হাওলাদার জহিরুল ইসলাম।।
দারুল উলুম দেওবন্দের দরস মানেই ভিন্ন আমেজ। শিক্ষকদের পড়ানোর আকর্ষণীয় পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মনযোগ ধরে রাখে পুরো দরসজুড়ে। কিতাবি বিদ্যার সাথে সাথে কতো বিদ্যা যে পাওয়া যায় এসব দরসে তার হিসেব করা কঠিন। প্রতিটি কথাই যেন লিখে রাখার মতো আকাবির আসলাফদের। তাকওয়া ত্বহারাত আর বিস্মকর ত্যাগের ঘটনা শুনে শুনে চোখের পাতা ভিজে আসে শিক্ষার্থীদের।
মাদারে ইলমি দারুল উলুম দেওবন্দে যাদের দরস সর্বাধিক জনপ্রিয় তাদের শীর্ষে আল্লামা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার দরস যে কখন শেষ হয়ে যায় তা নিয়ে ভাবনায় পড়তে হয় মাঝে মাঝে। মনে হয়, যদি শেষ না হয়ে আরো কিছুক্ষণ তিনি পড়াতেন!
আল্লামা পালনপুরির প্রতিটি কথা যেন কষ্টিপাথরে যাচাই করা। শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে দাগ কাটে নিজের অজান্তেই। দরসের ফাঁকে ফাঁকে জীবন গঠনমূলক নানা ঘটনা ও গল্প শোনান। আকাবিরে দেওবন্দের এমন এমন ঘটনা শোনান যা সাধারণত ইতোপূর্বে শোনা যায় নি।
২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটি সম্ভবত বুধবার ছিল। আমি তখন দেওবন্দে দাওরায়ে হাদিস পড়ছি। আমাদের দরসে শায়খুল ইসলাম হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.এর চমৎকার শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী।
বুখারী শরীফের সবক যখন- ‘باب قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا} وَمُحَاسَبَةِ الْمُصَدِّقِينَ مَعَ الإِمَامِ’ এখানে পৌঁছে, তখন তিনি বলেন, “হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. একই সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররসীন ও শাইখুল হাদিস ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পুরা ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশ ও মুসলমানদের ভবিষ্যত বিনির্মাণে কাজ করতেন দেশময়।
তিনি জানালেন এক আশ্চর্য তথ্য, “হজরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.কে কোন পরিচিত বন্ধু-বান্ধব বা মুরীদ, কোন মুহিব্বীন-মুতাআল্লক্বীন কোন হাদিয়া দিলে গ্রহণ করতেন আর অপরিচিত কেউ হাদিয়া দিলে মাদরাসার হিসাব বিভাগে নিয়ে জমা দিতেন।
বলতেন, ‘আমি হুসাইন আহমাদকে কয়জনে আমার ব্যক্তি হিসেবে চিনে? আমাকে তো সবাই দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে চিনে৷তাই অপরিচিত ব্যাক্তিদের হাদিয়া মাদরাসায় জমা দেয়াই কর্তব্য বলে মনে করি।”
আকাবিরদের এমন বিস্ময়কর ত্যাগ আর পরহেযগারিতা যেন আমাদেরকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করে। বার বার ভাবিয়ে তোলে আমরা তাদের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পাবো তো? আল্লাহ তাদের কবরকে শীতল করুন। তাদের সাথে আমাদেরকেও কবুল করুন। আমিন।
আরএম/