নুরুল্লাহ আশরাফী
দেওবন্দ থেকে
দারুল উলুমের মুহাদ্দিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদনাী ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেন, তোমরা দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করতে এসেছো। এখানে প্রায় ৪০-৫০ হাজার ছাত্র পড়াশোনা করছে। দেওবন্দের আওতাধীন হাজারো মাদরাসা রয়েছে ভারতে। তোমাদের আন্দোলনের কারণে যেন দেওবন্দ মাদরাসা বরন্ধ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবা। ’
গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল হাদিসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মজলিসে তিনি এ আহ্বান জানান।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মাওলানা মাদানী আরও বলেন, ‘ প্রিয় সন্তানেরা! সরকারের মুসলিমবিরোধী আইনের কারণে আমাদের অন্তরেও রক্ষক্ষরণ হচ্ছে। বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছি। তবুও সকালে তোমাদের দরস শেষ করে দিল্লিতে ছুটে যাচ্ছি আবার ফিরে এসে পরদিন তোমাদের ক্লাস করাচ্ছি …কীসের জন্য? তোমাদের নিরপত্তার জন্য, দেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্য। তোমাদের মুহতামিম সাহেব ও শিক্ষকরা সারাদিন ছুটোছুটি করছেন, কীসের জন্য…?’
‘সামান্য কয়েকজনের আন্দোলনের ফলে যেন দেওবন্দ মাদরাসা বন্ধ না হয়ে যায়। আন্দোলন যদি করতেই হয় তবে দেওবন্দ ছেড়ে জমিয়তে যোগ দাও। মাদরাসা বন্ধ হলে আল্লামা কসেম নানুতুবী, হুসাইন আহমদ মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী রহ .কে কী জবাব দেবে তোমরা…?’ যোগ করেন আল্লামা মাদানী।
এ সময় জমিয়ত প্রধান দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দশনা প্রদান করেন। মাদরাসার ফটক থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানান। সবােইকে নিয়ে সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ নেন এবং ভারত ও দেশটির মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর দরবারের ফরিয়াদ করেন। মাওলানা আরশাদ মাদানী ও হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের রোনাজরিতে রুহানি মজলিসটি সমাপ্ত হয়।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে কেন্দ্র করে জামিয়া ও আলীগড়ের কোলাহল শুরু হওয়ার পর থেকেই পুরো জেলা ও বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনে নেমে আসে হাজার হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। জামিয়ার নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলা ও নির্বিচারে তাদের আটক করা হয়।
এরই প্রতিবাদে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতের ঐতিহ্যবাহি দীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দেও শুরু হয় বিক্ষোভ। দফায় দফায় পুলিশের সাথে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষকদের আহ্বানে বিক্ষোভ থেকে ফিরে যায় দারুল উলুমের ছাত্ররা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে মোদি সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা ছুটে আসেন দেওবন্দে। শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি এক বৈঠকে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ না দিতে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ১৫ দিনের জন্য মাদরাসা বন্ধের আবেদন করেন। কিন্তু দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আরএম/