির) নিয়ত ও মেহনত সঠিক ছিলো৷ এজাতীয় ঘটনায় শিক্ষণীয় বহু বিষয় রয়েছে-জামাতের সাথে বের হলে পরামর্শ করে প্রত্যেকের কাজ ভাগ করে দেয়া, ব্যক্তির নিয়ত অনুযায়ী সে তার ফলাফল পাবে।
আল্লাহ তাআলা সারা দুনিয়া এবং দুনিয়ার অনান্য সব জিনিস বনি আদমের জন্য সৃষ্টি করেছেন৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আখেরাতের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং দুনিয়ার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন৷
আখেরাতের সুসংবাদ হলো- দুনিয়া তোমাদের জন্য সৃষ্টি এবং দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি তোমাদের কাজ করতে বাধ্য। তোমাদের জিম্মাদারি হলো- আখেরাতকে সুন্দর করার জন্যই তোমাদের দুনিয়ার জীবন দেয়া হয়েছে। তাই দুনিয়াকে এই পরিমাণ মুহব্বত করবে, যার দ্বারা তোমাদের মালের হেফাজত হয়। দুনিয়ার প্রতি এমন মুহব্বত যেন না হয় যা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়।
দুনিয়ায় থেকে আখেরাতের সফলতা লাভের জন্য আল্লাহ আমাদের দুটো জিনিস দিয়েছেন- ঈমান ও
ইলম। তাই ঈমানের তাকাযা হলো আল্লাহকে মানা৷ ইলমের তাকাযা হলো সমস্ত আমল নবির তরিকা অনুযায়ী করা৷
ঈমান আনার দ্বারা বান্দার উপর হক আরোপিত হবে। আর ইলমের দ্বারা হক আদায়ের তরিকা জানা যাবে৷
ঈমানহারা লোকদের দুনিয়া হবে ধোঁকার জায়গা। আখেরাত হবে পেরেশানির জায়গা। যতক্ষণ দুনিয়ায় ঈমান থাকবে ততক্ষণ দুনিয়া টিকে থাকবে। ঈমান থাকবে না তো দুনিয়া থাকবে না৷
আল্লাহ দুনিয়াকে রেখেছেন ঈমান দ্বারা এবং আখেরাতের সফলতা এই ঈমান দ্বারাই হবে৷ তিনি ঈমানকে ঈমানের মেহনতের জন্য দিয়েছেন।
ঈমানের কালিমা দ্বারা আমাদের জিম্মাদারি বেড়ে গেছে- ইবাদতের জিম্মাদারি, দাওয়াতের জিম্মাদারি। যখনি আমি আল্লাহর হুকুম ও নবির তরিকা মেনে চলবো তখন আল্লাহ আমার উপর রাজি হয়ে যাবেন৷ আল্লাহ রাজি হয়ে গেলে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে৷ পেরেশানি দূর হয়ে যাবে। তাই আমরা দ্বীনের জন্য মেহনত করবো৷
আরএম/